ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সেবা ব্যাহত

বরিশালের ৯ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

বরিশালের ৯ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সঙ্কট

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ জেলার নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন থেকে একশত চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় প্রতিনিয়ত গ্রামগঞ্জের মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বিভিন্ন উপজেলা থেকে বরিশাল নগরীতে এসেও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২২৮টি। এরমধ্যে ৯৮টি পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি রয়েছে। সে হিসেবে ১৩০ চিকিৎসক কর্মরত থাকার কথা থাকলেও আরও সাতজন চিকিৎসক ডেপুটেশনে রয়েছেন। ফলে কর্মস্থলে অনুপস্থিত শতাধিক চিকিৎসক। বাকি ১২৩জন চিকিৎসকের সকল কাজ চালিয়ে নেয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে তাদেরও কম দেখা যায়। অনেকেই নগরীতে কিংবা উপজেলা পর্যায়ের ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নার্সিং হোম কিংবা ক্লিনিকে চেম্বার খুলে প্রাইভেট প্রাকটিসে ব্যস্ত থাকেন। ফলে রোগীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে গিয়ে অনেক সময়ই চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। জানা গেছে, নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারের নয়টি পদের মধ্যে চারটি পদ দীর্ঘদিন থেকে শূন্য। জুনিয়র কনসালট্যান্টের ৪৫ পদের ৩০টি শূন্য, মেডিক্যাল অফিসারের ১২০টি পদের ৩৯টি শূন্য, ডেন্টাল সার্জনের ১০টি পদের পাঁচটি শূন্য, মেডিক্যাল অফিসারের (ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক) ১৮টি পদের আটটি শূন্য, প্যাথলজিস্টের চারটি পদের একটি শূন্য, এনেসথেসিস্টের ১২টি পদের মধ্যে ১১টিই শূন্য। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক মেডিক্যাল অফিসার জানান, উপজেলা হাসপাতালে এনেসথেসিস্ট সংকটের কারণে কোন রোগীর অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে না। সার্জন থাকলেও এনেসথেসিস্ট না থাকায় অপারেশনের জন্য রোগীদের দুর্গম গ্রামগঞ্জ থেকে ছুটতে হচ্ছে বরিশাল নগরীর হাসপাতাল কিংবা প্রাইভেট ক্লিনিকে। চিকিৎসক সংকটের সত্যতা স্বীকার করে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ এএফএম শফিউদ্দিন বলেন, বিগত সময়ের চেয়ে বরিশালে চিকিৎসকদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এখনও যেসব পদ খালি রয়েছে সেগুলো পূরণ করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। আর চিকিৎসকদের এসব অনিময় ঠেকানোর জন্য আমরা প্রায়ই উপজেলা পর্যায়ে ঝটিকা সফর করছি। কেউ অনিয়মের সাথে জড়িত হিসেবে ধরা পড়লে আর রেহাই পাচ্ছে না। নাগরপুর ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল থেকে জানান, নাগরপুর উপজেলার প্রায় তিন লাখ জনসাধারণের চিকিৎসা সেবার একমাত্র সরকারী প্রতিষ্ঠান ৫০শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি জনগণের কোন কাজেই আসছে না। ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটির প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও বাড়েনি লোকবল ও চিকিৎসা সেবার মান। শুধুমাত্র খাবার ছাড়া ৩১ শয্যার লোকবল নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে উপজেলার ৫০ শয্যার এ চিকিৎসা কেন্দ্রের কার্যক্রম। তার ওপর ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ৩ জন কনসালটেন্ট মেডিসিন, এনেসথেশিয়া ও সার্জারি দীর্ঘদিন ধরে খালি রয়েছে। শুধু একজন মহিলা কনসালটেন্ট (গাইনি) আছেন। তাও আবার সপ্তাহে ২ দিন অফিস করেন। জানা যায়, গত ২০১৪ সালের ২৪ জুলাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ৫০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি নতুন এ্যাম্বুলেন্স, একটি আলট্রাসোনোগ্রাম মেশিন ও নগদ ২০ লক্ষ টাকা অনুদান দেয়ার ঘোষণা দেন। এরপর দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর পার হলেও মন্ত্রীর ঘোষণার এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে জরাজীর্ণ ও লক্কর ঝক্কর এ্যাম্বুলেন্সই এ হাসপাতালের রোগী পরিবহনের একমাত্র ভরসা। সূত্রে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট কর্মকর্তাসহ ৫ জন চিকিৎসক এবং ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৪ জনসহ মোট ৯ জন চিকিৎসক রয়েছে। এর মধ্যে ৫ জনই টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেপুটেশনে আছেন। নাগরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. রোকনুজ্জামান খান জানান, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালে শুধু খাবার বরাদ্দ আছে। লোকবল ও যন্ত্রপাতিসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা এখনও চালু হয়নি।
×