ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষুব্ধ ইসরাইলের দম্ভোক্তি

আরও ইহুদি বসতি গড়ব

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬

আরও ইহুদি বসতি গড়ব

ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস মঙ্গলবার আশা ব্যক্ত করেছেন যে, ফ্রান্সে অনুষ্ঠেয় আগামী মধ্যপ্রাচ্য সম্মেলনে অধিকৃত এলাকায় বসতি স্থাপন বন্ধ করার সময়সূচী বেঁধে দেয়া হবে। এদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ জেরুজালেমের কোন কোন অংশে ইহুদি বসতি নির্মাণের নিন্দা করে সম্প্রতি প্রস্তাব পাস করা সত্ত্বেও ইসরাইল ফিলিস্তিনীদের দাবি করা সেই ভূখণ্ডে হাজার হাজার নতুন বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার। এর মাত্র দিন কয়েক আগে অতীত প্রথা ভেঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইলী বসতি নির্মাণকে আন্তর্জাতিক আইনের ‘সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ হিসেবে নিন্দা করতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জন্য সুযোগ করে দেয়। জাতিসংঘের ভোটাভুটির পর মাহমুদ আব্বাস মঙ্গলবার সকলেই তার ওই প্রথম প্রকাশ্য মন্তব্য করলেন। আব্বাস তার ফাতাহ পার্টির এক সভায় বলেন, ওই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের যে কোন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবে। এটি আগামী মাসে প্যারিসে অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনের পথ সুগম করবে। এ সম্মেলনে ইসরাইলী দখলদারির অবসান ঘটানোর এক উপায় ও সময়সীমা স্থির করা হবে। প্রস্তাবে প্রমাণ হয় যে, বিশ্ব পূর্ব জেরুজালেমসহ আমাদের অধিকৃত ভূখ-ে বসতি নির্মাণকে অবৈধ বলে প্রত্যাখ্যান করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দায়িত্ব ছাড়ার দিন কয়েক আগে ১৫ জানুয়ারি ফ্রান্স এক মধ্যপ্রাচ্য সম্মেলনের আয়োজন করবে বলে প্রত্যাশা করা হয়। সেই সম্মেলনে বেশ কয়েকটি দেশ ইসরাইল ও ফিলিস্তিনীদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার এক আন্তর্জাতিক কাঠামো অনুমোদন করতে পারে। ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন এরূপ তৎপরতার তীব্র বিরোধিতা করেন। এটি আলোচনার প্রক্রিয়াকে বিনষ্ট করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। নেতানিয়াহু কোন পূর্বশর্ত ছাড়াই সরাসরি আলোচনায় মিলিত হতে আব্বাসের প্রতি বারবার আহ্বান জানান। ইসরাইল প্রথমে বসতি নির্মাণ বন্ধ না করা পর্যন্ত আব্বাস এতে অস্বীকৃতি জানান। বসতি স্থাপনের নিন্দা করে জাতিসংঘে প্রস্তাব গৃহীত হওয়া সত্ত্বেও জেরুজালেম মিউনিসিপ্যালিটি চলতি সপ্তাহে শহরের পূর্ব সেক্টরে হাজার হাজার নতুন হাউজিং ইউনিট অনুমোদন করতে প্রস্তুত। নেতানিয়াহুপন্থী দৈনিক ইসরাইল হ্যায়ম জানায়, শহরের ওই অংশে নতুন নির্মাণ কাজ অনুমোদন করতে জেরুজালেম ডিস্ট্রিক্ট জোনিং কমিটির বুধবার বৈঠকে মিলিত হওয়ার কথা। জেরুজালেমের ডেপুটি মেয়র মেইর তুরগেমান চলতি সপ্তাহে ওই পত্রিকাকে বলেন, জাতিসংঘের ভোটাভুটিতে বা জেরুজালেমে আমাদের কী করা উচিত তা নির্দেশের চেষ্টা করে এমন অন্যকারও আচরণে আমরা অবিচল রয়েছি। তিনি বলেন, ইসরাইল সরকার ও নতুন মার্কিন প্রশাসন আমাদের সমর্থন করবে বলে আমি আশা করি, যাতে আমরা আট বছরের ওবামা প্রশাসনের আমলে নির্মাণ কাজ না হওয়া জনিত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারি। তিনি জোনিং কমিটির প্রধান। ফিলিস্তিনীরা পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীর তাদের ভবিষ্যত রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে দাবি করে থাকে। পূর্ব জেরুজালেমে ইহুদী মুসলিম ও খ্রীস্টানদের পবিত্র স্থানগুলো অবস্থিত। ইসরাইল বলছে, শান্তি আলোচনায় বসতি স্থাপন ও নিরাপত্তার মতো অন্যান্য মূল ইস্যু নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছানো উচিত। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে নেতানিয়াহু ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন। প্রস্তাবটি ১৪-০ ভোটে পাস হয় এবং আমেরিকা ভোট দানে বিরত থাকে। এর প্রতিবাদে ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রসহ পরিষদের সদস্য দেশগুলো রাষ্ট্রদূতদের থেকে ডেকে পাঠায়। নেতানিয়াহু নিউজিল্যান্ড ও সেনেগাল থেকে তার রাষ্ট্রদূতদের পরামর্শের তলব করছেন এবং সেনেগালের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জানুয়ারিতে পরিকল্পিত ইসরাইল সফর বাতিল করেছেন। তিনি আফ্রিকান দেশটিতে ইসরাইলী সাহায্য দান স্থগিত রেখেছেন। হোয়াইট হাউসকে দায়ী করল ইসরাইল ॥ অধিকৃত ভূখ-ে ইসরাইলী বসতি স্থাপনকে অবৈধ ঘোষণা করে গত সপ্তাহে জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাব প্রদানে ওয়াশিংটন সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেছিল। ক্ষুব্ধ ইসরাইলী সরকার আরব উৎস থেকে এ মর্মে অকাট্য প্রমাণ পেয়েছে বলে মঙ্গলবার দাবি করে। এর ফলে ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে ইসরাইলের প্রকাশ্য বিরোধ আরও চড়ে গেল। খবর ওয়াশিংটন পোস্টের। পররাষ্ট্র দফতরের অস্বীকার করা এ অভিযোগ শুক্রবারের ভোটের পর ইসরাইল ও বিদায়ী প্রশাসনের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও বিষিয়ে দিয়েছে। এতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শেষ সপ্তাহগুলো হোয়াইট হাউস ইহুদী বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে আরও ব্যবস্থা নিতে পারে কিনা সেই প্রশ্ন জাগিয়ে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্র আগামী মাসে ফ্রান্সে এক আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনে যোগ দেবে বলে মনে হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির বুধবার এক চূড়ান্ত নীতিগত ভাষণ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ফিলিস্তিনীরা এ অনুকূল পরিস্থিতিকে কাজে লাগানোর আশা করছে। ইসরাইলের জাতীয়তাবাদী সরকার আগামী ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে দ্বিগুণ সমর্থন নিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। ইহুদী বসতি স্থাপনের বিরোধিতা করলেও যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত এর মিত্র ইসরাইলকে নিন্দার হাত থেকে রক্ষা করতে ভেটো ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়েছিল।
×