ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আইডিইবির সুপারিশ পেশ

কৃষি জমি সুরক্ষায় আইন হচ্ছে ॥ গণপূর্তমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬

কৃষি জমি সুরক্ষায় আইন হচ্ছে ॥ গণপূর্তমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কৃষি জমি সুরক্ষায় আইন হচ্ছে। এখনই কৃষিজমি রক্ষার ওপর গুরুত্ব না দিলে ভবিষ্যতে দেশ খাদ্য সঙ্কটে পড়বে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আবাসন চাহিদাও বাড়ছে। বাড়তি এ চাহিদা পূরণ করতে প্রতিনিয়তই কৃষি জমির ওপর চাপ বাড়ছে। এ ছাড়াও শিল্পায়ন ও নগরায়নের কারণেও কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কৃাষ জমি রক্ষা করা না গেলে ভবিষ্যতে দেশ খাদ্য সঙ্কটে পড়বে। মঙ্গলবার গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশররফ হোসেন মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে ‘খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষিজমি রক্ষাকল্পে পরিকল্পিত গ্রাম-নগরায়ন ও গৃহায়ন’ শীর্ষক জাতীয়ভিত্তিক সুপারিশ উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অব বাংলাদেশ (আইডিইবি) এ সুপারিশ প্রণয়ন করেছে। গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, খাদ্য চাহিদার মতো বাসস্থানও মানুষের মৌলিক চাহিদা। এ চাহিদা পূরণ করতে হলে পরিকল্পিত আবাসন গড়ে তোলার বিকল্প নেই। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিত আবাসন গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। কৃষিজমি সুরক্ষা করতে পরিকল্পিত গ্রাম গড়ে তোলা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রেও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। পরিবারিক জমিতে পরিকল্পিত আবাসিক ভবন নির্মাণ করে নির্মাণ ব্যয় দীর্ঘমেয়দী কিস্তিতে পরিশোধের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আইডিইবি’র সুপারিশমালায় অনুর্বর জমিতে শিল্পকারখানা স্থাপন, অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা, কৃষিজমির জোনিংম্যাপ প্রস্তুত করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। সুপারিশমালা প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে আইডিইবি’র সভাপতি জানান। জনসংখ্যা বাড়ায় পরিকল্পিত আবাসনের উপর জোর দিয়ে মোশাররফ বলেন, কোন বাড়িতে এখন যে আছে সে হয়ত আমেরিকা চলে গেছে বা কেউ দুবাই গিয়ে আয় করে এনে দেশে অন্য জায়গায় বাড়ি বানাচ্ছে। সে ধানী জমি নষ্ট করে বাড়ি করছে। ‘দিজ ইজ এ ক্রাইম’, আমি বলব। এটা খাদ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, সংসদে আইন করে ধানী জমি, কৃষি জমি রক্ষায় আইন পাস করতে হবে। কৃষি জমিতে বাড়ি করতে হলে অবশ্যই ইউএনও বা সংশ্লিষ্ট অন্য কারও কাছ থেকে অনুমতি নেয়ার নিয়ম করার তাগিদ দেন মোশাররফ। এভাবে যদি ধানী জমি নষ্ট হয় তাহলে আমরা খাদ্যে যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি তা আর ধরে রাখা সম্ভব হবে না। সরকারের উচিত হবে ভবিষ্যতে যেন ধানী জমিগুলো নষ্ট না করা হয় সে দিকে নজর দেয়া। ধানী জমিতে কোন ইটের ভাটা যেন না হয়। মানুষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে কৃষি জমি কমে যাচ্ছে নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই তার বিবরণ তুলে ধরেন চট্টগ্রামে সাগরপাড়ের উপজেলা মিরসরাইয়ের বাসিন্দা মোশাররফ। সত্তর সালে নির্বাচনের সময় শুধু ধান ক্ষেত দেখেছি, বিল দেখেছি, ঘরবাড়ি কম দেখছি, মানুষ এত ছিল না। মানুষ অনেক বেড়েছে, কৃষি জমি কমে গেছে। কৃষি জমি একেবারে সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। শুধু ইট দিয়ে বাড়ি নির্মাণ না করে আধুনিক প্রযুক্তিগুলো ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, নির্মাণের সামগ্রী শুধু ইট দিয়ে হয় এটা ঠিক না। নদীতে অনেক বালু আছে। ড্রেজিং করে ক্লে (কাদা) নিয়ে ইট তৈরি করতে পারব। সহজে আমরা উপরিভাগের মাটি নিয়ে ইট তৈরি করছি, এটা একটা ক্রাইম। ইউএনওদের এটা দেখা উচিত এবং সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করে দেয়া উচিত। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে গ্রামের দিকেও মনোযোগী হতে পরামর্শ দেন মন্ত্রী। পরিকল্পিত গ্রাম গড়ায় চীনের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সব বাড়ি তুলে দিয়ে সবাইকে এক জায়গায় নিয়ে এসেছে, সেখানে এ্যাপার্টমেন্ট দিয়েছে, বিনোদনের জায়গা করেছে। মার্কেট, স্কুল-কলেজ করে দিয়েছে। আগের ওই বাড়িতে তারা চাষ করছে। বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়ার আগ্রহের কথা জানান মোশাররফ। “দ্যাট ভিলেজ উয়িল বি এ ইকো-ফ্রেন্ডলি ভিলেজ।” আমাকে একটা ইউনিয়ন দেন আমার ন্যাশনাল হাউজিং অথরিটি থেকে করে দেখাই। একটা পয়সাও সরকার থেকে নেব না। উপস্থাপন অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আখতার হোসেন, রাজউকের সদস্য মোঃ আব্দুর রহমান, আইডিইবি’র সভাপতি এ কে এম এ হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মোঃ শামসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
×