ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বাধায় ফের পরীক্ষা বন্ধ

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬

আওয়ামী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বাধায় ফের পরীক্ষা বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী/রাবি সংবাদদাতা ॥ বয়সসীমা বাতিল এবং নিয়োগে অস্বচ্ছতার অভিযোগ এনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শুক্রবার তিন ক্যাটাগরিতে নির্ধারিত পরীক্ষা বন্ধ করতে হলে ঢুকে পরীক্ষার্থীদের তুলে দিয়ে কেন্দ্রে তালা ঝুলিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসের প্রবেশপথগুলোতে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় হয়রানি ও লাঞ্ছনার শিকার হয় সারাদেশ থেকে আসা পরীক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এই নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করতে বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান ও আইসিটি সেন্টারের প্রশাসক অধ্যাপক খাদেমুল ইসলাম মোল্যাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে এই দুই শিক্ষকের বাসায় অস্ত্রসহ মহড়া দিয়ে পরীক্ষা বন্ধের হুমকি দেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগের জন্য গত ১৭ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তিন ক্যাটাগরিতে ২৭ পদের বিপরীতে আবেদন করেছিলেন তিন হাজার ২২০ জন। এই তিন ক্যাটাগরিতে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ক্যাটালগার পদে, ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ডাটা এন্ট্রি অপারেটর এবং বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত গ্রন্থাগার সহকারী পদের পরীক্ষার সময় নির্ধারিত ছিল। এতে প্রার্থীদের বয়সসীমা ১৮ থেকে ৩০ এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য সর্বোচ্চ ৩২ বছর নির্ধারিত ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করতে শুক্রবার সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বিজ্ঞান ভবনের বিভিন্ন গেটের তালায় সুপার গ্লু দিয়ে অন্য তালা লাগিয়ে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে ভবনের তালা ভেঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরীক্ষা শুরু করলে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর নেতৃতে ৩০-৪০ নেতাকর্মী হলে ঢুকে পরীক্ষার্থীদের বের করে দেয়। এ সময় কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান নেয়া চাকরি প্রার্থীদের ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়। অন্যদিকে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, বিনোদপুর ও কাজলা ফটকে অবস্থান নিয়ে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেয়। তারা অনেক পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে এবং অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে। এসব গেট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে লাঞ্ছনার শিকার হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাধায় পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে ঢুকতে না পারায় নির্ধারিত ডাটা এন্ট্রি অপারেটর এবং গ্রন্থাগার সহকারী পদের নিয়োগ পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মুজিবুল হক আজাদ খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা সকালে কেন্দ্রে ঢুকে পরীক্ষার্থীদের বের করে দিয়েছে। পরীক্ষার্থীদের বাধা দেয়ার পাশাপাশি যেসব শিক্ষক পরীক্ষা নেবেন তাদেরও বাধা দেয়া হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিয়োগ পরীক্ষা দিতে চাকরিপ্রার্থীরা হয়রানি ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে। জয়পুরহাট থেকে পরীক্ষা দিতে আসা রকিব বলেন, অন্য একটি নিয়োগ পরীক্ষা বাদ দিয়ে এখানে পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম। কিন্তু গেটে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ঢুকতেই দেয়নি। পঞ্চগড় থেকে আসা প্রমথ রায় বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। এ সময় অনেককে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে। রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ক্যাম্পাসে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বের করে দিয়েছে। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের নেতাকর্মীদের নিয়োগ না দিয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের চাকরি দিচ্ছে। তাই আমরা এই নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি। রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, আমরা নিয়ম মেনে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করেছিলাম। কিন্তু বহিরাগতরা এসে বিশৃঙ্খলা করে পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে। দাবি বা অভিযোগ আমাদের লিখিতভাবে না জানিয়ে এভাবে পরীক্ষা বন্ধ করা দুঃখজনক। হুমকির বিষয়ে রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, রাজশাহী নগরীর টিকাপাড়ায় আমার বাড়িতে গিয়ে ৫০-৬০ জনের একটি দল আজকের (শুক্রবার) পরীক্ষা বন্ধ করতে বলে। না করলে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা। একই সময় দশ-বারো জনের একটি দল অস্ত্রসহ আইসিটি সেন্টারের প্রশাসক খাদেমুল ইসলামকেও হুমকি দিয়ে গেছে। প্রসঙ্গত, এর আগে গত বুধবার নগরীর মতিহার থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের মালি ও আয়া পদে নিয়োগ পরীক্ষার সাক্ষাতকার বন্ধ করে দেয় নেতাকর্মীরা।
×