ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

৩শ’ এমপির মধ্যে ভেরিফাইড ফেসবুক মাত্র ৭ জনের ;###;ভেরিফাইড টুইটার মাত্র ২ জনের;###;নিজস্ব ওয়েবসাইট মাত্র ১৫ জনের

ডিজিটাল দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব নন এমপিরা

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৯ নভেম্বর ২০১৬

ডিজিটাল দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব নন এমপিরা

এমদাদুল হক তুহিন ॥ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে সরকার এগিয়ে গেলেও সরকারের এমপিরাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় নন তেমনভাবে। ৩৫০ এমপির মধ্যে ২৯৫ এমপির ফেসবুক আইডি বা পেজ থাকলেও সেগুলো ভেরিফাইড নয়। ভেরিফাইড ফেসবুক আইডি বা পেজ আছে এমন এমপির সংখ্যা মাত্র ৭। ভেরিফাইড টুইটার এ্যাকাউন্ট আছে মাত্র ২ জনের। ওয়েবসাইট আছে মাত্র ১৫ এমপির। এমপিদের মধ্যে ১৬৩ জনই ব্যবসায়ী। ফলে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একেবারেই নিষ্ক্রিয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এমপিদের গড় বয়স ৫৭ বছর; এর মধ্যে প্রবীণতমের বয়স ৮৫ বছর ও সর্বকনিষ্ঠ এমপির বয়স ৩৩। শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক দিয়ে এক-তৃতীয়াংশের রয়েছে স্নাতক ডিগ্রী, মাস্টার্স ডিগ্রী আছে এক-তৃতীয়াংশের ও পিএইডি ডিগ্রী আছে মাত্র ৪ জনের। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, জাতীয় সংসদের স্পীকার নারী হওয়া সত্ত্বেও মাত্র ৭ শতাংশ নারী এমপি সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংসদে এসেছেন। ‘১০ম জাতীয় সংসদ: এমপিদের ওপর সামাজিক গবেষণা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমপিদের হওয়া উচিত ছিল আরও বেশি সরব। তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বারের মতে, জনপ্রতিনিধিদের এখনই সতর্ক হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরও বেশি সক্রিয় হওয়া উচিত। ‘আমার এমপি’ টিম কর্তৃক পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, যে ৭ এমপির ভেরিফাইড ফেসবুক আইডি বা পেজ আছে তারা হলেনÑ জুনাইদ আহমেদ পলক, শাহরিয়ার আলম, ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল, শিরিন শারমিন চৌধুরী, তারানা হালিম, ওবায়দুল কাদের (আইডি) ও দিপু মনি (আইডি)। জরিপ পরিচালনায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপস্থিতি নেই খোদ তথ্যমন্ত্রীর। ফেসবুকে একটি আইডি থাকলেও তার কার্যক্রম নিষ্ক্রিয়। তার নেই নিজস্ব কোন ওয়েবসাইট। একই অবস্থা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদেরও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, মাত্র ২ এমপির টুইটার এ্যাকাউন্ট আছে। তারা হলেন জুনাইদ আহমেদ পলক ও সাবের হোসেন চৌধুরি। নন-ভেরিফাইড টুইটার এ্যাকাউন্ট আছে ১০ জনের। নিজস্ব ওয়েবসাইট, ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ও ভেরিফাইড টুইটার আইডি আছে এমন একমাত্র এমপি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে ৩০০ এমপির মধ্যে ১৬৩ জনই ব্যবসায়ী! এ কারণে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একেবারেই নিষ্ক্রিয়। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের সবচেয়ে অগ্রসর মানুষ বলেই তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছেন। এর প্রভাবটা জনপ্রতিনিধিদের ওপর পড়া উচিত ছিল। সামনের নির্বাচনে ২ কোটি নতুন ভোটার হবে। তাদের অর্ধেকের বয়সই ৩৫ বছরের নিচে। তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের বিকল্প নেই। একমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেই সহজে তরুণ ভোটারের কাছে পৌঁছা যাবে। আমি মনে করি এখনই জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক হওয়া উচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের আরও বেশি সরব হওয়া উচিত ছিল। জরিপে দেখা গেছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে একমাত্র আওয়ামী লীগেরই ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ, টুইটার এবং ওয়েবসাইট আছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও এগিয়ে আছেন এ তালিকায়। তার যেমন নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে তেমনি আছে ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ও টুইটার এ্যাকাউন্ট। ‘১০ম জাতীয় সংসদ ॥ এমপিদের ওপর সামাজিক গবেষণা’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, ১০ম জাতীয় সংসদের অধিকাংশ এমপিই প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন। ৩০০ এমপির মধ্যে ১৪৩ এমপি নির্বাচিত হয়েছেন প্রথমবারের মতো। আওয়ামী লীগ থেকে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন ৯৬, জাতীয় পার্টি থেকে ২০, বিএনএফ থেকে ১, স্বতন্ত্র ১৫, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ৪ ও ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে ৫ জন। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে এমপিদের গড় বয়স ৫৭ বছর। প্রবীণ এমপির বয়স ৮৫ বছর ও সর্বকনিষ্ঠ এমপির বয়স মাত্র ৩৩ বছর। এর মধ্যে প্রবীণ ও সর্বকনিষ্ঠ উভয় এমপিই রংপুর বিভাগের। এমপিদের শিক্ষাগত যোগ্যতায় দেখা গেছে, মাত্র এক-তৃতীয়াংশ এমপির স্নাতক ডিগ্রী রয়েছে। মাস্টার্স ডিগ্রীও আছে এক-তৃতীয়াংশের। এতে বলা হয়, স্নাতক ডিগ্রী আছে এমন এমপির সংখ্যা ১১৩, মাস্টার্স ডিগ্রী আছে ১০৪, পিএইচডি ডিগ্রীধারী এমপির সংখ্যা মাত্র ৪। আর সংসদে এসএসসি পাস এমপি আছেন ৯ ও এইচএসসি পাস ২৪ জন। পেশার দিক থেকে দেখা গেছে অধিকাংশ এমপিই ব্যবসায়ী। ৩০০ এমপির মধ্যে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এমন এমপির সংখ্যা ১৬৩। এর মধ্যে কৃষিভিত্তিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন এমন এমপির সংখ্যা ২৪। সংসদে আইনজ্ঞ এমপির সংখ্যা ৩৯। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংসদে দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি হয়েছেন ৯৩, জাতীয় পার্টি থেকে ৯ ও স্বতন্ত্র থেকে ২ জন। তৃতীয়বারের মতো এমপি হয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে ৩৬ ও জাতীয় পার্টি থেকে ২ জন। এতে বলা হয় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, জাতীয় সংসদের স্পীকার নারী হওয়া সত্ত্বেও সংসদে নারীর অংশগ্রহণ তেমনভাবে বাড়েনি। মাত্র ৭ শতাংশ নারী এমপি সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংসদে এসেছেন। সংসদের ৯৩ শতাংশ এমপিই পুরুষ। নির্বাচিত মহিলা এমপির মধ্যে এক-পঞ্চমাংশের মাস্টার্স ডিগ্রী রয়েছে। নারী এমপির এক-পঞ্চমাংশ সহযোগীদের সঙ্গে ব্যবসায় যুক্ত। এরমধ্যে আইনজীবী নারী এমপি আছেন ৮ আর ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ৯ জন। ডাটা এন্ট্রি করতে গিয়ে দেখা গেছে, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন সরব অবস্থান নেই। এ প্রসঙ্গে ‘আমার এমপি’ প্রজেক্টের সোশ্যাল মিডিয়া কনসালট্যান্ট সুশান্ত দাস গুপ্ত বলেন, তন্ন তন্ন করেও তথ্যমন্ত্রীর টুইটার এ্যাকাউন্ট বা ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফেসবুকে একটি আইডি থাকলেও তাতে তেমন কোন দরকারি তথ্য নেই। একই অবস্থা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের। তাদেরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেই কোন উপস্থিতি। বিভাগভিত্তিক তথ্যে দেখা গেছে, ভার্চুয়াল জগতে সবচেয়ে কম উপস্থিতি রয়েছে সিলেট বিভাগের এমপিদের। এ বিভাগের ১৯ এমপির কারো নিজস্ব ওয়েবসাইট নেই। নেই ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ বা প্রোফাইল। টুইটারেও তাদের কোন উপস্থিতি নেই। সিলেট বিভাগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি সরব উপস্থিতি রয়েছে হবিগঞ্জের সংসদ সদস্য মোঃ আবু জহিরের, তবে তার ফেসবুক আইডিও ভেরিফাইড নয়। ময়মনসিংহ বিভাগের এমপির মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় গফরগাঁওয়ের সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল। তার ফেসবুক পেজ ভেরিফাইড হলেও টুইটার এ্যাকাউন্ট ভেরিফাইড নয়। নিজস্ব ওয়েবসাইটের উন্নয়নেও এই এমপির নজর নেই তেমন। তবে একই জেলার অন্য এমপিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেই তেমন সক্রিয় নন। তুলনামূলক ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল এগিয়ে আছেন এ বিভাগে। সামগ্রিক প্রসঙ্গে ‘আমার এমপি’ প্রজেক্টের সোশ্যাল মিডিয়া কনসালট্যান্ট সুশান্ত দাসগুপ্ত জনকণ্ঠকে বলেন, এই জরিপ তৈরিতে কাজ করেছে ‘আমার এমপি’ টিম। আমার এমপি এমন একটি প্রজেক্ট, যা ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে এমপিদের প্রমোশন কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার মতে, সব এমপিরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আর বেশি সক্রিয় হওয়া উচিত। কেননা, জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার এটিই সহজ মাধ্যম। আমার এমপির ফেসবুক পেজে (যঃঃঢ়ং://িি.িভধপবনড়ড়শ.পড়স/ধসধৎ গচইউ/) বা ওয়েবসাইটে (যঃঃঢ়://ধসধৎসঢ়.পড়স) গিয়ে খুব সহজেই যে কেউ তার এলাকার এমপির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। মূলত এমপিদের সঙ্গে জনগণের সহজ যোগাযোগ নিশ্চিত করতেই এই জরিপ পরিচালিত হয়েছে বলে জানান তিনি।
×