ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এর মধ্যে রয়েছে ধানের পাঁচ, গমের এক, আলুর দুই, আখের এক ও পাটের নতুন একটি জাত

চাষাবাদের জন্য উন্মুক্ত হলো নতুন ১০ জাত

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ২৪ নভেম্বর ২০১৬

চাষাবাদের জন্য উন্মুক্ত হলো নতুন ১০ জাত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সারাদেশে চাষাবাদের জন্য উন্মুক্ত হলো ধান, গম, আলু, আখ ও পাটের নতুন ১০টি জাত। এর মধ্যে রয়েছে ধানের পাঁচ, গমের এক, আলুর দুই, আখের এক ও পাটের নতুন একটি জাত। ধান, গম, আলু, আখ ও পাটের ১০ জাত উন্মুক্ত করে গত ১০ নবেম্বর গেজেট জারি করেছে সরকার। এর আগে এ জাতগুলো জাতীয় বীজ বোর্ডের (এনএসবি) ৮১, ৮৯ ও ৯০তম সভায় ছাড়ের অনুমোদন দেয়া হয়। আমন মৌসুমে সারাদেশে চাষের জন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) উদ্ভাবিত ব্রি ধান-৭৫, ব্রি ধান-৭৬, ব্রি ধান-৭৭ ও ব্রি ধান-৭৮ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিইউ ধান-২ উন্মুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) আবিষ্কৃত বিনা গম-১, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) উদ্ভাবিত বারি আলু-৭২ ও বারি আলু-৭৩ এখন থেকে রবি মৌসুমে সারাদেশে চাষ করতে পারবেন কৃষকরা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও বীজ উইংয়ের মহাপরিচালক ফজলে ওয়াহেদ খোন্দকার বলেছেন, ‘গেজেট জারির পর নতুন জাতগুলো চাষের জন্য উন্মুক্ত হয়ে গেল। এ জাতগুলোর নানা ভাল দিক আছে। তবে চাষাবাদ শুরু করলে সেগুলো আরও ভালভাবে বোঝা যাবে। কোনো ত্রুটি থাকলে সেগুলোও ধরা পড়বে।’ ব্রি ধান-৭৫ : কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ব্রি ধান-৭৫ জাতের পূর্ণবয়স্ক গাছের উচ্চতা ১০১ থেকে ১১০ সেন্টিমিটার। কা- শক্ত, তাই হেলে পড়ে না ও শীষ থেকে ধানও ঝরে পড়ে না। ডগা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা এবং পাতার রং গাঢ় সবুজ। ধানের দানার রং সোনালি এবং মাঝারি চিকন। এক হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২১ গ্রাম। এ জাতের চালে সামান্য সুগন্ধি আছে। তবে রান্না করার সময় সুগন্ধ অনেক বেশি পাওয়া যায়। সারের মাত্রা অন্যান্য উফশী জাতের চেয়ে ২০ শতাংশ কম লাগে। এ জাতের জীবনকাল ১১০ থেকে ১১৫ দিন। ব্রি ধান ৭৫-এর গড় ফলন হেক্টর প্রতি সাড়ে ৪ টন। তবে উপযুক্ত পরিচর্যায় প্রতি হেক্টরে সাড়ে ৫ টন পর্যন্ত ফলন হতে পারে। ব্রি ধান-৭৬ ও ৭৭ : দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জমিতে আমন মৌসুমে পানি জমে থাকে, এতে জমি অনাবাদী থাকে। তাই জোয়ার-ভাটা অঞ্চলে চাষবাদের উপযোগী ব্রি-৭৬ ও ৭৭ ধানের জাত দুটি দক্ষিণাঞ্চলে ভাল ফল আনতে পারে। ব্রি ধান-৭৮ : দুটি জাতের শঙ্করায়নের মাধ্যমে মোডিফাইড মার্কার এসিস্টেড সিলেকশন পদ্ধতিতে একই সঙ্গে লবণাক্ততা ও বন্যা সহিষ্ণু জিনের মাধ্যমে এ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। জাতটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর কুশিগুলো গাছের গোড়ার দিকে ঘনভাবে সন্নিবেশিত, উচ্চতা প্রায় ১২০ সেন্টিমিটার। জীবনকাল ১৩৩ থেকে ১৩৬ দিন। এক হাজারটি পুষ্ট চালের ওজন প্রায় ২৪ দশমিক ২০ গ্রাম। জাতটির চাল মাঝারি লম্বা ও চিকন এবং ভাত ঝরঝরে। রং সাদা। এ জাতের রোগবালাই ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক কম। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে জাতটির ফলন প্রতি হেক্টরে সাড়ে ৪ টন থেকে চার দশমিক ৭ টন পর্যন্ত পাওয়া যায়। উপকূলীয় জোয়ার-ভাটা ও লবণাক্ততাপ্রবণ অঞ্চলে চাষাবাদের উপযোগী বিরি ধান-৭৮। বিইউ ধান-২ : এ জাতটি আকারে খাটো ও আলো অসংবেদনশীল। এর চাল সরু ও রং সাদা। প্রচলিত সরু জাতের ধানের চেয়ে খাটো হওয়ায় এ ধান গাছ ঢলে পড়ে না। সরু জাতের প্রায় সব গুণাগুণ এ জাতটির মধ্যে রয়েছে। চালে বেশি দস্তা (প্রতি কেজিতে ২২ মিলিগ্রাম) এবং লৌহ (প্রতি কেজিতে ১০ মিলিগ্রাম) রয়েছে। উপযুক্ত চর্চায় জাতটির ফলন হেক্টর প্রতি সাড়ে ৪ থেকে ৬ টন। এ জাতের বিশেষ গুণ হলো চাল সরু কিন্তু উচ্চ ফলনশীল, ভাত সুস্বাদু এবং পাতা পোড়া, খোল পচা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি। আমন মৌসুম ছাড়াও বিইউ ধান-২ আউশ ও বোরো মৌসুমেও চাষাবাদের উপযোগী। বিনা গম-১ : বিনা গম-১ লবণাক্ততা সহনশীল, স্বল্পমেয়াদী ও উচ্চ ফলনশীল গমের জাত। লবণাক্ত মাটিতে পূর্ণ বয়স্ক গাছের উচ্চতা ৬৭ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার। রং গোলাপী। জীবনকাল ১০৫ থেকে ১১০ দিন। দানা মাঝারি ও বাদামী রঙের এবং এক হাজার দানার ওজন ৩৬ দশমিক ৬০ গ্রাম। জাতটির বিশেষ গুণ হলো অঙ্গজ বৃদ্ধি পর্যায় থেকে পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত ১২ ডিএস/মিটার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। জাতটি কালো দাগ পাতা পোড়া রোগ সহনশীল। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে লবণাক্ত মাটিতে বিনা গম-১ এর হেক্টর প্রতি ফলন ২ দশমিক ২ টন থেকে ৩ দশমিক ৫ টন এবং অলবণাক্ত মাটিতে ফলন ৩ দশমিক ২ টন থেকে ৪ দশমিক ২ টন। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ৩ দশমিক ৮ টন। বারি-৭২ ও ৭৩ আলুর জাত : বারি-৭২ জাতটি লবণাক্ততা ও তাপ সহিষ্ণু এবং বারি-৭৩ জাতটি তাপ সহিষ্ণু। প্রচলিত জনপ্রিয় চেক জাত ডায়মন্ড থেকে ফলন বেশি এবং জাতগুলোর বিশেষ গুণাবলী রয়েছে। রাতের তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে এবং দিনের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে থাকলে এ জাতের আলু উৎপাদনে কোন সমস্যা হয় না। জাত দুটির সংরণ মতা ভাল। বিএসআরআই আখ-৪৫ : বিএসআরআই আখ-৪৫ জাতে বিদ্যমান চিনির পরিমাণ ঈশ্বরদী-৩৯-এর চেয়ে বেশি। জাতটি খরা, বন্যা, লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু। এ ছাড়া জাতটি লাল পচা ও স্মাট রোগ প্রতিরোধী মতাসম্পন্ন, যা মাল্টি স্ট্রেস টলারেন্ট। হেক্টর প্রতি জাতটির গড় ফলন ১২৯ দশমিক ৪৪ টন এবং জীবনকাল ২৭৭ থেকে ২৮৮ দিন।
×