ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিহত ৬১ আহত শতাধিক ॥ আইএসের দায় স্বীকার

পাকিস্তানে পুলিশ একাডেমিতে আত্মঘাতী হামলা

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৬ অক্টোবর ২০১৬

পাকিস্তানে পুলিশ একাডেমিতে আত্মঘাতী হামলা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ পাকিস্তানের কোয়েটায় সোমবার রাতে একটি পুলিশ একাডেমিতে আত্মঘাতী জঙ্গী হামলায় ৬১ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই নতুন নিয়োগ পাওয়া পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মী। পরে আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যরা সেখানে পাল্টা অভিযান চালিয়ে জঙ্গী হামলার অবসান ঘটায়। হামলাকারী তিন আত্মঘাতী জঙ্গীই নিহত হয়েছে। আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। সোমবার পাকিস্তানের স্থানীয় সময় রাত ১১টা ১০ মিনিটে কোয়েটার ২০ কিলোমিটার পূর্বে বেলুচিস্তান পুলিশ কলেজে হামলা চালায় জঙ্গীরা। এরপর কয়েক ঘণ্টা ঘটনাস্থল থেকে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। আত্মঘাতী তিন হামলাকারীর মধ্যে দুজন শরীরে বেঁধে রাখা বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে অধিকাংশ ক্যাডেট নিহত হন। তৃতীয় হামলাকারীকে গুলি করে হত্যা করে ফ্রন্টিয়ার কোরের (এফসি) সেনারা। খবর বিবিসি ও ডন অনলাইনের। বেলুচিস্তান প্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, তিন জঙ্গী আত্মঘাতী সরঞ্জামাদি নিয়ে পুলিশ একাডেমিতে হামলা চালায়। এর আগে হামলাকারীর সংখ্যা পাঁচ-ছয় জন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, হামলাকারীরা প্রথমে পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে অবস্থানরত পুলিশের ওপর হামলা চালায়। তারা গুলি করে তাকে হত্যার পর একাডেমির ভেতরে ঢোকে। পাকিস্তানে এ বছর এটা তৃতীয় ভয়াবহ হামলা। বেলুচিস্তানের আধা সামরিক বাহিনী ফ্রন্টিয়ার কোরের প্রধান মেজর জেনারেল শের আফগান বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর তিন ঘণ্টার মধ্যে জঙ্গী হামলার অবসান ঘটাতে সক্ষম হই।’ তিনি পাল্টা অভিযানের নেতৃত্ব দেন। শের আফগান বলেন, জঙ্গীদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আড়ি পেতে জানা গেছে, জঙ্গীরা পাকিস্তানী তালেবানের সহযোগী লস্কর-ই-জাংভি জঙ্গীগোষ্ঠীর আল আলিমি উপদলের সদস্য। তিনি বলেন, জঙ্গীরা আফগানিস্তানের সক্রিয় গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করছিল। তবে জঙ্গগোষ্ঠীটি হামলার দায়িত্ব এখনও স্বীকার করেনি। তিনি বলেন, অভিযানে অংশ নেয়া সামরিক বাহিনীর সদস্যরা গুরুতর আহত হলেও একাডেমির কোন ক্যাডেট গুরুতর আহত হননি। ফ্রন্টিয়ার কোরের আইজি শের আফগান আরও বলেন, তিন হামলাকারীর শরীরেই বোমা বাঁধা ছিল। এর মধ্যে দুজন আত্মঘাতী হামলা চালায়। অন্যজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বুগতি বলেন, হামলার সময় একাডেমিতে প্রায় সাত শ’ শিক্ষানবিস পুলিশ ছিল। তাদের মধ্যে কয়েক শ’কে উদ্ধার করা হয়েছে। স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপের (এসএসজি) কমান্ডো অভিযানের পর শিক্ষানবিস পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করা হয়। একাডেমিতে যখন আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যরা পাল্টা অভিযান চালায় তখন সেখানে বিদ্যুত চলে যায়। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গোটা এলাকা ঘিরে রাখে। এ্যাম্বুলেন্সে করে আহতদের হাসপাতালে নেয়া হয়। সামরিক হেলিকপ্টারগুলো আকাশে চক্কর দিতে থাকে। পুলিশ ও বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, সংঘর্ষ শুরু হলে ঘটনাস্থলে বেশ কয়েকটি বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। পুলিশ ক্যাডেট হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেয়া এক ব্যক্তি জানান, তিনি কালাশনিকভ রাইফেল হাতে মুখোশ পরা তিন ব্যক্তিকে দেখেন। তারা গুলিবর্ষণ করতে করতে মেসের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। তবে ওই পুলিশ ক্যাডেট দেয়াল টপকিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, নিহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই পুলিশ ক্যাডেট। এছাড়া নিরাপত্তারক্ষীরাও নিহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। কমপক্ষে ৬৫ জনকে বেসামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ তিনজনের অবস্থা সঙ্কটজনক। অল্পের জন্য হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া এক প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকদের বলেন, তিন জঙ্গী সরাসরি ব্যারাকে প্রবেশ করে। এরপর তারা গুলি করতে থাকে। আমি তাদের দেখে চিৎকার করতে থাকি এবং দৌড়ে ওপরে উঠে যাই। তিনি বলেন, হামলাকারী জঙ্গীরা গায়ে শাল জড়িয়ে ব্যারাকে প্রবেশ করে। পুলিশ একাডেমিতে হামলার পর প্রদেশের সকল সরকারী হাসপাতালে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়। আইএসের দায় স্বীকার ॥ পাকিস্তানের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কোয়েটায় একটি পুলিশ একাডেমিতে সন্ত্রাসী হামলায় ৬১ জন নিহতের ঘটনার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। মঙ্গলবার আইএস ঘনিষ্ঠ আমাক নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হয়, ‘তিনজন আইএস যোদ্ধা প্রথমে মেশিনগান ও গ্রেনেড ব্যবহার করেছে এবং তারপর ভিড়ের মধ্যে নিজেদের উড়িয়ে দেয়।’
×