ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আজ নির্বাচন করা হবে নতুন নেতৃত্ব ॥ সাধারণ সম্পাদক নিয়ে নানা গুঞ্জন

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

আজ নির্বাচন করা হবে নতুন নেতৃত্ব ॥ সাধারণ সম্পাদক নিয়ে নানা গুঞ্জন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ব্যালট পেপার, স্বচ্ছ ব্যালট ও নির্বাচন কমিশন সব প্রস্তুত। আজ রবিবারই নির্ধারিত হবে আওয়ামী লীগের বর্তমানে পদে থাকা ও পদপ্রত্যাশীদের ভাগ্য। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে আজই নির্বাচন করা হবে দলটির আগামী তিন বছরের জন্য নতুন নেতৃত্ব। টানা অষ্টম বারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন ৩৫ বছরে দলটির নেতৃত্বদানকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সবারই দৃষ্টি সাধারণ সম্পাদক পদটির দিকে। কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক? সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ওবায়দুল কাদের নাকি চমক দেয়ার মতো অন্য কেউ- এ নিয়ে দলটিতে গুঞ্জন-আলোচনা এখন চরমে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে এমন খবর দলটির সর্বত্র। এর মধ্যে শনিবার কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশনে দলে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্য পরিবর্তনের খবর নিয়ে। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নাকি ওবায়দুল কাদের দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে কে আসছেন- এ নিয়ে কানাঘুষা, আলোচনা, মূল্যায়ন কোনকিছুরই কমতি ছিল না সারাদেশ থেকে আগত সাড়ে ৬ সহস্রাধিক কাউন্সিলরদের মধ্যে। তবে শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্য খুলবে- তা আজই নির্ধারিত হবে। তবে এবারের নতুন কমিটিতে তারুণ্যের চমক থাকছে বলে জানা গেছে। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পরিবর্তে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরই সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন- এমন গুঞ্জন ডালপালা মেললেও এ নিয়ে ধূম্রজাল কাটেনি। তবে এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শুক্রবার সৈয়দ আশরাফ বলেন, সম্মেলনে নতুন কী চমক থাকবে সে বিষয়টি দলের সভাপতি শেখ হাসিনা আর আমি ছাড়া অন্য কেউ জানে না। দলের সাধারণ সম্পাদক পদে এক নেতার নাম ধরে সেøাগান দেয়া হচ্ছে- সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ আশরাফ বলেন, এসব সেøাগানে কোন কাজ হবে না। আজ সকাল ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন অর্থাৎ কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুর পর্যন্ত সারাদেশ থেকে আগত জেলার নেতাদের বক্তব্য শুনবেন প্রধানমন্ত্রী। মধ্যাহ্ন বিরতির পর শুরু হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এ অধিবেশনেই সারাদেশের সকল কাউন্সিলর তাদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন নেতা নির্বাচন করবেন। আজকের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে ৬ হাজার ৫শ’ ৭০ জন কাউন্সিলর অংশ নেবেন। সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ড. মশিউর রহমান এবং সাবেক সচিব রাশিদুল আলমের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ভোটের জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং ব্যালট পেপারও সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে অতীতে দেখা গেছে, দ্বিতীয় অধিবেশনে কেবলমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। ভোটের বদলে সমঝোতার মাধ্যমেই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। কাউন্সিলরদের ভোটে নতুন নেতৃত্ব গঠনে সার্বিক প্রস্তুতি থাকলেও ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের কোন সম্ভাবনা নেই। রেওয়াজ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণের আগেই বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি সভাপতির আসন ছেড়ে কাউন্সিলরদের জন্য নির্ধারিত আসনে গিয়ে বসবেন। এরপর নির্বাচন কমিশন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করবেন। প্রথমে দলটির দু’জন প্রবীণ নেতা সভাপতি পদে নাম প্রস্তাব ও সমর্থন করবেন। একাধিক প্রার্থী না থাকলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। একই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করা হবে সাধারণ সম্পাদক। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক কোন প্রার্থী না থাকলে প্রস্তাবিত দু’জনকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত ঘোষণা করবেন নির্বাচন কমিশন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনের পর নবনির্বাচিত নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মূল মঞ্চে উঠে পরবর্তী কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করবেন। এরপর বাকি পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব কাউন্সিলররা সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপরই অর্পণ করবেন। তাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গঠনের চাবিকাঠি দলের প্রধানের হাতেই থাকছে। অনুমাননির্ভর নানাজনের নাম এলেও নীতিনির্ধারকরা বলছেন, প্রবীণ-নবীনের সংমিশ্রণে নতুন নেতৃত্ব গঠিত হবে। তবে গতবারের কেন্দ্রীয় কমিটি ও মন্ত্রিসভার মতো এবারও বড় চমক আনতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে কাউন্সিল অধিবেশনকে ঘিরে এখন ঘুম হারাম অবস্থা বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতাদের। অনেকেই ভুগছেন পদ হারানোর আতঙ্কে। আবার অনেকে রয়েছেন পদোন্নতির আশায়। দলের সভাপতিম-লীতে কিছু নতুন মুখ আসতে পারে এবং সম্পাদকম-লী ও সদস্যপদে বড় ধরনের রদবদলের সম্ভাবনা আছে বলে দলের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সূত্র থেকে আভাস পাওয়া গেছে। তবে দলটির সূত্রগুলো বলছেন, নবীন ও প্রবীণের সম্মিলনে আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব আসবে। এতে প্রবীণদের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি সংগঠনকে গতিশীল করতে কমিটিতে তারুণ্যের নতুন রক্ত সঞ্চালন করা হবে। তবে গত রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দলের ভেতরে নানা ধরনের আলোচনা চলছিল। বিশেষ করে, সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন, তা নিয়েই সবার আগ্রহ ছিল বেশি। তবে দলের অধিকাংশ নীতিনির্ধারক নেতাই জানিয়েছেন, কে কোন পদ পাবেন- এটা পুরোপুরিই দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করছে। কাউন্সিলররা কী ধরনের নেতৃত্ব চান, কাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখতে চান তা জেনেই নতুন কমিটি ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী। তবে সবারই এক কথা সভাপতি পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প কেউ কল্পনাও করছেন না। সাধারণ সম্পাদকের পর সভাপতিম-লীর পদের বিষয়ে আগ্রহ বেশি জ্যেষ্ঠ নেতাদের। মধ্যম সারির নেতাদের মূল লক্ষ্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের পদের দিকে। সম্পাদকম-লী ও সদস্যপদে সাবেক ছাত্রনেতারা বেশ দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক নেতাই বাদ পড়ার আশঙ্কায় ছুটে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন নেতাদের কাছে। পদ রক্ষায় দলীয় সভানেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টাও উল্লেখ করার মতো। দলের একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছেন, আজকের কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাইরেও কিছু কিছু পদ ঘোষণা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়াও দলের দলীয় মনোনয়নে দলের সংসদীয় বোর্ডও ঘোষণা করা হবে আজকের কাউন্সিলে। তবে ৮১ সদস্যবিশিষ্ট আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ গঠন করতে কিছুদিন সময় লেগে যেতে পারে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। সম্মেলনে আসা একাধিক কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা হলে তাঁরাও আগামী নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ, অভিজ্ঞ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি সম্পন্ন নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে নতুন নেতৃত্ব প্রত্যাশা করেছেন। তাদের মতে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরপর দু’দফায় সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ এখন বেশ শক্তিশালী অবস্থানে। দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলেও বর্তমান সরকারের গ্রহণযোগ্যতা ঈর্ষান্বিত হারে বেড়েছে। জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী কঠোর অবস্থান এবং উন্নয়ন কর্মকা-ই সরকারকে এ অবস্থানে নিয়ে এসেছে। কিন্তু দলের কিছু মন্ত্রী-এমপি ও নেতার বিতর্কিত কর্মকা- একই সঙ্গে দল ও সরকারকে সমালোচনার মুখে ফেলছে। এসব বিতর্কিত নেতাদের হটিয়ে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাহসী নতুন নেতৃত্ব শেখ হাসিনা উপহার দেবেন বলেই তারা দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
×