ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চীনা ঋণ সহায়তার চুক্তি হয়েছে

অবশেষে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল প্রকল্প ক্রয় কমিটিতে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১৮ অক্টোবর ২০১৬

অবশেষে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল প্রকল্প  ক্রয় কমিটিতে যাচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ শেষ পর্যন্ত সরকারের ক্রয় কমিটিতে যাচ্ছে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল। বিপিসি তেল পরিবহনে সমুদ্রের মধ্যে এই ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ২০০৯ সালে। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০১০ সালে অনুমোদনও দেয়। কিন্তু অর্থ সংস্থানের ব্যর্থতায় ছয় বছর ঝুলে রয়েছে প্রকল্পটি। এখন সরকারের সবশেষ পর্যায়ের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। চীনা প্রেসিডেন্ট শিং জিনপিংয়ের ঢাকা সফরে দেশটির এক্সিম ব্যাংক ঋণ সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতির বিষয়ে একটি চুক্তি সই হয়েছে। চীনের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টার্মিনালটি নির্মাণ করবে। জ্বালানি বিভাগ বলছে আজ মঙ্গলবার জ্বালানি বিভাগ থেকে বহুল প্রত্যাশিত প্রকল্পটি সরকারের ক্রয় কমিটিতে উঠানোর জন্য প্রেরণ করা হবে। তেল পরিবহনে এখন যে লাইটার্জ জাহাজ ব্যবহার করা হয় সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল হলে তা আর প্রয়োজন হবে না। এতে জ্বালানি তেলের অপচয় কমার সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন ব্যয় এবং সময় কমে আসবে। বিপিসি বলছে এখন লাইটার্জে একটি এক লাখ টনের জাহাজ থেকে তেল খালাস করতে ১১ দিন সময় প্রয়োজন হয়। টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে তা দুই দিনে নেমে আসবে। বিদ্যুত জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইন-২০১০ এ টার্মিনালটি নির্মাণ করা হচ্ছে। চার হাজার ৯৩৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন-বিপিসি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটির অনুমোদনের সময় ইআরডি জানিয়েছিল সরকারী তহবিল থেকে ৯২০ কোটি ৮৭ লাখ, বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১১১ কোটি ৯০ লাখ এবং চায়না এক্সিম ব্যাংকের ঋণ থেকে তিন হাজার ৯০৩ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। মহেশখালি দ্বীপের কাছে গভীর সমুদ্রে ভাসমান তেল খালাসের টার্মিনালটি নির্মাণ করা হবে। চট্টগ্রামের আনোয়ার ডিপোকে টার্মিনালের সঙ্গে সংযুক্ত করতে ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের ইপিসি-নির্মাণ ঠিকাদার হিসেবে চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ব্যুরো (সিপিপি) কাজ করবে। এ বিষয়ে (জি টু জি) বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এবং সিপিপি এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বিপিসির একজন কর্মকর্তা জানান, ঋণের বিষয়ে চীনের সম্মতি পাওয়ার পর আশা করা হচ্ছে সরকারের অনুমোদনের পর দ্রুত কাজ শুরু হবে। ঝুলে থাকা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বিপিসির মুনাফা বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে বিপিসির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারির ক্রড অয়েলও এই টার্মিনাল ব্যবহার করবে। চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামোতে বড় ক্রুড ভেসেল হ্যান্ডেল করা সম্ভব নয়। কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্যতা কম মাত্র ৮ থেকে ১৪ মিটারে নেমে এসেছে। এসব সীমাবদ্ধতার কারণে বড় ক্রুড ভেসেলগুলো গভীর সমুদ্রে নোঙ্গর করে। ছোট লাইটারজে করে ক্রুড খালাস করা হয়। এভাবে ১১ দিনে একটি এক লাখ ডিডব্লিউ ট্যাংকারের তেল খালাস করা হয়। প্রকল্পের আওতায় পাইপলাইন এবং সিঙ্গেল মুরিং টার্মিনাল নির্মাণের পাশাপাশি অফসোরে ১৪৬ কিলোমিটার ও অনসোরে ৭৪ কিলোমিটার সর্বমোট ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন (এর মধ্যে ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের ৩২ কিলোমিটার এবং ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের ১৮৮ কিলোমিটার)। মহেশখালী দ্বীপে ট্যাংক ফার্ম ও পাম্পস্টেশন স্থাপন। স্কাডা সিস্টেম স্থাপন। ভূমি অধিগ্রহণ, অধিযাচন ও ক্ষতিপূরণ। বিশেষজ্ঞ সেবা এবং ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম ও সংশ্লিষ্ট পূর্ত কাজ করা হবে।
×