ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মহালয়ার মধ্য দিয়ে মর্ত্যে দেবীদুর্গাকে আবাহন

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১ অক্টোবর ২০১৬

মহালয়ার মধ্য দিয়ে মর্ত্যে দেবীদুর্গাকে আবাহন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মহালয়ার মধ্য দিয়ে বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজোর আবাহন হলো শুক্রবার। পুরোহিতের কণ্ঠে চ-ীপাঠ, আবহ সঙ্গীত, ধর্মীয় আলোচনাসভা ও ভক্তিমূলক গানের মাধ্যমে দেবীকে মর্ত্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মহালয়ার মাধ্যমে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো। বলা হয়, এর মধ্য দিয়ে শুরু হলো দুর্গতিনাশিনী দেবীদুর্গার আগমণের ক্ষণগণনা। এ উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ বিভিন্ন পুজোম-পে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এদিকে এক সংবাদ সম্মেলনে বিজয়ার শোভাযাত্রা সন্ধ্যায় শেষ করে রাত নয়টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জনের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। শুক্রবার ভোর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পুজোম-পে মহালয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। আগামী ১১অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। সকাল ছয়টা থেকে সাতটা পর্যন্ত ঢাকেশ্বরী মন্দিরের কেন্দ্রীয় পুজোম-পে চ-ীপাঠ করে দেবীকে আহ্বান জানানো হয়। একইভাবে বনানী পুজোম-প, রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির এবং সিদ্ধেশ্বরী পুজোম-পসহ রাজধানীর অন্য মন্দির ও পুজোম-পে আয়োজন করা হয়েছে মহালয়ার। ভক্তরা প্রার্থনা করে দেবীদুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান করছেন। মহানগর সর্বজনীন পুজো উদযাপন কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সাহা মনি জানান, শান্তিপূর্ণভাবে চ-ীপাঠ, আবাহনী সঙ্গীত, ধর্মীয় আলোচনাসভা ও ভক্তিমূলক গানের মধ্য দিয়ে মহালয়া উদযাপন করা হচ্ছে। এবার সারাদেশে প্রায় ২৯ হাজার ৩শ’ ৮৫ পুজোম-পে দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতবার এর সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার ৭৪টি। বনানী পুজোম-পে প্রদীপ জ্বালিয়ে মহালয়ার অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। রাত নয়টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জনের আহ্বান ॥ বিজয়ার শোভাযাত্রা সন্ধ্যার মধ্যে শেষ করে রাত নয়টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জনের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ পুজো উদযাপন পরিষদ। সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালীর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপুজোর আগে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানানো হয়। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল বলেন, আগামী ১১ অক্টোবর সন্ধ্যার মধ্যে বিজয়ার শোভাযাত্রা শেষ করা এবং রাত নয়টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন করতে হবে। দেবী দুর্গার বোধনের মধ্য দিয়ে ৭ অক্টোবর শুরু হবে মূল পুজো। এবার দুর্গাপুজোর পরদিনই মুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান আশুরা (১০ মহররম) থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে তাপস পাল বলেন, ‘দুই উৎসবের পবিত্রতা রক্ষায় আমাদের অঙ্গসংগঠনগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের ওপর সাম্প্রতিক জঙ্গী হামলার প্রেক্ষাপটে এবার পুজোর সময় সরকারের পক্ষ থেকে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে; যদিও র‌্যাব-পুলিশের জঙ্গী দমন অভিযানের মধ্যে সে ধরনের ঘটনা কয়েক মাস ধরে ঘটছে না। আমরা আতঙ্কিত নই, কিন্তু শঙ্কামুক্তও নইÑ বলেন পুজো উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস। সংবাদ সম্মেলনে ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বাতিল করে হিন্দু ফাউন্ডেশন গঠনের দাবিও জানানো হয়। আগমী ১১ অক্টোবর দুর্গাপুজোর সাধারণ ছুটি এবং নির্বাহী আদেশে ১২ অক্টোবর আশুরার সরকারী ছুটি নির্ধারিত আছে। ঈদের মতো দুর্গাপুজোয়ও তিন দিনের সরকারী ছুটি চেয়ে পুজোর সময়ও বঙ্গভবন, গণভবন, নগর ভবনসহ জেলা পর্যায়ের সরকারী ভবনে আলোকসজ্জার দাবি জানান তাপস। পুজোর দিন কারাগারগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন, পুজোম-পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত ও বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের দাবিও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। বাংলাদেশ পুজো উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেন দিপু ছাড়াও পরিষদের অন্য নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। দুর্গাপুজোয় প্রহরী হয়ে পাহারা দেবে জাপা ॥ জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও ঢাকা-৪ আসনের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেছেন, আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব নির্বিঘেœ পালনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তার পাশাপাশি আমার নির্বাচনী এলাকা শ্যামপুর-কদমতলীর প্রতিটি মন্দিরে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা প্রহরী হয়ে পাহারায় থাকবে । শুক্রবার শ্যামপুর বালুর মাঠে শ্যামপুর কদমতলীর বিভিন্ন মন্দির কমিটি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এই কথা বলেন। মতবিনিময় সভা শেষে শ্যামপুর কদমতলীর সকল মন্দিরে দুর্গাপুজো ও মন্দির উন্নয়নের জন্য মন্দিরপ্রতি ২৫ হাজার টাকা করে সর্বমোট ৩ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করেন সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি। সার্ক কালচারাল সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যনিবাহী কমিটির সদস্য সুজন দের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ ফরিদ উদ্দীন, বাংলাদেশ পুজো উদযাপন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সাহা মনি, কদমতলী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ মিয়া, জাতীয় পার্টির নেতা শেখ মাসুক রহমান, কাওসার আহমেদ, ইব্রাহিম মোল্লা, সুলতানা আহমেদ লিপি, পুজো উদযাপন কমিটির নেতা গোপাল দাশ, ডিকে সমির, নির্মল খাসখেল, ইন্দ্রজিত দাশ, বিলাশ দাশসহ স্থানীয় মঠ- মন্দিরের নেতৃবৃন্দ। তিন দিনের ছুটি দাবি ॥ বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দুর্গোপুজোয় ৩ দিনের সরকারী ছুটির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করে। হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি এ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায়ের সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শ্রীমৎ স্বামী শ্রীশ্রী শঙ্করানন্দ পুরী গুরু মহারাজ, ড. সোনালী রাণী দাস, ড. অচিন্ত কুমার ম-ল, মানিক চন্দ্র সরকার, ডাঃ এমকে রায় ও সুভাষ সাহা।
×