ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজ নির্ধারণী লড়াই আজ

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১ অক্টোবর ২০১৬

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজ নির্ধারণী লড়াই আজ

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ-আফগানিস্তান তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে আজ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুপুর আড়াইটায় ম্যাচটি শুরু হবে। ম্যাচটি শেষ হলে রাতে কি হবে? বাংলাদেশ দল স্বস্তি পাবে না সম্মান যাবে? সেই প্রশ্নই এখন চতুর্দিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। সিরিজে এখন ১-১ সমতা আছে। যে দল জয় তুলে নেবে, সিরিজ তারাই জিতবে। যদি বাংলাদেশ জিতে, তাহলে ক্রিকেটাররাসহ সবাই স্বস্তি পাবে। আর যদি আফগানিস্তান জিতে তাহলে সম্মান যাবে। আফগানদের উৎসব তখন বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের গাঁয়ে কাঁটা হয়ে বিধবে। সেই কাঁটার আঘাত তো দেশের ক্রিকেট প্রেমীদের গাঁয়েও লাগবে! প্রথমবারের মতো আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২০১৪ সালে ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ। প্রথমবারেই হারে। এবার যখন আফগানদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ খেলছে, তখনও হারের সম্ভাবনাই থাকছে! আফগানিস্তান যে সিরিজে দুর্দান্ত খেলছে। প্রথম ওয়ানডেতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে ৭ রানে হেরেছে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২ উইকেটে জয়ই তুলে নিয়েছে আফগানিস্তান। তাই সিরিজ যে আফগানিস্তানও জিততে পারে, সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশ কী পারবে আফগানিস্তানকে রুখে দিতে? জিতলেই শততম ওয়ানডে জয়ও পাবে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে ২১তম ওয়ানডে সিরিজ জয়ও মিলবে। দ্বিতীয় ওয়ানডেটি জয় পেলেই তা হয়ে যেত। কিন্তু আফগান বোলার-ব্যাটসম্যানদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সিনিয়র ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় তা সম্ভব হয়নি। এবার তৃতীয় ওয়ানডেতে কী হবে? বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন, ‘আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ শুরুর আগে অনেকে ভেবেছিল সিরিজটা সহজ হবে। আমরা সহজেই জিতে যাব। আমি এবং আমার টিমের সবাই বিশ্বাস করেছিল এত সহজে আমাদের জয় পাওয়া সম্ভব হবে না।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘গত এক বছর ধরে আফগানিস্তান ভাল ক্রিকেট খেলছে। আর আমরা খেলার বাইরে। প্রথম ম্যাচেই বিষয়টা পুরো স্পষ্ট হয়েছে। দ্বিতীয় ম্যাচে আমাদের ব্যাটিং অর্ডার ভেঙ্গে পড়েছে। ম্যাচটা (তৃতীয় ওয়ানডে) সহজ হবে এটা আমরা প্রত্যাশা করছি না। শেষ ম্যাচে ভাল রিকোভারি করেও শেষ করতে পারিনি। আমাদের উইকেট একের পর এক পড়ে যায়। এটা আসলে আমরা প্রত্যাশা করিনি। আমাদের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সেরা পাঁচের কেউ না কেউ ভাল ক্রিকেট খেলেছে। কিন্তু আগের ম্যাচটাতে কেউ তেমন কিছু করতে পারেনি। ওই জায়গাতে ভাল করতে না পারলে ২২০ এর উপর যাওয়া কঠিন। আমি মনে করি আমাদের দিক থেকে একটা বাজে দিন। আমরা অবশ্যই আফগানিস্তানকে ছোট করছি না। আশা করি পরের (তৃতীয় ওয়ানডে) ম্যাচে এমন কিছু হবে না।’ এমন কিছু না হলে তো জয়ই মেলার কথা। আর জয় মিললে তো সিরিজও জেতার কথা। সময়ই বলে দেবে কী হয়। বাংলাদেশ এতটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যাবে, সিরিজ শুরুর আগে আসলেই কেউ ভাবেনি। যেভাবে ২০১৫ সালে পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে হারিয়েছে বাংলাদেশ; আফগানিস্তানকে তো পাত্তাই দেবে না। তাই ধরে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই ধারণা ভুল প্রমাণ হলো। আফগানিস্তান যে সম্প্রতি সময়ে দারুণ খেলছে। তা বাংলাদেশের বিপক্ষেও বজায় রাখল। আর বাংলাদেশ যে ১০ মাস ধরে ওয়ানডে ক্রিকেটের বাইরে ছিল, তার প্রভাব দেখা গেল। আফগানদের বিপক্ষে সিরিজে খেলতে নামার আগে বাংলাদেশ ৬১টি ওয়ানডে সিরিজ খেলে। ২০টি সিরিজে জিতে। ২০০৫ সালে জিম্বাবুইয়েকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজ জেতা শুরু করে বাংলাদেশ। এরপর ২০০৬ সালে দুইবার কেনিয়াকে, জিম্বাবুইয়েকে আরও দুইবার ও স্কটল্যান্ডকে একবার হারায়। ২০০৮ সালে আয়ারল্যান্ডকে সিরিজে হারায়। ২০০৯ সালে আবার জিম্বাবুইয়েকে তিনবার সিরিজে হারানোর সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও ১ বার সিরিজে হারায়। ২০১০ সালে আবার জিম্বাবুইয়েকে একবার সিরিজে হারায়। এবার নিউজিল্যান্ডকে সিরিজে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ২০১২ সালে আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সিরিজে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে আবার বাংলাদেশের কাছে সিরিজে বধ হয় নিউজিল্যান্ড। ২০১৪ সালের নবেম্বর থেকে তো অন্য এক বাংলাদেশকেই চিনেছে বিশ্ব ক্রিকেট। এর মধ্যে জিম্বাবুইয়েকে দুইবার ও পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাকে একবার করে হারিয়ে টানা পাঁচটি ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিয়েছে। জিম্বাবুইয়েকে সবচেয়ে বেশি ৯টি সিরিজে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, কেনিয়াকে ২ বার করে, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ডকে একবার করে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে হারায় বাংলাদেশ। এবার আফগানিস্তানকে হারাতে পারলে টানা ষষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জয় হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে শততম ওয়ানডে জয়ও হয়ে যাবে। টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি জয় পায় বাংলাদেশ। ৩৯টি ম্যাচে জিতে। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮টিতে জিতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিতে ৭টি ম্যাচে। ভারতের বিপক্ষে ৫টি, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪টি করে, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২টি করে ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ। শুধু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে কার্ডিফে ২০০৫ সালে একটি ম্যাচ জিতেছিল, সেই জয়ের পর আর অসিদের বিপক্ষে জয় ধরা দেয়নি। টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর বাইরে কেনিয়ার বিপক্ষে ৮টি, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫টি, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৪টি, আফগানিস্তান ও বারমুডার বিপক্ষে ২টি করে এবং কানাডা, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও হল্যান্ডের বিপক্ষে ১টি করে ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে জয়ের পর ৯৯তম ওয়ানডে জয় মিলে। এবার শততম জয় তুলে নেয়ার পালা। জিতলে তা হবে। না জিতলে অপেক্ষা আরও বাড়বে। আফগানিস্তান কিন্তু বাংলাদেশ এ প্রাপ্তি এখনই পাবে, তা হতে দিতে চায় না। আফগান ব্যাটসম্যান হাসমতুল্লাহ শহীদিই যেমন শুক্রবার বলেছেন, ‘আমরা সিরিজ জেতার চেষ্টা করব।’ আর অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবী বলেছেন, ‘আমরা সিরিজ জিতেই উৎসব করতে চাই।’ সিরিজের শুরু থেকেই আফগানরা হুংকার দিয়ে আসছেন। সেই হুংকারের সমাপ্তি আজ ঘটবে। কিন্তু কিভাবে ঘটবে? সেই প্রশ্নই সবার মুখে মুখে। বাংলাদেশ কী তৃতীয় ওয়ানডে জিতে সিরিজে জিতবে? জিতলে উৎসব হওয়ার তো কোন সম্ভাবনাই নেই। কারণ, এরই মধ্যে এক ওয়ানডে হেরে লজ্জা পেয়েছে। এখন স্বস্তি মিলতে পারে শুধু। জিতলে সেই স্বস্তি মিলবে। সিরিজ না হারায় হাফ ছেড়ে বাঁচবেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু যদি হেরে যায়? তাহলে এবার আর লজ্জা নয়, মান-সম্মানই যাবে। টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর বাইরে ২০১০ সালে ১ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হল্যান্ডের কাছে ও ২০১২ সালে এক ম্যাচের টি২০ সিরিজে স্কটল্যান্ডের কাছে সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ। এবার কী তাহলে আফগানদের কাছেও নত স্বীকার করবেন মাশরাফিরা। নাকি শেষ পর্যন্ত সিরিজ জয় হবে বাংলাদেশেরই। কী হবে, স্বস্তি মিলবে না মান যাবে? উত্তর মেলার অপেক্ষাই থাকল এখন।
×