ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পর্যটন বছরে দেশে বিদেশে প্রত্মসমৃদ্ধ ও পর্যটন এলাকার চিত্র ভালভাবে তুলে ;###;ধরা হয়নি

পর্যটক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সংখ্যা খুবই কম

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পর্যটক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সংখ্যা খুবই কম

সমুদ্র হক ॥ দেশজুড়ে বহু প্রত্নসমৃদ্ধ ও পর্যটন স্থাপনার এলাকা থাকার পর পর্যটক আগমনের হার বাড়েনি। পর্যটকরা কমন কয়েকটি প্রত্ন সমৃদ্ধ ও পর্যটন এলাকার কথাই জানে। অন্যান্য এলাকার পরিচয় তুলে ধরা হয় না। এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তা বিধানে বেশিরভাগ প্রত্ন ও পর্যটন এলাকায় কোন ট্যুরিস্ট পুলিশ নেই। সারা দেশে ট্যুরিস্ট পুলিশের সংখ্যা ৭শ’জন। এক সূত্র জানায়, ট্যুরিস্ট পুলিশের এই সংখ্যা প্রায় এক হাজারে উন্নীত করা হয়েছে। দেশের প্রতœ ও পর্যটন খাতকে স্বাচ্ছন্দ্য রাখতে পুলিশের এই সংখ্যা মোটেও যথেষ্ট নয়, এমন মন্তব্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের একজন কর্মকর্তার। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন নগরী পু-্রনগরখ্যাত বগুড়ার মহাস্থানগড়ের পর্যটকদের নিরাপত্তায় কোন ট্যুরিস্ট পুলিশ নেই। বগুড়ার পুলিশ সুপার জানালেন এখানে কোন ট্যুরিস্ট পুলিশ দেয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে স্থানীয় থানা পুলিশ নিরাপত্তা দিতে এগিয়ে যায়। চলতি ২ হাজার ১৬ সালকে পর্যটন বছর হিসেবে ঘোষণা করা হয। এই বর্ষ সফল করতে দেশ বিদেশে যে প্রচার কার্যক্রম চলার কথা তা নেই। বিদেশী পর্যটকদের কাছে আজও বাংলাদেশের প্রতœ সমৃদ্ধ এলাকাগুলোকে ভালভাবে তুলে ধরা যায়নি। বিদেশীরা বিশ্বের দীর্ঘ (১৭৫ কিলোমিটার) বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ও ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনকে যেভাবে চেনে অন্য পর্যটক ও প্রতœসমৃদ্ধ এলাকাগুলোকে ততটা চেনে না। উল্লেখ্য মালয়েশীয় সরকার তাদের দেশের পর্যটন বাড়াতে নিজেদের দেশকে ‘ট্রুলি এশিয়া’ সেøাগান প্রতীকে পরিচিত করেছে। চলতি বছর পর্যটন বছর ঘোষণার সময় ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ সেøাগান দেশে ও বিদেশে সর্বস্তরে পৌঁছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিমান, বাস, রেল টিকেট, সপিংমলে ভিজিট বিউটিফুল বাংলাদেশ লোগো ব্যবহার, আন্তর্জাতিক প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিউটিফুল বাংলাদেশ প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হয়। দেশের সকল তারকা খঁচিত হোটেল, পর্যটন মোটেল, রাজধানী ঢাকা, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরসহ পর্যটন ও প্রত্ন সম্পদ সমৃদ্ধ এলাকার জেলাগুলোতে ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ ফেস্টুন পোস্টার সেøাগান ও পরিচিতি তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়া হয়। বিমান ও হোটেল মোটেলগুলোর সেবার মান বাড়নোসহ ডিসকাউন্ট, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম কক্সবাজার সিলেট সরকারী ও বেসরকারী বিমানের কানেক্টিং ফ্লাইট বাড়ানোর কথা বলা হয়। পর্যটক বাড়াতে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকেও বিউটিফুল বাংলাদেশ প্রচার ব্যানার ফেস্টুন টাঙানোসহ রোড শোর আয়োজন করতে বলা হয়। সকল কর্মকা- বাস্তবায়নে ভাটা পড়ে। কিছুই সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে পর্যটন বছর প্রবাদের ‘যত গর্জে তত বর্ষে না’র মতো অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে বগুড়ার মহাস্থানগড়. নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির ও বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ এলাকায় পর্যটক আকর্ষণে অবকাশ কেন্দ্র, বাংলো বাড়ি, রেস্তরাঁ প্রয়োজনীয় উন্নত পথঘাট, বসার স্থান, দৃষ্টিনন্দন কার্যক্রমসহ নানা কিছু নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। সাউথ এশিয়া ট্যুরিজম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ মিলিয়ন ডলার। যার ১২ মিলিয়ন ডলার জোগান দিয়েছে এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক। ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। কাজ অনেকদূর এগিয়েও গিয়েছে। শেষ হতে আগামী বছরের অনেকটা সময় লেগে যাবে। এর মধ্যেই দেশী-বিদেশী পর্যটকরা আসছেন। তবে পর্যটন বছরকে ঘিরে যে হারে পর্যটক আগমনের কথা তা নেই। প্রতিবছর যে হারে আগমন ঘটে তার চেয়ে সামন্য বেড়েছে। এদিকে পর্যটক বাড়াতে ভিসা ব্যবস্থা সহজ করা হয়েছে। বর্তমানে ৬০টি দেশের পর্যটকদের ‘অন এ্যারাইভ্যাল ভিসা’ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত নেই। একজন পর্যটক গবেষক বলেন, ভারতকে অন এ্যারাইভ্যাল ভিসা দেয়া হলে এবং ভারতও বাংলাদেশের পর্যটকদের অন এ্যারাইভ্যাল ভিসা দিলে মেল বন্ধনে দুই দেশেই পর্যটক বাড়বে। পর্যটন এমন একটি শিল্প যেখানে পর্যটক আমদানিতে অর্থ দিতে হয় না। দেশী-বিদেশীরা এসেই অর্থ দিয়ে যায়। বাড়ে বৈদেশিক মুদ্রা। বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত হয়। এক সূত্র জানায়, ২ হাজার ১৫ সালে অভ্যন্তরীণ পর্যটক ছিল প্রায় ৪০ লাখ। বিদেশী পর্যটক এসেছিলেন প্রায় ৪ লাখ। কথা ছিল এ বছর দেশী পর্যটকের সংখ্যা ৪০ লাখ থেকে ১ কোটিতে এবং বিদেশী পর্যটক ১০ লাখে উন্নীত হবে। এ বছর আগস্ট পর্যন্ত গত বছরের হারের চেয়ে সামান্য বেড়েছে। ডিসেম্বর শেষে বোঝা যাবে এই হার কত বাড়ল। উল্লেখ্য, শীত মৌসুমে পর্যটকদের আগমন বেড়ে যায়। এই তথ্য পর্যটনের এক সূত্রের। পর্যটক বাড়াতে বান্দরবনের নীলগিরী, কুয়াকাটা, নিঝুম দ্বীপ, ঢাকার কাছে সোনারগাঁ, উয়ারী বটেশ্বর, সিলেটের শ্রীমঙ্গল, ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোর, খুলনা, রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, মেহেরপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়সহ দেশের অন্যান্য স্থানে পর্যটনের কোন পরিচিতি তুলে ধরা হয় না। প্রতœ সমৃদ্ধ ও পর্যটনের কয়েকটি কমন এলাকা শুধু ঘুরে ফিরে আসে।
×