ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সিএমএম আদালতে রেকর্ডসংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২০ আগস্ট ২০১৬

সিএমএম আদালতে রেকর্ডসংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি

আরাফাত মুন্না ॥ বিচার বিভাগের কাঁধে যখন ৩১ লাখ মামলার ভার, ঠিক তখনই এক বছরে প্রায় সোয়া দুই লাখ মামলা নিষ্পত্তি করে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসনিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার মাধ্যমেই মামলা নিষ্পত্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করা গেছে। দেশের সব আদালতে ঢাকার সিএমএমের কর্মকৌশল অনুকরণ করা হলে মামলা জট থাকবে না বলেই দাবি সংশ্লিষ্টদের। এর আগে ২০১৪ সালে পাইলট প্রকল্পের আওতায় সোয়া লাখ মামলা নিষ্পত্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জের দুটি জেলা আদালত। অন্যদিকে, সিএমএম আদালতের এসব নয়া কর্মকৌশল জানতে আগ্রহী সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন। সিএমএমের প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে দেশের অন্য আদালতগুলোতেও একই ধরনের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য সুপ্রীমকোর্ট থেকে চিঠি দেয়া হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। গত বছরের ৬ আগস্ট চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদেন শেখ হাফিজুর রহমান। ওই দিন থেকে গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময়ে ২ লাখ ১৫ হাজার ৪০৯ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। একই সময়ে নতুন মামলা দায়ের হয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৯৯৪টি। বর্তমানে দুই লাখ ২৪ হাজার ৩টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে এই আদালতে। বিশেষ কর্মকৌশল গ্রহণের ফলে এক বছরে সিএমএম আদালতে মামলাজট কমেছে প্রায় এক লাখ। সিএমএম শেখ হাফিজুর রহমান গত বছরের ৬ আগস্ট ওই পদে যোগদানের পর তার বিশেষ নির্দেশে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটরা এসব মামলা নিষ্পত্তি করেন। ওই আদালতে সিএমএমসহ ৩৫ জন বিচারক দায়িত্ব পালন করছেন। সিএমএম আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৬ আগস্ট ওই আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল তিন লাখ তিন হাজার ৪১৮টি। এর মধ্যে মোটরযান অধ্যাদেশের অধীনে মামলার সংখ্যা ছিল এক লাখ ৫৪ হাজার ১৬০টি। এসব মামলার আসামিদের অনুপস্থিতি এবং মামলা দায়েরে বিভিন্ন ত্রুটি থাকায় তা নিষ্পত্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ফলে বছরের পর বছর এসব মামলা বিচারাধীন থাকে। সিএমএম শেখ হাফিজুর রহমান মামলা-সংশ্লিষ্ট ‘প্রসিকিউশন রিপোর্ট’-এর আলোকে এসব মামলা বিচার ও নিষ্পত্তির স্বার্থে আইনানুগ যে কোন পন্থা অবলম্বন করতে সংশ্লিষ্ট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ দেন। ওই আদেশের পর গত এক বছরে মোটরযান আইনের অধীনে এক লাখ বাইশ হাজার ২৮টি মামলা এবং ফৌজাদারি কার্যবিধি, দ্রুত বিচার, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও পারিবারিক সহিংসতা-প্রতিরোধ সংক্রান্ত আইনের আওতায় ৯৩ হাজার মামলা নিষ্পত্তি করা হয়। আদালত ও আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, সিএমএম প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য গত এক বছরে মামলা দায়ের, নোটিস জারি, নকল প্রাপ্তিসহ সর্বক্ষেত্রেই ব্যাপক সংস্কারমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। বিচারে অহেতুক হস্তক্ষেপ রোধে প্রতিদিনই আদালতে সংশ্লিষ্ট বিচারকদের রিমান্ড ও জামিন শুনানির বিচারিক এখতিয়ার পরিবর্তন করা হচ্ছে। এ ছাড়া মামলা ধার্য তারিখে শুনানি গ্রহণ ও সাক্ষীকে আদালতে হাজিরের ক্ষেত্রে আগে থেকেই নোটিস জারি করা পাশাপশি ওই নোটিস পৌঁছেছে কি-না তাও তদারকি করতেন সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটরা। এ বিষয়ে প্রতিদিনই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আদালতে রিপোর্ট দিতে হয়। এসব সংস্কারমূলক কাজের ফলে বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি অনেকাংশে কমে এসেছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই। সুপ্রীমকোর্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে ১ নবেম্বর বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের সময় দেশের সব আদালতে বিচারাধীন ছিল ১৫ লাখ ৭০ হাজার মামলা। এখন এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৩১ লাখে। মামলাজট যখন দেশের সব আদালতে বাড়ছে, তখন সোয়া দুই লাখ মামলা নিষ্পত্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ঢাকার সিএমএম আদালত বিচার বিভাগকে পথ দেখাচ্ছেন। এ বিষয়ে সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, সিএমএম আদালতের কোন প্রতিবেদন এখনও সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসনে আসেনি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মামলা নিষ্পত্তির অগ্রগতির বিষয়ে ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইদুর রহমান মানিক বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা। বিদ্যমান ব্যবস্থা ও মামলা নিষ্পত্তির হার ধরে রাখা গেলে দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে বিচারাধীন মামলার জট থাকবে না। তিনি আরও বলেন, সিএমএম আদালত থেকে যখন মামলার শুনানি মুলতবির ক্ষেত্রে শর্তারোপ ও সাক্ষীদের আদালতের হাজির করাসহ বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়, তখন আইনজীবীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ নিয়ে আইনজীবীরাও তাল মিলিয়ে আদালতকে সহযোগিতা করেছেন। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় আইনজীবীরা এখন নতুন মামলা নিতে আগ্রহী হচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
×