ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাহবুবুর রহমান সজীব

শরত সজ্জা

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১২ আগস্ট ২০১৬

শরত সজ্জা

ঘাসের ঠোঁটে শিশির, কণা কণা রোদ সমেত হেসে ওঠে খুব সকালে; ফিক করে। দুপুর বাজতে না বাজতেই ময়ূরকণ্ঠী নীল মধ্যাকাশে, পাখিরা দলে দলে ঘুরে বেড়ায়। হঠাৎই আবার এক পাহাড় মেঘের রাজত্ব। এ যেন রোদ-বৃষ্টির গোল্লাছুট! দুধসাদা ঘ্রাণহীন কাশফুল তো দুলতে দুলতেই মাতাল, লেপ্টে থাকা নদীরপাড়ে। কোথা হতে নাকে ঢোকে শিউলির সুর। গাছের পাতায় চিত্রশিল্পীদের আনাগোনা। শরত এমনই। শান্ত, মায়াবী, বড় বেশি চুপচাপ। শরত সুন্দর, নিরীহ, পবিত্র। ফলে, শরতের সাজ-সজ্জাও হতে হয় স্বচ্ছ-সুন্দরে মাখামাখি। পোশাকের ক্ষেত্রে- সুতি, সিনথেটিক, জর্জেট, চিনন ইত্যাদি রকমের শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ পরতে পারেন। তবে, সালোয়ার-কামিজের জন্য সুতিই সবচেয়ে ভাল। আঁটসাঁট সালোয়ারের সঙ্গে কামিজ পরবেন একটু শর্ট। রঙের দিকে তো নজর রাখতেই হবে! গাঢ় নয়, হালকা রং বেছে নেবেন। নীল, সবুজ, ফিরোজা, গোলাপি, অফ হোয়াইট রংগুলো মানাবে ভাল। জরিপাড় সমেত ফিকে নীল শাড়ি, ধানি রং, চাঁপাফুল রং, সাদা জমিনে বুটি তোলা জামদানি শাড়ি এবং সঙ্গে ম্যাচিং ব্লাউজ। পাতলা কোটা শাড়ি এড়িয়ে চলাই উচিত এই শরতে। বৃষ্টির তো আর বিশ্বাস নেই! হুটহাট আছড়ে পড়তে পারে শরীরজুড়ে। ভিজে জুবুথুবু হয়ে যেতে পারেন হঠাৎই। তাই, সাদা কাপড় মানানসই নয় খুব একটা। কালো কাপড়ও নয়। কালো কাপড় ভিজে গেলে, ছোপছোপ দাগ জন্ম নিতে পারে। চুলের ক্ষেত্রে- যদি রাখা যায়, খোলা চুলই ভাল। লম্বা চুলে বেণী করে পাঞ্চ কিপ দিয়ে আটকে নেয়া যেতে পারে। চিরুনি পরার অভ্যাস যাদের, তারা বরং দু-একটা ফুল কিংবা ফুলের কুঁড়ি গুঁজে নিতে পারেন। হতে পারে গোলাপ সেটা, কিংবা রজনীগন্ধা। যদি খোঁপা বাঁধতে চান, অনুষ্ঠান কিংবা এমনিতেও, ফুল থাকলে ভাল। ছোট্ট মালা গেঁথে খোঁপা বেষ্টিত করে নিতে পারেন। চাইলে, মালা ঝুলিয়েও রাখতে পারেন খোলা চুলের এক পাশে। ছোট চুল যাদের, তাদের জন্য পনিটেল তো আছেই; খোঁপা বা পাঞ্চ কিপও ব্যবহার করতে পারেন। তবে হ্যাঁ, যেটাই করেন না কেন, চুল বাঁধার সময় চুলের ধরন এবং আপনার বয়সের দিকটা খেয়াল রাখতেই হবে। বাইশ-তেইশ যদি না পেরোয় বয়স, বেণী বাঁধবেন লম্বা। ফ্রেঞ্চ রোল, উঁচু চূড়া খোঁপা কিংবা এম খোঁপাও বাঁধতে পারেন। যদি পেরিয়ে যায় বাইশ-তেইশ, বাঁধতে পারেন এলো খোঁপা, গোল খোপা কিংবা বিড়া খোঁপা। পোশাক যখন হালকা, চুলের স্টাইলও যেন তাই-ই হয়; খেয়াল রাখবেন। সাজও যেন হালকাই হয়, শরতের মতো, স্নিগ্ধ। বাইরে রোদ-বৃষ্টির খেলা যখন-তখন। ছাতা তো রাখবেনই, সাজের উপকরণও যেন পানিরোধক হয়; খেয়াল রাখতে হবে। হালকা মেকআপই ভাল। গাঢ় সাজ খুব দৃষ্টিকটু দেখাবে। দিনের বেলায় ফাউন্ডেশন না লাগিয়ে হালকা কোন ফেস পাউডার ব্যবহার করতে পারেন, মসৃণ ও সুন্দর ত্বকের জন্য। ফাউন্ডেশন যদি লাগাতেই হয়, বেছে নেবেন ম্যাটিফায়িং ফাউন্ডেশন। সঙ্গে, হালকা পাউডারও ব্যবহার করা যেতে পারে, যদি খুব ঘাম হয়। নিজেকে অনেক বেশি ন্যাচারাল দেখাতে চাইলে, হালকা বাদামি রঙের আইশ্যাডো লাগিয়ে নিতে পারেন। পাশাপাশি নীল, সবুজ, গোলাপি, লাল কাজলের রেখা টেনে নিতে পারেন চোখের কোণে। ভাল লাগবে। তবে হ্যাঁ, রাতের বেলায় একটু গাঢ় করেই চোখ সাজাবেন। পছন্দের তালিকায় মেরুন, কফি, সবুজ, কিংবা নীলচে রং রাখতে পারেন। চোখের নিচে কালি থাকলে, সামান্য পলহোয়াইট হাইলাইটার লাগিয়ে নেবেন, ভ্রুর কাছে। তবুও, যদি খুব বেশি ফ্যাকাসে লাগে, কালো মাশকারা তো আছেই! মাশকারা বা পেন্সিল আইলাইনার ব্যবহার করতে চাইলে, অবশ্যই ওয়াটারপ্রুফ ব্যবহার করবেন। যাদের গাল ভারি ভারি দেখায়, অল্প করে হালকা বাদামি ব্লাশন লাগিয়ে নেবেন। কপালে যদি টিপ পরতে ভালবাসেন একান্তই, এমনকি না-ও বাসেন; ছোট কপাল যাদের, ছোট টিপ বেছে নেবেন। না পরলেও হয়। তবে, কপাল যাদের বড়, তারা বড় বড় ম্যাচিং টিপ অবশ্যই পরবেন। টিপের ক্ষেত্রে, পোশাকের বিপরীত রংও বেছে নেয়া যেতে পারে। সাজ-সজ্জার রুটিনে গহনা থাকবে না, কী করে হয় তা! এক্ষেত্রেও বেছে নেবেন হালকা কিছু। প্লেন বালা যদি হাতে থাকে, গলায় লেপ্টে থাকা লকেট, কানে দুটো হালকা রিং, কিংবা পাথর বসানো টব এমনকি মুক্তা বসানো দুল; কী লাগে আর! হোক না সেসব সোনা, রূপা, মুক্তা, অক্সিডাইজ, মেটাল, কাচ, মাটি, পুঁতি, কাঠ কিংবা যে কোন রকমের; সুন্দরই লাগবে। জুতা পরবেন নিজের উচ্চতা বিচারে। এক্ষেত্রেও ওই একই কথা, জমকালো যেন না হয়। তবেই না নিজেও একটা শরত হয়ে যাবেন! আস্ত শরত, নির্মল ঋতু..। মডেল : হাফসা জামান এ্যানি
×