ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাজনীন বেগম

সন্তানের বয়ঃসন্ধিকাল জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২৯ জুলাই ২০১৬

সন্তানের বয়ঃসন্ধিকাল  জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়

মায়ের জঠর থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। মায়ের যত্নে, আদরে, মমতায় সর্বোপরি সচেতনতায় শিশু-সন্তানের জীবন অতিক্রান্ত হয়। শৈশব পার হয়ে একটি শিশু যখন কৈশোরের যুগসন্ধিক্ষণে পা রাখে সে অধ্যায়টি নানা কারণে প্রয়োজনীয় সময় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। সাধারণত ১৪ থেকে ১৮ বছরের এই কালটাই বয়ঃসন্ধিক্ষণের সময় হিসেবে ধরা হয়। এই সময় চেনা জগৎ অচেনা হয়ে যায়, নতুন এক উন্মাদনায় কিশোর-কিশোরী মন অকারণে চঞ্চল হয়, রঙিন পাখা মেলে সীমাহীন প্রান্তরে পাড়ি দিতে হৃদয় ব্যাকুল হয়। মায়ের আঁচল ঘেরা ছোট্ট পরিবারকে মনে হয় গ-িবদ্ধ এক ক্ষুদ্র আলয়। অবাধ, উন্মুক্ত কিংবা দূর-দূরান্তের নানান জায়গা থেকে আসে এক অজানা উদাত্ত আহ্বান। বেপরোয়া সে ডাকে জীবন-মন ঘরের সীমাবদ্ধ ক্ষুদ্র আঙিনা থেকে বের হয়ে বাইরের বৃহত্তর জগতকে দেখার আকুল পিপাসায় হৃদয়-প্রাণ উদভ্রান্ত হয়, উদ্বুদ্ধ হয়। এই স্পর্শকাতর বয়ঃসন্ধিকাল নিয়ে বিভিন্ন যুগের কবি-সাহিত্যিকরাও হয়ে ওঠেন কল্পনাশ্রয়ী, আবেগে আপ্লুত। জার্মান মহাকবি গ্যেটে ১৮ বছরকে দেখেছিলেন ঠিক এভাবে ‘আমার বয়স যখন আঠারো বছর তখন মনে হতো আমার দেশটির বয়সও আঠারো। একই সুরে সুর মেলান বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। ‘তখন তাঁর বয়স আঠারো ছিল তা নয়, আশপাশের সকলের বয়স যেন আঠারো ছিল।’ আর বিপ্লবী কবি সুকান্ত ‘আঠারো বছর বয়স’ নিয়ে এক অবিস্মরণীয় কবিতাই লিখে ফেললেন। গ্যেটে কিংবা রবীন্দ্রনাথের মতো শান্ত-স্নিগ্ধ এবং ঠা-া মেজাজে আঠারো বছরকে চিহ্নিত করলেন না। তরুণ কবি তারুণ্যের দীপ্তিতে, দুঃসাহসিক অভিমাত্রার, নতুনের আহ্বানে তাঁর কবিতার প্রতিটি বাণীকে সিক্ত করলেন। ‘আঠারো বছর বয়স ভয়ঙ্কর তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা, এ বয়সে প্রাণ তীব্র আর প্রখর এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা।’ এই ভয়ঙ্কর উম্মাদনার বয়সটি আসলে কঠিন। বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা রকরের ডাক আসে। অজানা, অচেনা দূর-দূরান্তে পাড়ি দেয়ার এক রহস্যঘন রোমাঞ্চকর অনুভূতিতে শরীর মন উদভ্রান্ত হয়, বিক্ষিপ্ত হয়। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতো এই উদীয়মান কিশোরদের বলতে ইচ্ছে করে- থাকব নাকো বদ্ধ করে, দেখব এবার জগতটাকে কেমন করে ঘুরছে মানুষ,যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে। ছেলেমেয়েদের বয়সের এই যুগসন্ধিক্ষণে বাবা-মা দু’জনকেই অত্যন্ত সতর্ক এবং সচেতন থাকতে হয়। কঠিন, কঠোর, শাসন-শৃঙ্খলে বেঁধে না রেখে সন্তানের মানসিক এবং শারীরিক পরিবর্তনকে অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে মামলা দিতে হয়। ছেলেমেয়েরা এই নতুন এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নিতে চায়। বেপরোয়া, উদ্ধত আচরণে জীবনের অর্থটাকেই ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চায়। জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টি বাবা-মারাও কোন না কোনভাবে অতিক্রম করেছেন। যুগ এবং কালের ব্যবধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি মানুষের জীবনে। আর তাই যুগের প্রয়োজন এবং সময়ের দাবিকে আমলে নিয়ে সন্তানদের জীবনের এই আবশ্যকীয় পর্যায়টিকে সযতেœ, সস্নেহে, ভালবাসায় সিক্ত করে তাদের নিত্যনতুন চাহিদাকে পরিশীলিত করে বয়সের অনিবার্য এই দাবিকে ঠা-ামাথায় সামলাতে হয়। এই সময় বাবা-মা তাদের অবকাশকালীন সময়ে তাদের মাধ্যমতো ভ্রমণের একটা সুযোগ তৈরি করে সন্তানদের নিয়ে কোথাও ঘুরে আসতে পারেন। জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং সভ্যতা-সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন ধরনের বইয়ের পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করতে পারেন। খেলাধুলার প্রতিও সন্তানদের আগ্রহ তৈরি করতে পারলে তারা এ বিষয়েও মনোযোগী হতে পারে। জন্মসূত্রেই আমরা কোন না কোন ধর্মের অনুসারী। পরিবার থেকেই এই শিক্ষা বাবা-মাই দিয়ে থাকেন। ধর্ম মানুষের কল্যাণের জন্য, মানুষের জাগতিক এবং পারলৌকিক সমৃদ্ধির জন্য। যথার্থ ধর্মীয় শিক্ষায়ও সন্তানকে বড় করে তুলতে হবে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় জাতি হিসেবে আমরা চিরকালই বিশ্বাসী। বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বাসের পর্যায়টা ভিন্ন হলেও কোন ধর্মই মানুষের জীবনের বিপরীতে নয়। ধর্মীয় বিধি মানুষকে বিভিন্নভাবে রক্ষা করে, তাকে বাঁচতে শেখায়। নিজের মহামূল্যবান জীবন যা শুধু এক জনমেরই তাকে বাজি রেখে কিংবা নিঃশর্ত বলি দিয়ে নিজের কিংবা কারোরই মঙ্গল আসে না। নিজের ধর্ম সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন ধারণা থাকা প্রতিটি মানুষের নৈতিক দায়িত্ববোধের মধ্যেই পড়ে। সে দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে শুরু হয় পরিবার থেকে এবং শেষ পর্যন্ত পরিবারই ধর্ম সম্বন্ধে তার সদস্যদের সুস্পষ্ট এবং যথার্থ ব্যাখ্যা দেয়। সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্মকে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্ত এবং পথভ্রষ্ট করা অন্যায় এবং অপরাধের পর্যায়েই পড়ে। প্রতিনিয়তই পরিবর্তনশীল বিশ্ব এবং সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে উদীয়মান তরুণদের কোনভাবেই বিপদগামী হতে দেয়া যাবে না। তাদের তারুণ্যের প্রবল আকাক্সক্ষাকে সুস্থ এবং মাঙ্গলিক বিষয় সম্ভারে ভরিয়ে তুলতে হবে। তরুণ প্রজান্মের জানার আগ্রহ, বিশ্ব পরিসরে নতুনের আহ্বানকে যৌক্তিক জাগতিক এবং মানবিক কর্মযজ্ঞের দ্বারা সমৃদ্ধ করতে হবে। মানুষের মঙ্গলে নিজের কর্মসাধনাকে উদ্দীপ্ত করতে হবে। সর্বসাধারণের কল্যাণে জীবন-মন বিলিয়ে দিতে হবে। সো কোন রক্তাক্ত বা নৃশংস পথে নয়। তারুণ্যের দীপ্ত আলোকে দেশ থেকে দেশান্তর আলোয় আলোয় ভরে উঠবে। আজকের উদীয়মান তরুণরাই আগামীদিনের পথ নির্দেশক হিসেবে পুরো জাতিকে সুস্থ এবং স্বাভাবিক নিয়মে পরিচালিত করবে। পৈশাচিকতা, অমানবিকতা, বিবেকবর্জিত কোন লোমহর্ষক দুর্ঘটনা সম্ভাবনাময় তরুণদের জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না। প্রত্যেকের মূল্যবান জীবনকে সৎ, পার্থিব এবং কল্যাণকর কর্মের দ্বারা সার্থক করলেই ইহকাল পরকাল দুটোই রক্ষা হবে। তারুণ্যের উজ্জ্বল কিরণে দেশের সমস্ত অমঙ্গল সমূলে বিনাশ হবে, নতুন প্রজন্মের দীপ্ত আহ্বানে অশুভ শক্তির শেষ চিহ্নটিও যেন বিলুপ্ত হয় সেই আকাক্সক্ষাই আমাদের ভবিষ্যত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাবে। আনা কুর্নিকোভা ॥ এক টেনিস কন্যার গল্প আনা কুর্নিকোভা। রাশিয়ান টেনিস কন্যা। খুব বেশিদিন তিনি টেনিস কোর্টে ছিলেন না। তার খেলার যে ধরন ছিল তাতে টেনিস বিশ্বের ভবিষ্যত শাসনকর্তী হিসেবেই তাকে ধরে নিয়েছিলেন টেনিস বোদ্ধারা। মাঝপথেই ইনজুরির কারণে শেষ হয়ে যায় তার টেনিস ক্যারিয়ার। টেনিস থেকে অবসর নিয়েছেন ১০-১১ বছর হয়ে গেছে তারপরও এখনও অগণিত টেনিসপ্রেমীর অন্তরে বিরাজ করেন তিনি। মাত্র ১৪ বছর বয়সে র‌্যাকেট হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন আনা কুর্নিকোভা। পেশাদার টেনিসে কুর্নিকোভার অভিষেক হয় ১৯৯৫ সালে। তবে লাইমলাইটে আসতে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হয় তাকে। ১৯৯৭ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে টেনিসের বিশ্বকাপ উইম্বলডন ওপেনে অংশ নিয়ে চমকে দেন সবাইকে। সেবার শিরোপা জেতা না হলেও সেমিফাইনালে পৌঁছে এবং খেলার ধরন দিয়ে বুদ করে ফেলেন পুরো টেনিস বিশ্ব। টেনিস বোদ্ধারা বলাবলি করা শুরু“করে দিয়েছিল, ‘আগামী দিনের টেনিস বিশ্বের রানী বিশ্ব কাঁপাতে আসছেন’। তাকে জন স্টেফিগ্রাফ, মনিকা সেলেস দের সঙ্গেও তুলনা করা শুরু“করে দিয়েছিলেন। আনা কুর্নিকোভা সম্পর্কে টেনিস বিশ্বের বোদ্ধাদের সকল ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। টেনিস কোর্টে খুব একটা সফল হতে পারেননি কুর্নিকোভা। একক ক্যারিয়ারে কোন শিরোপা না থাকলেও মার্টিনা হিঙ্গিসের সঙ্গে জুটি বেঁধে পরপর দুই বছর ইউএস ওপেন জিতেছিলেন স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড, ম্যাক্সিমসহ বিভিন্ন ফ্যাশন ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে জায়গা করে নেয়া এ রুশ স্বর্ণকেশী। একে একে ১৭টি ডাবলস জিতেন তিনি। এরপর ২০০৩ সালে পিঠের ব্যথার কারণে টেনিস জগত থেকে অবসর নিলেও, রুশ টেনিস তারকাদের জন্য পথ তৈরি করে দেন আনা কুর্নিকোভা। আনা কুর্নিকোভার প্রেম-বিয়ে নিয়ে তার ভক্তদের মধ্যে অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। কুর্নিকোভার প্রেম-বিয়ের রহস্যের জট খুলতে না খুলতেই আবার খবর বের হয় যে, পপস্টার এনরিক ইগলেসিয়াসের সঙ্গে প্রেমে মজেছেন তাদের টেনিস-সুন্দরী কুর্নিকোভা। ভক্তদের চোখ কপালে উঠার জোগার হয় যখন তারা জানতে পারে এনরিকের সঙ্গে তার প্রেম সেই ২০০১ সাল থেকেই! ওই বছরেই এনরিকের একটি মিউজিক ভিডিওতে নিজের সৌন্দর্যের ঝলক দেখিয়ে বেড়াচ্ছিলেন কুর্নিকোভা। তারপর ২০০৩ ও ২০০৫ সালে আবার বিয়ের খবরও বের হয়। বিয়ের খবরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুজনের অস্বীকার খবরও প্রচার হতে থাকে বিশ্ব মিডিয়ায়। সে খবরের সত্য-মিথ্যার পক্ষেও চলতে থাকে নানা কথা। প্রায়ই শোনা যায় কুর্নিকোভা- এনরিক জুটি টিকে আছে এবং শীঘ্রই বিয়েও করতে যাচ্ছেন তারা। তবে ২০১১ সালেই নাকি তারা সেরেই রেখেছেন বিয়ের কাজ, এমন খবরও আছে! টেনিস খেলোয়াড় আনা কুর্নিকোভা টেনিস কোর্টের চেয়ে কোর্টের বাইরের কর্মকাণ্ডেই বেশি সফল হতে দেখা গিয়েছে। গ্ল্যামার, স্টাইল, আবেদন, পাওয়ার এসবের কারণে পণ্যের মুখপাত্র, ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদকন্যা, বিজ্ঞাপনের মডেল, নিউজিক ভিডিওর মডেল, এসব নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন কুর্নিকোভা। অবিশ্বাস্য গতিতে বেড়ে চলল ব্যাংক ব্যালান্স। আর নামতে শুরু করল র‌্যাঙ্কিং। স্পন্সর কিংবা ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডরদের দৃষ্টিতে পড়ে আয়ের পথ সমৃদ্ধ হলেও ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ র‌্যাঙ্কিং আট। ষ অপরাজিতা ডেস্ক
×