ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ছোটবেলা থেকেই কিছু করে দেখানোর ইচ্ছা ছিল এঁদের মনে। ১০-৫টার চাকরি নয়, নিজের সংস্থা গড়ার করেছিলেন এঁরা। ;###;ধনকুবের হলেও প্রথাগত শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত নন এঁরা কেউই। কিন্তু স্বপ্নপূরণে তা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ;###;আসুন জেনে নেই এমন ১০ বিলিয়নিয়ার সর্ম্পকে। লিখ

কলেজের গণ্ডি না পেরিয়েও বিলিয়নিয়ার!

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২২ জুলাই ২০১৬

কলেজের গণ্ডি না পেরিয়েও বিলিয়নিয়ার!

টেড টার্নার ব্রাউন ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। তবে পড়াশোনা শেষ করার আগেই বিতাড়িত হন আমেরিকান মিডিয়া মুঘল টেড টার্নার। তাতে দমে না গিয়ে বছর কয়েক পরেই বাবার এ্যাড এজেন্সিতে যোগ দেন। ষাটের দশকে বেশ কয়েকটি রেডিও স্টেশন প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ১৯৮০ সালে চালু করেন সিএনএন চ্যানেল। এরপর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি টার্নারকে। পড়াশোনা শেষ না করা এই মিডিয়া ব্যক্তিত্ব একজন জনহিতৈষী। তার সম্পদের পরিমাণ ২ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার প্রায় ১ বিলিয়ন তিনি ব্যয় করছেন জাতিসংঘ সাহায্য তহবিলে। তিনি বর্তমানে জাতিসংঘ সাহায্য তহবিলের ডিরেক্টর বোর্ডের চেয়ারম্যান। ১৯৩৮ সালে আমেরিকার ওহিও অঙ্গরাজ্যে জন্ম নেন টেড টার্নার। ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়ে তার ডরমিটরিতে এক মেয়ে রাখায় তাকে ইউনিভার্সিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে আর পড়াশোনা শেষ করা হয়নি তার। জ্যাক ডরসি নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েও কোন এক অজানা কারণে লেখাপড়া ছেড়ে দেন জ্যাক ডরসি। এরপর শুরু করেন গাড়ি ডেচপাচের ব্যবসা। এর সঙ্গে কুরিয়ার সার্ভিস এবং অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার ব্যবসাও সমানতালে চলতে থাকে। পরে প্রতিষ্ঠা করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার। টুইটারের প্রতিষ্ঠাতা ডরসি আসলে একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রী না নিলেও তিনি এই ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন সময়েই টুইটারের ধারণা চিন্তা করেন। বর্তমানে ডরসির সম্পদের পরিমাণ ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ডরসি ১৯৭৫ সালে আমেরিকার সেন্ট লুইসে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন ইতালির নাগরিক। এলিজাবেথ হোমস সেন্ট জোনস স্কুল পাস করে গ্র্যাজুয়েশন করতে স্ট্যানফোর্ড ইউনির্ভাসিটিতে ভর্তি হন এলিজাবেথ হোমস। বিষয় ছিল কেমিক্যাল সায়েন্স। কিন্তু সেখানে তিনি মাত্র এক সেমিস্টার করেই বাদ দেন। এরপর তিনি মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি ব্যবসা শুরু করেন। প্রতিষ্ঠা করেন থেরানোস নামের প্রাইভেট কোম্পানি। বর্তমানে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলারের মালিক হোমস। এই সফল উদ্যোক্তা এলিজাবেথ হোমস আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসিতে ১৯৮৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা কিস্টিয়ান রাসমুস হোমস আমেরিকার সরকারী সংস্থা ইউএসএআইডির কর্মকর্তা। তবে তার দাদা ছিলেন একজন বড় ব্যবসায়ী। ১৮৬০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ফ্লেইসম্যান কোম্পানি। এটি ছিল ফুড এন্ড বেভারেজ কোম্পানি। তাই ব্যবসার ধারণা এলিজাবেথ হোমসের জিনে রয়েছে। ৩২ বছর বয়সেই তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। র‌্যালফ লরেন আমেরিকার বিখ্যাত পোশাক কোম্পানি র‌্যালফ লরেন কর্পোরেশন। যার প্রতিষ্ঠাতা র‌্যালফ লরেন প্রথম জীবনে ছিলেন একটি টাই কোম্পানির সেলসম্যান। তিনি বর্তমানে একজন নামকরা ফ্যাশন ডিজাইনার। স্কুল শেষ করে বারুখ কলেজে বিজনেস স্টাডিস বিভাগে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু সেখানে দুই বছর পড়ে আর পড়া হয়নি তার। এরপর ১৯৬২ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত তিনি আমেরিকার সেনাবাহিনীতে ছিলেন। ১৯৬৬ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে নেমে পড়েন নিজের ব্যবসার কাজে। বিখ্যাত পোশাক ব্র্যান্ড ‘পোলো’র ডিজাইনার তিনি। বর্তমানে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৯৩৯ সালে নিউইয়র্ক শহরের ব্রুনক্সে জন্ম নেন তিনি। তার বাবা ছিলেন লেবানীজ ইহুদী। স্টিভ জবস যুক্তরাষ্ট্রের একজন উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবক। তাকে পার্সোনাল কম্পিউটার বিপ্লবের পথিকৃৎ বলা হয়। বিল গেটস আর ওয়াল্ট ডিজনির নাম বিবেচনায় রেখে বলা যায় বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রগতিশীল, প্রভাবশালী, প্রতিভাবান আর সফল প্রযুক্তি ভাবনার অধিকারী ছিলেন স্টিভ জবস। তিনি স্টিভ ওজনিয়াক এবং রোনাল্ড ওয়েনের সঙ্গে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে এ্যাপল কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এ্যাপল ইনকর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি পিক্সার এ্যানিমেশন স্টুডিওস-এরও প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ১৯৮৫ সালে এ্যাপল ইনকর্পোরেশনের বোর্ড অব ডিরেক্টরস সদস্যদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে তিনি এ্যাপল ইনকর্পোরেশনের থেকে পদত্যাগ করেন এবং নেক্সট কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৬ সালে এ্যাপল কম্পিউটার নেক্সট কম্পিউটারকে কিনে নিলে তিনি এ্যাপলে ফিরে আসেন। ওরেগনের রিড কলেজে পড়ার সময় থেকেই নিজে কিছু করার চিন্তাভাবনা শুরু করেন। টিউশন ফি বেশি হওয়ায় কলেজের পড়া শেষ করতে পারেননি এ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জোবস। মৃত্যুর আগে ৮৩০ কোটি ডলারের মালিকানা ছিল তার। মাইকেল ডেল একজন মার্কিন শিল্পোদ্যোক্তা যিনি ডেল ব্র্যান্ডের কম্পিউটার কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। ফোর্বস ৪০০-এর তালিকা (২০১০) অনুযায়ী তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সম্পদশালী ব্যক্তিদের একজন। তাঁর আনুষ্ঠানিক পরিচয় তিনি ডেল ইনকর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী। ছোটবেলায় জমানো ১ হাজার ডলার মূলধন নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ১৯৮৪-এ কম্পিউটার উৎপাদনের লাইসেন্স পান। মাত্র ২৪ বছর বয়সে প্রধান নির্বাহী হিসেবে যোগ দেন নিজের প্রতিষ্ঠানেই। মাত্র ৪৬ বছর বয়সে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১৭ বিলিয়ন ডলার। দুই যুগে তিনি ডেলকে পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় কম্পিউটার ব্র্যান্ড-এ উন্নীত করেছেন। কিশোর বয়সে পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট-টাইম জব করতেন ডেল কম্পিউটারের প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ডেল। টেক্সাস ইউনিভার্সিটিতে এক বছর পড়েই ইতি টানেন পড়াশোনার। এরপর নিজের ব্যবসা শুরু করেন। শেলডন এ্যাডেলসন ক্যাসিনো মুঘল এবং লাস ভেগাস, ম্যাকাও এবং সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন হোটেলের মালিক শেলডন এ্যাডেলসন ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক। জুয়ার সম্রাট বলা হয় তাকে। ২০১৩ সালে তার আয় ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাড়ায় তিনি ২০১৪ সালেই জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায়। তার জন্ম ১৯৩৩ সালে ম্যাসাচুসেটসের বোস্টনে। বাবা ছিলেন ট্যাক্সিচালক আর মা ক্যাটারিনের দোকান চালাতেন। ১২ বছর বয়সে ২০০ মার্কিন ডলার নিয়ে দৈনিক পত্রিকার ব্যবসা শুরু করেন। সিটি কলেজ অফ নিউইয়র্ক থেকে ড্রপ-আউট এই ছাত্র ৫০টার মতো ভিন্ন ভিন্ন ব্যবসা করেছেন। মার্কিন রাজনীতিতেও রয়েছে তার একটা শক্ত অবস্থান। ক্যাসিনো ডেভেলপার শেলডন এ্যাডেলসন ২০১২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেন রিপাবলিকান প্রার্থীকে হোয়াইট হাউসের কর্তা করার জন্য। বর্তমানে তিনি তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান লস ভেগাস স্যান্ডাসের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করেছেন। ল্যারি এলিসন তার পুরো নাম লরেন্স জোসেফ এলিসন। তবে প্রযুক্তি বিশ্ব তাকে একনামে চেনে ল্যারি এলিসন হিসেবেই। তিনি ওরাকল কর্পোরেশনের অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী। ১৯৪৪ সালের ১৭ আগস্ট জন্মগ্রহণ করা ল্যারি তার শিক্ষাজীবনে ছিলেন অত্যন্ত অমনোযোগী। বেশ কয়েকটি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ভর্তি হলেও শেষপর্যন্ত সফলভাবে তিনি শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেননি। এর মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোতে পড়ার সময়ে তিনি প্রথম পরিচিত হন কম্পিউটার ডিজাইনের সঙ্গে। ১৯৬৪ সালে তিনি স্থায়ীভাবে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়াতে চলে আসেন। সত্তরের দশকে তিনি এমডাল কর্পোরেশনের কাজ শুরু করেন। এখানে তার একটি কাজ ছিল সিআইএ’র জন্য ডাটাবেজ তৈরি করা। এই কাজ করতে গিয়ে তিনি উৎসাহী হয়ে ওঠেন ডাটাবেজ নিয়ে কাজ করতে। ১৯৭৭ সালে তিনি গড়ে তোলেন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ল্যাবরেটরিজ। পরে ১৯৭৯ সালে এরই নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ওরাকল। দুই সন্তানের জনক ৬৯ বছর বয়স্ক ল্যারি এলিসনের সম্পদের পরিমাণ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মার্ক জুকারবার্গ ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ মাত্র ৩২ বছরেই সাফল্যের নানা শিখর ছুঁয়েছেন। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে দু’বছর কাটিয়ে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে দেন। এই হার্ভার্ডে পড়ার সময়ই তিনি ফেসবুকের ধারণা চিন্তা করেন এবং এই ইউনিভার্সিটির ডরমিটরিতেই তিনি ফেসবুক প্রথম চালু করেন। এরপর ফেসবুক ব্যাপকভাবে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পরে। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১০ সালে টাইম ম্যাগাজিনের হিসাবে তিনি সবচেয়ে প্রভাববিস্তারকারী ব্যক্তিত্ব। বিল গেটস কলেজ ড্রপআউটদের তালিকায় সবচেয়ে বিখ্যাত মুখ বোধহয় বিল গেটস। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়েই পল এ্যালেন ও স্টিভ বামারের সঙ্গে বন্ধুত্ব। পরে তাদের সঙ্গে মিলেই মাইক্রোসফ্ট সংস্থা গড়েন। তার মা-বাবা তাকে আইনজীবী বানাতে চেয়েছিলেন। ১৩ বছর বয়সে তিনি লেকসাইড স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৭৩ সালে স্যাট পরীক্ষায় ১৬০০ তে ১৫৯০ নম্বর পান। এরপর ভর্তি হন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে। কিন্তু তিনি পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। পরবর্তীতে কর্মগুণে তিনি এই ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রী লাভ করেন।
×