ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পানির তোড়ে কাঁপছে তিস্তা ব্যারাজ

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২১ জুলাই ২০১৬

পানির তোড়ে কাঁপছে তিস্তা ব্যারাজ

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ২০ জুলাই ॥ তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের সব গেট খুলে দিয়ে পানি ভাটিতে ছেড়ে দিয়েছে। এতে তিস্তা নদীর চর-দ্বীপচরে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানির তোড়ে দেশের বৃহত্তর সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ থরথর করে কাঁপছে। ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে যৌথ নদী কমিশনের শর্তানুযায়ী মহাবিপদের আশঙ্কা থাকলে কমপক্ষে চার ঘণ্টা আগে ভারতের গজলডোবা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র হতে তিস্তা ব্যারাজ কেন্দ্রকে সতর্ক বার্তা প্রেরণ করে থাকে। এ ধরনের কোন সতর্ক বার্তা এখনও ভারত সরকার জানায়নি। গত কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানি ঢলে তিস্তা নদীর পানি ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। রাত ২টা হতে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। বুধবার বিকেল ৪টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ৩ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গাইবান্ধায় চার শ’ পরিবার গৃহহারা নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, একটানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া পানিবন্দী হয়েছে বন্যাকবলিত এলাকার পরিবারগুলো। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সুন্দরগঞ্জের কাপাসিয়া, হরিপুর, বেলকা, তারাপুর ইউনিয়নের নদী ভাঙ্গনে এ পর্যন্ত ৪শ’ পরিবারের বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বন্যাকবলিত এলাকায় তলিয়ে গেছে পাট, রোপা আমন বীজতলা ও সবজি ক্ষেত। পানিবন্দী মানুষ, গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। এসব এলাকার অনেক পরিবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। কাপাসিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মঞ্জু মিয়া জানান, প্রবল বর্ষণ ও বন্যার পানির তোড়ে বাদামের চর, ভাটি কাপাসিয়া, পূর্ব লালচামার, পশ্চিম লালচামার, উজান বুড়াইল, ভাটি বুড়াইল এলাকায় ব্যাপক নদী ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাহারুল ইসলাম জানান, তার ইউনিয়নে ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ডিমলায় ভাঙ্গন অব্যাহত স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, উজানের ঢলের দুর্বারগতিতে তিস্তা নদী ফুঁসে উঠায় বন্যা ও ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। বুধবার ডিমলা উপজেলার তিস্তা অববাহিকার ১৫টি চর ও চর গ্রামে নতুন করে আরও ৭০ পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সেই সঙ্গে বিলীন হচ্ছে আবাদি জমি। কোথাও কোথাও ঘরবাড়ির ভেতর দিয়ে তিস্তার বানের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়িতে ৪০টি ও পূর্ববাইসপুকুরে ৩০টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে। এ নিয়ে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ওই উপজেলার ৫শতাধিক পরিবার এখন ভিটেহারা। তারা এখন আশ্রয় নিয়ে রয়েছে তিস্তার বাঁধ ও উঁচু স্থানে। তার ওপর বৃষ্টি হচ্ছে থেমে থেমে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে বানভাসি ও ভিটেবাড়িহারা পরিবারগুলোর। কুড়িগ্রামে পানিবন্দী ৫০ হাজার স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দ্বিতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে ধরলার পানি ২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দ্বিতীয় দফা বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে জেলার চিলমারী, উলিপুর, রৌমারী, রাজীবপুর ও সদর উপজেলার শতাধিক চর ও দ্বীপ চরের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। এসব এলাকায় সরকারী বা বেসরকারীভাবে এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায়নি। বন্যার্ত এলাকায় রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকার বেশিরভাগ নলকূপ পানিতে তলিয়ে থাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট।
×