ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রণাঙ্গনে পর্যুদস্ত আইএস ॥ স্বীকার করেছেন জঙ্গী নেতারা

খিলাফতের পতন আসন্ন!

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ১৪ জুলাই ২০১৬

খিলাফতের পতন আসন্ন!

বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে গেলেও ইসলামিক স্টেট (আইএস) খিলাফতের শেষ পর্যন্ত পতনের জন্য এর অনুসারীদের নীরবে প্রস্তুত করছে। দলটি দু’বছর আগে বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে খিলাফত প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেছিল। সিরিয়ায় প্রকাশ্য বিবৃতি ও সাম্প্রতিক কাজকর্মে আইএস নেতারা রণাঙ্গনে সন্ত্রাসী সংগঠনটির ভাগ্য বিপর্যয়ের কথা স্বীকার করছেন এবং এর অবশিষ্ট শক্তিশালী ঘাঁটিগুলোর পতন হওয়ার সম্ভাবনার জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একই সময়ে সন্ত্রাসী নিজেরাই আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হলেও তারা সাম্প্রতিক হিংসাত্মক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার সঙ্কল্প ব্যক্ত করছেন। মার্কিন সন্ত্রাস দমন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গত মাসে ইস্তান্ব^ুল ও বাগদাদে চালানো প্রাণঘাতী হামলাগুলো বহুলাংশে ইরাক ও সিরিয়ায় সামরিক বিপর্যয়েরই প্রতিক্রিয়া। দলটি ভূখ-বিশিষ্ট এক আধা রাষ্ট্র থেকে অন্তত তিনটি মহাদেশে ছড়িযে থাকা শাখা ও সেলের এক অন্ধকারাচ্ছন্ন ও বিক্ষিপ্ত নেটওয়ার্কে পরিণত হতে পারে। তখন এরূপ সন্ত্রাসী কর্মকা- অব্যাহত থাকার এবং এমনকি প্রাথমিকভাবে আরও তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভূখ-ভিত্তিক আশ্রয়স্থল হারানো আইএসের জন্য এক বড় ধরনের আঘাতই হবে। যেমন, এর ফলে আইএসের তহবিল সংগ্রহ, রিক্রুটদের প্রশিক্ষণ দেয়া বা জটিল সন্ত্রাসী তৎপরতার পরিকল্পনা করার সামর্থ্য গুরুতরভাবে সীমিত হয়ে পড়বে। কিন্তু সংগঠনের ব্যাপক বিস্তৃতি এর আগামী কিছু কালের জন্য এক বিপজ্জনক শক্তি হয়ে থাকা নিশ্চিত করবে। বর্তমান ও সাবেক মার্কিন সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞরা একথা বলেন। আইএস কর্মকর্তারা প্রকাশ্য বিবৃতিতে ও সাক্ষাতকারে জোর দিয়ে বলেন, দলটির ‘খিলাফত’ প্রকল্প টেকসই রয়ে গেছে, তবে সামরিক বিপর্যয়ের কারণে রণকৌশল বদলাতে হয়েছে। সংগঠনের এক কর্মী বলেন, যদিও ইরাক ও সিরিয়ায় আমাদের মূল কাঠামো আক্রান্ত হয়েছে, তথাপি আমরা বিভিন্ন দেশে আমাদের কমান্ড, মিডিয়া ও সম্পদ কাঠামো সম্প্রসারিত করতে সমর্থ হয়েছি। তিনি তার নাম ও ভৌগোলিক অবস্থান প্রকাশ করা হবে না এমন শর্তে এক পশ্চিমা সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। আইএসের দীর্ঘদিনের ঐ কর্মী ইন্টারনেটভিত্তিক অডিও সার্ভিসের মাধ্যমে সেই সাক্ষাতকারে বলেন, প্রতিদিনই লোকজন আমাদের সঙ্গে যোগাােগ করে খিলাফতে আসতে চায় বলে জানাচ্ছে। কিন্তু আমরা তাদের তাদের দেশে থেকে সেখানেই বরং কোন কিছু করার জন্য অপেক্ষা করতে বলছি। খেলাফতের ভিতর হতাশার ভাব প্রতি সপ্তাহেই ক্রমশ প্রকাশ পাচ্ছে। ২০১৬-এর প্রথম ছয় মাসে খিলাফত আরও শতকরা ১২ ভাগ ভূখ- হারিয়েছে বলে বিশ্লেষক ফার্ম আইএইচএস গত সপ্তাহে জাানয়। আইএসের সিরীয় ভূখ-ে গত মাসে জারি করা কয়েকটি ইশতেহারে একটি প্রদেশে ইন্টারনেট কাফেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং আরেকটিতে টিভি সেট ও ডিশগুলো ধ্বংস করার নির্দেশ দেয়া হয়। ঐসব নির্দেশ বহির্বিশ্বের খবর জানার পথ কার্যত রুদ্ধ করে দেয়। ঐগুলোকে অবিশ্বাসীদের মতাদর্শ প্রচারের যন্ত্র নির্মূল করার চেষ্টা বলে অভিহিত করা হয়। গত ছয় সপ্তাহ ধরে আইএস কর্মকর্তাদের ইস্যু করা বিভিন্ন বিবৃতিতে আসন্ন পতনের আরও আভাস পাওয়া যায়। আইএসের সাপ্তাহিক অরবী পত্রিকা আল নাবায় গত মাসে লেখা সম্পাদকীয়তে খিলাফতের ভবিষ্যত সম্পর্কে এক হতাশাব্যঞ্জক মূল্যায়ন পেশ করা হয়। এতে আইএসের দখল করা সব ভূখণ্ড শেষ পর্যন্ত হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে বলে স্বীকার করা হয়। মাত্র দু’বছর আগে জিহাদী নেতারা তাদের ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বিশ্বের ইতিহাসে এক গৌরবময় নতুন যুগের সূচনা উদযাপন করেছিলেন। সেই সময়ে পূর্ব সিরিয়ার অধিকাংশ এবং উত্তর ও পশ্চিম ইরাকের বিরাটক ভূখ- নিয়ে খিলাফত গঠিত হয়েছিল। ‘খিলাফতের যুগে ক্রসেডারদের মোহ’ শীর্ষক ঐ সম্পাদকীয়তে দলটির অনুসারীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে চাওয়া হয়। এতে বলা হয়, আইএসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া পশ্চিমা ও রুশ সমর্থিত পৃথক পৃথক ক্রসেডার বাহিনীর অগ্রযাত্রার মুখে আইএসের সব শহরের পতন হলেও আইএস টিকে থাকবে। -ওয়াশিংটন পোস্ট
×