ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সবুজ-শ্যামল বাংলা ফিরিয়ে আনতে বেশি করে গাছ লাগান॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৬ জুন ২০১৬

সবুজ-শ্যামল বাংলা ফিরিয়ে আনতে বেশি করে গাছ লাগান॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশের প্রতি যতœবান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বর্ষা মৌসুমে সবাইকে বৃক্ষরোপণে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মানুষের অধিকতর সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্যই আমাদের পরিবেশকে ভালবাসতে হবে এবং রক্ষা করতে হবে। সবুজ-শ্যামল বাংলাকে ফিরিয়ে আনতে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। বুধবার গণভবনে কৃষক লীগ আয়োজিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বর্ষাকালে সবাইকে অন্তত একটি ফলজ, একটি বনজ এবং একটি ওষুধি গাছের চারা রোপণের আহ্বান জানান। ১৯৮৫ সাল থেকেই কৃষক লীগ প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী পালন করে আসছে। বুধবার অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জেলার ১০ জন সেরা বৃক্ষরোপণকারী পুরস্কৃত করেন এবং বাংলাদেশ কৃষক লীগ ২০ নেতৃবৃন্দের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী গণভবনে তিনটি গাছের চারা রোপণ করেন। কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি একেএম রহমত আলী, আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদত আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শামসুল হক রেজা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই কৃষক লীগের সভাপতি মোঃ মোতাহার হোসেন মোল্লা এবং সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট খন্দকার শামসুল হক রেজা ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ মনোনীত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাছ লাগানো বিলাসিতা নয়। আমাদের প্রয়োজনেই এটা অত্যন্ত জরুরী। নিজেরা গাছ লাগানোর পাশাপাশি গাছ লাগাতে অন্যদের উদ্বুদ্ধ করতে দলের নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি, সরকারী কর্মচারীসহ সমাজের সচেতন মানুষদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। উপকূলীয় অঞ্চলে বেশি করে গাছ লাগানোর পাশাপাশি সেখানে অর্থকরী ফসল লাগানোরও পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, গাছ আমাদের খাদ্য ও জীবনের প্রয়োজনীয় অধিকাংশ উপকরণের যোগান দেয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন যে বাংলাদেশের মতো উর্বর ভূমির একটি দেশের মানুষ না খেয়ে থাকতে পারে না। শেখ হাসিনা বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ে অধিক আক্রান্ত হওয়ায় এসব দুর্যোগের ঝুঁকি থেকে উপকূলীয় অঞ্চলকে রক্ষায় তাঁর সরকার ব্যাপক বৃক্ষরোপণের কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রক্ষায় এর উপকূলে ঝাউবন গড়ে তোলার উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দেশে বনায়নের পরিমাণ ৭ থেকে ১৭ শতাংশ হয়েছে এবং তা ২৫ শতাংশে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ চলছে। কৃষির সম্প্রসারণে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার শিল্পায়নের পাশাপাশি কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করছে। প্রধানমন্ত্রী সবুজ-শ্যামলিমার ঢাকা মহানগরের পুরান বিমানবন্দর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়ক দ্বীপগুলোর কৃষ্ণচূড়ার গাছ কাটার জন্য সব সামরিক একনায়ক বিশেষ করে জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে বলেন, উন্নয়নের নামে সামরিক এক নায়করা সব জলাশয়, পুকুর, খাল-নর্দমা ও প্রাচীন গাছ ধ্বংস করেছে। প্রধানমন্ত্রী ৩১ বছর থেকে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী পরিচালনা ও প্রকৃতির সুরক্ষায় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কৃষক লীগকে ধন্যবাদ জানান। বনায়ন কর্মসূচী জোরদার এবং নিজে গাছ লাগানো ও অন্যকে গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, আমাদের কৃষকরা সব সময় অবহেলিত ছিল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একমাত্র কৃষক দরদী পার্টি। দেশের অগ্রযাত্রায় কৃষক লীগের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের মতো কৃষিনির্ভর দেশে কৃষক সংগঠনগুলোর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, তাঁর সরকার কৃষি গবেষণায় গুরুত্বারোপ করায় দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। সরকার এখন মাংস উৎপাদনে নজর দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সংগঠনকে শক্তিশালী এবং কৃষি উন্নয়নে সরকারের কর্মসূচী তুলে ধরতে কৃষক লীগের প্রতি আহ্বান জানান। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, কেবল আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রেই পরিবেশ ও বৃক্ষরোপণের বিষয়টি উল্লেখ আছে। অন্য কোন দলের ঘোষণাপত্রে নেই। আওয়ামী লীগ পরিবেশ রক্ষায় সব সময় গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বিরোধী দলে থাকা অবস্থায়ও আওয়ামী লীগ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী পালন করেছে। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে পরিবেশ রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
×