ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দাও প্রাণ, দাও অমৃত মৃত জনে দাও শক্তি অপরিমাণ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৬ জুন ২০১৬

দাও প্রাণ, দাও অমৃত মৃত জনে দাও শক্তি অপরিমাণ

মোরসালিন মিজান ॥ ভয়ঙ্কর দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। ধর্মের নামে মানুষ হত্যার পুরনো খেলায় মেতেছে জঙ্গীগোষ্ঠী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক সমাজ রাষ্ট্র বিনির্মাণের যে স্বপ্ন, মুখ থুবড়ে পড়ছে। এই যখন অবস্থা তখন মুক্তির সুমহান পথটির নাম নজরুল। ধর্ম জাত পাতের নামে বজ্জাতী তিনি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ধর্ম ব্যবসায়ীদের খেকশিয়াল আখ্যায়িত করে এদের হুক্কাহুয়া ডাক বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন সাহিত্য ও সঙ্গীতের প্রাণ পুরুষ। রবিবার সেই মহাত্মাকে শ্রদ্ধায় প্রেমে স্মরণ করে নজরুলসঙ্গীত সংস্থা। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় নজরুল সম্মেলনের। একক ও দলীয় সঙ্গীত নৃত্যের পরিবেশনায় মানুষের পক্ষে মানবতার পক্ষে নিজেদের অবস্থান করেন শিল্পীরা। এবারও অনুষ্ঠানের আগে বাড়তি প্রচার ছিল না। কতটা জাঁকজক করা যায়- এ নিয়ে মাথা ঘামাননি আয়োজকরা। তাই সাদামাটা ছিল মঞ্চটি। ব্যাকড্রপে নজরুলের প্রতিকৃতি রেখে নিচের অংশটা সাজানো হয়েছিল ফুল দিয়ে। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে শুরু হয় অনুষ্ঠান। আর তখনই ভাললাগাটা কাজ করতে শুরু করে। সূচনা বক্তব্যে সংস্থা ও সম্মেলনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলেন সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল। বিশিষ্ট শিল্পী বলেন, নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি কা-ারি। মানবতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। মানুষে মানুষে ভালবাসার কথা বলতেন তিনি। সম্প্রীতির বাণী প্রচার করতেন। সঙ্গীতে তাঁর ছিল বিপুল অবদান। বাংলাসঙ্গীতকে দারুণভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। নজরুলের গানের বিশাল ভা-ার থেকে কিছু গান আমরা করতে পেরেছি। করার চেষ্টা করছেন বহু শিল্পী। তবে, প্রায়শই শুদ্ধ বাণী ও সুরে থাকতে পারছি না আমরা। এই বিকৃতি থেকে নজরুলকে বাঁচাতেই নজরুলসঙ্গীত সংস্থা গঠন করা হয়েছিল। এবার পাঁচ বছর পূর্ণ করেছে সংস্থা। এ সময়ের মধ্যে আমরা নজরুলের গান শুদ্ধভাবে গাওয়া, যতেœর সঙ্গে গাওয়ার চেষ্টা করেছি। একইসঙ্গে এ ব্যাপারে সকলকে সচেতন করার কাজ করেছে সংস্থা। ভবিষ্যতেও নজরুলের সুর বাণী ও দর্শন প্রচারে শুদ্ধতাকেই প্রাধান্য দেয়া হবে বলে জানান খ্যাতিমান এই শিল্পী। সংস্থার সভাপতি শিল্পী খালিদ হোসেনের অনুপস্থিতিতে কথা আর এগোয়নি। মূল আয়োজনে মুখর হয়ে ওঠে মঞ্চ। প্রথমেই ছিল সম্মেলক পরিবেশনা। নারী ও পুরুষ শিল্পীরা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে এক সঙ্গে কণ্ঠ ছাড়েন। প্রার্থনার মতো করে গেয়ে যান- দাও শৌর্য, দাও ধৈর্য, হে উদার নাথ,/ দাও প্রাণ/ দাও অমৃত মৃত জনে,/ দাও ভীত-চিত জনে, শক্তি অপরিমাণ...। চমৎকার পরিবেশনা শেষ হতেই নৃত্যায়োজন। মঞ্চে আসে নৃত্যদল ভাবনার তিন শিল্পী। তখন মাইকে বাজছে সেই প্রিয় সুর- সৃজন ছন্দে আনন্দে নাচো নটরাজ/হে মহাকাল প্রলয়-তাল ভোলো ভোলো...। গানটির সঙ্গে অনবদ্য নাচ উৎসবের আমেজ এনে দেয় মিলনায়তনে। অনুষ্ঠানে প্রথম একক গান পরিবেশন করেন পারভীন আক্তার লোটাস। নজরুলের জনপ্রিয় গানগুলো থেকে বেছে নেন তিনি। গানÑ তোমার বুকের ফুলদানিতে ফুল হব বঁধু আমি/ শুকাতে হয় শুকাইব ঐ বুকে ক্ষণেক থামি’...। দ্বিতীয় গানটি করেন দিদারুল করিম। প্রেয়সীর সঙ্গে বিরহের স্মৃতি আওরে তিনি গেয়ে যান- বঁধু, তোমার আমার এই যে বিরহ এক জনমের নহে/তাই যত কাছে পাই তত এ হিয়ায় কি যেন অভাব রহে...। দিপু সমদ্দারের কণ্ঠে ছিল ভালবাসার আকাক্সক্ষা। সেই আকাক্সক্ষার কথা জানিয়ে শিল্পী সুরে সুরে বলেন- আবার ভালোবাসার সাধ জাগে।/সেই পুরাতন চাঁদ আমার চোখে আজ নূতন লাগে...। এভাবে একে একে গান করেন সৈয়দ হোসেন রাজা, বরকত হোসেন, কানিজ হুসনা, মেহফুজ আল ফাহাদ, রওশন আজমিরি খান, বনা রাণী হালদার, তানভীর আহমেদ, শামীমা পারভীন শিমু, সুমন মজুমদার, মোহিত খান, নাহিয়ান সূচী, করিম হাসান খান, মাহমুদুল হাসান, নকনীতা চক্রবর্তী, হাসিনা দিল ফিরোজ, করিম হাসান খান, নিহার দে আকাশ, শেখ শায়লা প্রমুখ। খালিদ হাসান, খায়রুল আনাম শাকিলও গান শুনিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রাখেন। এভাবে গান ও নাচের ছন্দে নজরুলকে সামনে আনেন শিল্পীরা। প্রিয় কবির সৃষ্টির আলোয় উদ্ভাসিত সন্ধাটি সত্যি মনে রাখার মতো।
×