ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফালুজায় অবরোধ দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা মার্কিন কমান্ডারের

দুই বৈরী শক্তির অভিন্ন স্বার্থ

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৩০ মে ২০১৬

দুই বৈরী শক্তির অভিন্ন স্বার্থ

মার্কিন কমান্ডোরা সিরিয়ায় জঙ্গী গ্রুপ ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে রণাঙ্গনের সম্মুখ সারিতে থেকে লড়াই করলেও ইরাকে চিত্রটি অন্য রকম। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের বৈরী ইরান ইরাকী নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। প্রধান সুন্নী অধ্যুষিত ফালুজা শহরটির অবস্থান ইরাকের মধ্যাঞ্চলীয় আনবার প্রদেশে ফোরাত নদীর তীরে। আইএস হটাতে শহরটি ঘিরে এখন তীব্র লড়াই চলছে। খবর এএফপি, বিবিসি ও আলজাজিরা অনলাইনের। আইএস অধিকৃত শহর ফালুজায় ইরাকী বাহিনীর হামলায় ৭০ জঙ্গী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পাঁচদিন আগে ফালুজা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে শুরু হওয়া ইরাকী বাহিনীর অভিযানে সমর্থন দিচ্ছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট। তবে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে রয়েছে ইরান। ইরানের শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা কাসেম সুলায়মানি সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত থেকে ইরাকী বাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন। যুক্তরাষ্ট্র ইরাক সরকারকে পরামর্শ ও সরঞ্জামাদি দিয়ে সাহায্য করলেও যুদ্ধক্ষেত্রে তৎপর ইরাকী বাহিনীর ওপর ইরানের প্রত্যক্ষ প্রভাব বেশি। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উভয় সঙ্কটমূলক। আইএস বিরোধী লড়াই উভয় দেশ এক জায়গায় এসে মিলেছে। ইরাকী বাহিনী ২২ মে থেকে ওই শহরে অভিযান শুরু করেছে। ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে শহরটি আইএসের দখলে। ইরাকে মার্কিন বাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল স্টিভ ওয়ারেন জানিয়েছেন, গত চারদিনে ফালুজায় ২০বার বিমান হামলা চালিয়েছে জোট বাহিনী। গত বুধবার সেখানে আইএস কমান্ডার মাহের আল-বিলাবি নিহত হন। তিনি বলেন, ‘বিলাবি ও অন্যান্য জঙ্গীর মৃত্যুতে আইএস লড়াই বন্ধ না করলেও এটি তাদের জন্য একটি বড় আঘাত।’ এছাড়া এই পুরনো শিয়া-সুন্নী সংঘাত নতুন করে উস্কে দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইরাকী বাহিনী ফালুজা থেকে আইএস হটানোর খুব কাছাকাছি চলে এসেছে বলে রবিরার দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়। ফালুজা অভিযানে ইরাকের শীর্ষ কমান্ডার আবদেল ওয়াহাব আল সাদি রবিবার বলেছেন, পুলিশ এবং উপজাতীয় যোদ্ধারা শহরের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলীয় দুটি ক্যাম্পে পৌঁছে গেছেন। সপ্তাহব্যাপী লড়াই অব্যাহত থাকায় সেখানে মানবিক সঙ্কট ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ৫০ হাজার অধিবাসী অধ্যুষিত শহর থেকে শত শত লোক ইতোমধ্যেই প্রাণভয়ে পালিয়ে গেছে বলে খবর আসতে শুরু করেছে। অবরুদ্ধ শহরটির বাসিন্দারা অনাহারে মারা যাচ্ছে। লড়াইয়ে অংশ নেয়া শিয়া বেসামরিক বাহিনীর নেতা হাদি আল আমিরি বলেছেন ‘ এ অবস্থা বেশিদিন চলবে না। কয়েক সপ্তাহ নয়, কয়েকদিনের মধ্যেই’ চূড়ান্ত লড়াই শুরু হয়ে যাবে’। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ইরাকের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সঙ্গে সরাসরি তিনি কথা বলেন । এ সময় তার পাশে ইরাকী প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদিও উপস্থিত ছিলেন। গত বছর শেষ দিকে আবাদি বলেছিলেন, ২০১৬ সাল আইএসের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় আসতে পারে। দুই বছর আগে ২০১৪ সালে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ দখল করে স্বঘোষিত ‘খিলাফত’ এর ঘোষণা দিয়েছিল আইএস। ওই বছরের জানুয়ারিতে আইএসের হাতে পতন হওয়া প্রথম ইরাকী শহর ছিল ফালুজা। শিয়া ওই কমান্ডার দ্রুত ফালুজা পতন আশা করলেও ইরাকে বহুজাতিক বাহিনীর মার্কিন কমান্ডের দায়িত্বে থাকা লেফটেনেন্ট জেনারেল ম্যাক ফারলান্ড মনে করেন লড়াই অনেকদিন চলবে। লড়াই দীর্ঘায়িত হলে সঙ্কটের মুখে পড়বে ইরাকের দুর্বল সরকার। গত সপ্তাহে তিনি আমেরিকার স্টার্স এ্যান্ড স্ট্রাইপ সাময়িকীকে দেয়া সাক্ষাতকারে স্বীকার করেন ফালুজার বর্তমান লড়াই তাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। শহরের বাসিন্দাদের বড় অংশ আইএসকে আদর্শিকভাবে সমর্থন করে। ইরাকী বাহিনী অনেকটা আকস্মিকভাবেই ওই শহরে অভিযান শুরু করে। এর আগে রামাদি থেকে আইএসকে উৎখাত করতে ইরাকী বাহিনীর দু’সপ্তাহ লেগেছিল। আইএসের হাতে এখনও ইরাকের যে দুটি বড় শহর রয়েছে রাজধানী বাগদাদ থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ফালুজা তার একটি।
×