ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী বাজেটে ১৫% ভ্যাট বহাল থাকবে ॥ মুহিত

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

আগামী বাজেটে ১৫% ভ্যাট বহাল থাকবে ॥ মুহিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, ঘোষণা অনুযায়ী নতুন ভ্যাট আইন জুলাই মাস থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। তবে আসছে বাজেটে ভ্যাটের হার পুনর্বিন্যাসের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের স্বার্থে সø্যাবভিত্তিক ভ্যাট আদায়ের প্রক্রিয়া রহিত করে প্যাকেজ ভ্যাট বহাল রাখতে হবে। এছাড়া নতুন ভ্যাট আইনে সব ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ের পরিবর্তে ভিন্ন ভিন্ন হারে ভ্যাট আরোপ এবং নতুন নতুন ভ্যাটদাতা চিহ্নিত করে ভ্যাটের পরিধি সম্প্রসারণের আহ্বান জানান তারা। একই সঙ্গে খাতভিত্তিক কিছু খাতে নির্দিষ্ট এবং কিছু খাতে বিক্রির ওপর ভ্যাট আরোপ করাসহ কিছু খাতকে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার দাবি রয়েছে ব্যবসায়ীদের। একেবারে ক্ষুদ্র ব্যবসা পর্যায়ে ভ্যাট আরোপের বিরোধিতা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর সোনারগাঁ হোটেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও এফবিসিসিআইয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পরামর্শক কমিটির ৩৭তম সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, নতুন আইনে সর্বক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর করা হবে। কিছু দিন এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি সরকারের শেষ সময় ভ্যাট কার্যকর ভিন্ন কাঠামোতে নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর রয়েছে। আগামী বাজেটের আকার হবে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে বেশি বরাদ্দ থাকবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদের সভাপতিত্বে ওই সভায় অর্থমন্ত্রী বলেন, নতুন ভ্যাট আইন প্রথমে শুরু হয় ফ্রান্সে এরপর বিট্রেনে। ভ্যাট হচ্ছে নতুন কর। ফলে কিছু বিবর্তন হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের ইচ্ছা ভিন্ন কাঠামোর ভ্যাট বাস্তবায়ন। তবে আমার নিজের ইচ্ছা হচ্ছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর রাখার। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন দেশে এক স্তর ভ্যাট রেট কার্যকর আছে। আমাদের দেশেও সে রকম ভ্যাটের হার হবে। তবে এ বছর আমরা ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কার্যকর করব। তিনি বলেন, আমরা আসলে হিসাব রাখতে পছন্দ করি না। আপনি নিজের হিসাব ঠিকমতো রাখলে ভ্যাট নিয়ে কোন চিন্তার কারণ নেই। হিসাব রাখলে নিজের ও দেশের উভয়ের লাভ। আপনারা ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট মেনে নেন। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি সরকারের শেষ সময় ভিন্ন কাঠামোর ভ্যাট প্রণয়ন করব। এক সময় সেল ট্যাক্স ছিল। এখনও তা কিছু জায়গা আছে। তবে সেটি বড় ধরনের আয়ের উৎস নয়। মুহিত বলেন, সব কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। এক সময় ছিল প্রধান রাজস্ব আয়ের উৎস শুল্ক এবং সর্বনিম্ন ছিল আয়কর। এখন আয়কর ও কর্পোরেট কর হচ্ছে প্রধান আয়ের উৎস। এছাড়া এক সময় উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন বাজেটের তিনগুণ বেশি আনা হতো বিদেশী সাহায্য। খাদ্যসহ অন্যান্য খাতে এ সহায়তা আসত। সেখান থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে এসেছে। আজকে বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ কমে জিডিপির মাত্র ২ শতাংশে এসেছে। অবশ্য এটি শুনতে ভাল লাগে যখন কেউ বলে বাংলাদেশে বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ কমছে। এজন্য এটি নিয়ে এখন গর্ব করি। এ ক্ষেত্রে বেসরকারী খাতের অবদানও রয়েছে। তিনি বলেন, কৃষি একটি বেসরকারী খাত। এ খাতের অবদান অনেক বেশি। ব্যবসায়ীদের অবদান রয়েছে। এক সময় বাজেট আলোচনার জন্য কয়েকজন ব্যবসায়ীকে পাওয়া যেত। আর এখন স্থান দেয়া যায় না। অবশ্য বেসরকারী খাতের অবদান রয়েছে। বিদ্যুত নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমার স্বপ্ন হচ্ছে ২০১৮ সালের পর বিদ্যুতের কোন ডিস্ট্রাব থাকবে না। বিদ্যুত নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। কারণ বিদ্যুত ছাড়া কোন বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। ফলে জাতীয়ভাবে তখন চাহিদা বাড়ে। এর উৎপাদনও বাড়ে। আগামী শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বেশি বরাদ্দ দিতে চাই। এতে কিছুটা হলেও মুখ রক্ষা করতে পারব। এর আগে পরিবহন ও বিদ্যুত খাতে বেশি বরাদ্দ দেয়া হতো। ওই বৈঠক পরিচালনা করেন এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান। বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, এফসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট আবদুল মাতলুব আহমাদ প্রমুখ। এফবিবিসিসিআইয়ের ৪৪৭টি প্রস্তাব ॥ মূলধনী বিনিয়োগকে উৎসাহ দিতে ও অর্থপাচার ঠেকাতে আগামী অর্থবছর বাজেটে অপ্রদর্শিত আয়ের বৈধ করার সুযোগের দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সংগঠনটির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ভবিষ্যতে রাজস্ব আয় ও উৎপাদনমুখী শিল্পখাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হবে। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ বলেন, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে আগে সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্যান্য সংস্থার হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র তুলে দিতে হবে। তার এই বক্তব্য সমর্থন করে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে সন্ত্রাস নির্মূলে সরকার আন্তরিক। সরকার সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। সভায় ভ্যাটে (মূসক) ৮৪টি, আয়করে ১২৪টি ও শুল্কে ২৩৯টিসহ মোট ৪৪৭টি প্রস্তাব দিয়েছে এফবিসিসিআই। প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, আবাসন খাতের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ আরও ৫ থেকে ১০ বছর দেয়া উচিত। এছাড়া ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা ও অন্যান্য করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি, কর্পোরেট করহার পুনর্নির্ধারণেরও প্রস্তাব করা হয়েছে।
×