ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চুনাপাথর খনি

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২৪ এপ্রিল ২০১৬

চুনাপাথর খনি

পঞ্চাশ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সন্ধান মিলেছে দেশের সবচেয়ে বড় চুনাপথরের খনির। বাণিজ্যিক উত্তোলন লাভজনক প্রমাণিত হলে এই খনি থেকেই দেশের সকল সিমেন্ট কারখানার চাহিদা মেটানো যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, সিমেন্টের এই কাঁচামাল আগামী দেড় শ’ বছরেও ফুরাবে না। ফলে বিদেশ থেকে আর চুনাপাথর আমদানি করতে হবে না। এতে বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হতে পারে। এই চুনাপাথর বিদেশেও রফতানি করা যাবে। বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের বিজ্ঞানীরা এই খানি আবিষ্কার করেছেন নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামে। ভূ-পৃষ্ঠের দুই হাজার দুই শ’ চৌদ্দ ফুট মাটির গভীরে পুরু একটি চুনাপাথরের স্তর আবিষ্কৃত হয়েছে। ওই স্তর থেকে আরও গভীরে বিস্তৃত রয়েছে খনিটি। এরই মধ্যে ৬১ ফুট পর্যন্ত খনন করে চুনাপাথর মিলেছে। এই খনিজ সম্পদ বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে আরও বছরদুয়েক সময় নেবে। কয়লা অনুসন্ধানের জন্য খনন কাজ শুরুর পর চুনাপাথরের সন্ধান মেলে। চুনাপাথরের নিচের স্তরে থাকে কয়লা। যার জন্য খনন কাজ চালু রাখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এলাকাজুড়ে দুই হাজার মিলিয়ন মেট্রিক টনেরও বেশি চুনাপাথরের মজুদ রয়েছে। দেশে বিদ্যমান ত্রিশটিরও বেশি সিমেন্ট কারখানায় বছরে উৎপাদন হয় প্রায় দু’কোটি টন সিমেন্ট। বিশুদ্ধ চুনাপাথরের রাসায়নিক নাম ক্যালসিয়াম কার্বনেট। প্রকৃতিতে বিশুদ্ধ চুনাপাথর খুব কম পাওয়া যায়। বালি, কাদা ইত্যাদির মিশ্রণ, লোহা, এ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সিলিকন, ফসফরাস এবং সালফার ইত্যাদি মৌলে চুনাপাথর অপদ্রব্য হিসেবে মিশ্রিত থাকে। চুনাপাথরের প্রধানত চুন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। সিমেন্টের মূল উপাদান হচ্ছে চুনাপাথর। নির্মাণ, রাসায়নিক ও কাঁচা শিল্পে চুনাপাথর ব্যবহার করা হয়। ধাতু নিষ্কাশনে এবং চিনি শিল্পেও চুনাপাথর ব্যবহার করা হয়। ভূ-তাত্ত্বিকদের মতে, এ পর্যন্ত একটা ড্রিল করা হয়েছে খনিতে। আরও ৪টি ড্রিল করা হবে। প্রথম ড্রিলিংয়ে যে নমুনা মিলেছে তার মান খুবই ভাল। সুড়ঙ্গের মাধ্যমে তা উত্তোলন করা হবে। চুনাপাথর সন্ধানের সংবাদে স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করলেও জমির ন্যায্যমূল্য পাওয়া না পাওয়া নিয়ে তারা শঙ্কিত। ঘরবাড়ি, পুকুর, ফসলী জমিসহ সকল স্থাবর সম্পত্তির বিনিময়ে কী পাবে, তারা জানতে চায়। নামমাত্র ক্ষতিপূরণ দিয়ে উচ্ছেদ করা হবে না এমন আশ্বাসও পায়। পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আত্মকর্মসংস্থানের বিষয়ে সরকারী মনোভাব ও তাদের অজানা। তবে সরকার এখনও এই বিষয়টি নিয়ে ভাবছে, তা মনে হয় না। পুরো জরিপের পর হয়ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এর আগেও দেশে কয়েকটি খনি পাওয়া গেলেও সেসব খনি থেকে শেষ পর্যন্ত চুনাপাথর উত্তোলন করা সম্ভব হয়নি। ১৯৫৯ সালে বগুড়ার কুচমায় ১ হাজার ৭শ’ ৭৪ মিটার গভীরে দেশের প্রথম চুনাপাথর খনির সন্ধান পাওয়া যায়। তবে সেখানে আর উত্তোলন হয়নি। ষাটের দশক থেকে বিভিন্ন সময়ে খনন চালিয়ে জয়পুরহাটের জামালগঞ্জে ৬ দশমিক ৪৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় মাটির ৫শ’ ৪১ মিটার গভীরে ২৭০ মিলিয়ন টন চুনাপাথরের মজুদ পাওয়া গেলেও উত্তোলন ব্যয়বহুল হওয়ায় তা পরিত্যক্ত রয়েছে। সর্বশেষ ২০১২ সালে জয়পুরহাটেরই পাঁচবিবিতে মাটির প্রায় ৫শ’ ফুট গভীরে ১শ’ মিলিয়ন টন চুনাপাথরের মজুদ পাওয়া যায়। সেই চুনাপাথরও আর উত্তোলন শুরু হয়নি। ১৯৬১ সালে সুনামগঞ্জের বাগালিবাজার-টাকেরঘাট-ভাঙ্গেরঘাট এলাকায় চুনাপাথরের মজুদ পাওয়া যায়। ১৯৬৫ সালে ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে সরবরাহের জন্য টাকেরঘাটেই প্রথমবারের মতো চুনাপাথর উত্তোলন শুরু হয়। তবে সেই মজুদ শেষ হয়ে গেছে। চুনাপাথর আবিষ্কার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও প্রবৃদ্ধির হার বাড়াতে সহায়ক হবে। দেশ উন্নয়নের পথে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। যথাযথ প্রক্রিয়ায় উত্তোলনের কাজ হোক- এটাই প্রাথমিক প্রত্যাশা।
×