ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনা হত্যায় ব্যর্থ হয়ে তারা জয়কে হত্যার পরিকল্পনা করে

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৮ এপ্রিল ২০১৬

শেখ হাসিনা হত্যায় ব্যর্থ হয়ে তারা জয়কে হত্যার পরিকল্পনা করে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার মুখ্য পরিকল্পনা হয় ঢাকায়। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এই পরিকল্পনায় বিএনপির পররাষ্ট্র ও কূটনৈতিকবিষয়ক সাংবাদিক শফিক রেহমানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন আরও কয়েক বিএনপির নেতা ও বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ী। ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়েনের বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছিল। বিএনপির পররাষ্ট্র ও কূটনৈতিকবিষয়ক সাংবাদিক শফিক রেহমান তখন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে যে গিয়েছিলেন তার পাসপোর্ট পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। তার মোবাইল ফোনের কললিস্ট পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। জয়কে অপহরণ ও হত্যার চেষ্টার মামলায় যুক্তরাষ্ট্রে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে রিজভী আহম্মেদ সিজার ও অন্যদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে সাংবাদিক শফিক রেহমানকে। আদালতের আদেশে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে শফিক রেহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবি সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ডিবি সূত্র জানান, দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বার বার হত্যার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তার একমাত্র ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপরহরণ ও হত্যার চেষ্টার পরিকল্পনা করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই ধরনের ঘটনার মধ্য দিয়ে রাজনীতি থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় করে দেয়ার একটা চেষ্টার বিষয়ে পাওয়া তথ্যাদি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে সাংবাদিক শফিক রেহমানকে। একমাত্র ছেলেকে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে ঢাকায় বিচারের উদ্দেশ্যে কোন সাক্ষ্য, প্রমাণ, আলামত থাকবে না এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছেলে হারানোর বেদনায় মনোবল ভেঙ্গে স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে উদ্যোগী হতে পারেন। এই পরিকল্পনাটিতে বিএনপির পররাষ্ট্র ও কূটনৈতিকবিষয়ক সাংবাদিক শফিক রেহমানের সঙ্গে আর কোন্ কোন্ বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন সেই বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে সাংবাদিক শফিক রেহমানকে। ডিবি সূত্র জানায়, শফিক রেহমানকে বাসা থেকেই বিদেশী আইটেমের খাবার দেয়া হচ্ছে। শনিবার বিকেলে তাকে রিমান্ডে নিয়ে আসার পর রাতে ও রবিবার দিনে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি সুস্থ ও হাসিখুশি আছেন। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে খুবই সহযোগিতা করছেন তিনি। তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে কিছু প্রমাণ ও আলামত তার সামনে তুলে ধরা হয়। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে তার সক্রিয়তার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। ডিবি সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে রিজভী আহম্মেদ সিজারের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে সাংবাদিক শফিক রেহমানকে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) শনিবার সকালে সাংবাদিক শফিক রেহমানকে তার নিজ বাসভবন ইস্কাটন থেকে গ্রেফতার করে আদালতের আদেশে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রবিবার দ্বিতীয় দিনে জয়কে অপহরণ ও হত্যার চেষ্টার সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এই বিষয়ে তিনি এখনও মুখ খোলেননি বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনার জন্য মামলা ও বিচার অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের রায়েই বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে রিজভী আহম্মেদ সিজারের ৪২ মাসের কারাদ- হয়। কারাদ-প্রাপ্ত রিজভী আহম্মেদ সিজারের বন্ধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) প্রাক্তন স্পেশাল এজেন্ট রবার্ট লাস্টিকের বিচার অনুষ্ঠিত হয়। এ মামলায় লাস্টিকের বন্ধু জোহান্স থ্যালারের আড়াই বছর সাজা দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। মামলার এজাহারনামীয় আসামি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। জয়কে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা হয়েছিল নিউইয়র্কে এবং সেখানে এই মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে জয়কে অপহরণ ও হত্যার চেষ্টার পরিকল্পনার যে ঢাকায় ছক কষা হয়েছে সেই বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে সাংবাদিক শফিক রেহমানকে। ডিবি সূত্র জানায়, সাংবাদিক হওয়ার কারণে তাকে কেউই সন্দেহ করবেন না এবং তিনি সন্দেহের উর্ধে থেকে জয় অপহরণ ও হত্যার চেষ্টা বাস্তবায়নের সুবিধা নিতে পারবেন মনে করেই এই পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন শফিক রেহমান। ২০১১ সালের আগ থেকেই সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একমাত্র পুত্র ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় বসবাস করেন। সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহের জন্য রিজভী আহম্মেদ সিজারের কাছ থেকে এফবিআইয়ের প্রাক্তন স্পেশাল এজেন্ট লাস্টিক ও তার বন্ধু থ্যালার কমপক্ষে ১ হাজার ইউএস ডলার গ্রহণ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় তাকে অপহরণ করে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ঢাকার পল্টনে বিএনপি অঙ্গ সংগঠন জাসাস অফিসে বৈঠক হয়। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক নেতা ও জোটপন্থী ব্যবসায়ীরা এই পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় শফিক রেহমানকে। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে জয় অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় সাজা হওয়ার পর তদন্তে পাওয়া তথ্যের বিষয়টি ঢাকায় আদালতকে জানানো হয়। প্রাপ্ততথ্যের ভিত্তিতে আদালতের কাছে মামলা দায়েরের অনুমতি চাওয়া হয়। আদালত মামলা দায়েরের অনুমতি দেয়। সেই অনুমতির ভিত্তিতেই পল্টন থানায় মামলা দায়ের হওয়ার পর গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে সাংবাদিক শফিক রেহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, শফিক রেহমান সাংবাদিকতার চেয়ে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে বেশি সক্রিয়। গত মার্চ মাসে বিএনপির যে কাউন্সিল হয়েছে তাতে পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন শফিক রেহমান এবং সরকারবিরোধী কর্মকা-ের জন্য বিদেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। বর্তমান সরকারবিরোধী বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের প্রতি মারাত্মক বিদ্বেষ পোষণকারী হয়েই জয় অপহরণ ও হত্যার চেষ্টার পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত হন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে থলের বিড়াল বের হয়ে আসতে পারে বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা। ব্রিটিশ হাইকমিশনে স্ত্রী তালেয়া রেহমান ॥ সাংবাদিক শফিক রেহমানের গ্রেফতারের বিষয়টি ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন তার স্ত্রী তালেয়া রেহমান। জবাবে ব্রিটিশ হাইকমিশন জানিয়েছে, তারাও বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। রবিবার দুপুরে রাজধানীর বারিধারায় অবস্থিত ব্রিটিশ হাইকমিশনে যান তালেয়া রেহমান। তিনি শফিক রেহমানের গ্রেফতারের বিষয় নিয়ে হাইকমিশনের পলিটিক্যাল ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে কথা বলেন এবং যে মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে সে সংক্রান্ত কাগজপত্রও তাদের কাছে পেশ করেন। তিনি বলেন, ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে শফিক রেহমানকে রাজনৈতিকভাবে কোন হয়রানি করা হচ্ছে কিনা কিংবা গ্রেফতার থাকাবস্থায় তার প্রতি অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে কিনা, সেই বিষয়গুলো দেখার জন্য হাইকমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তালেয়া রেহমান। জবাবে হাইকমিশন জানিয়েছে, তারাও বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছেন।
×