যাদের কাছে জীবন মানে অন্যকে অনুভব করা। অপরের জন্য যারা কিছু করার দায়বদ্ধতা অনুভব করে তারাই হয় মহৎ, ইতিহাস তাদেরকে সম্মান করে সহস্র্র, শত শত বছর। কারণ এমন মানুষদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ পাকও পছন্দ করেন, তাই তারাই হন ইতিহাসের সম্মানিত অমর।
শঠতা, চালাকি, ধূর্ততা, মিথ্যা আর ভাল ভাল কথাও বলে নিজের স্বার্থ আর আধিপত্য বিস্তারের জন্য। পেছনে বদ ও খারাপ উদ্দেশ্য। সত্যিকারে এরাই ঘৃণিত, ইতিহাসের কলঙ্ক। যাদের সুন্দর কথাও মানুষের কাছে ঘৃণায় ভরে ওঠে, মানুষ জানে এ সব ধোঁকা। আর ধোঁকাবাজি, মিথ্যাকে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ পাকও পছন্দ করে না। এদের নাম ইতিহাসের পাতায় ঘৃণার অক্ষরে লেখা থাকে। এদেরকে অমর বলে না। এদের কারণে সমাজ দেশ জাতির ভেতরে খারাপের প্রভাব বিকশিত হয়।
কিছু কিছু মানুষের মাধ্যমে যুগে যুগে একেক জাতি, দেশ, সমাজ, পৃথিবী উপকৃত হয়েছে। মহানুভবতার শেখরে যারা উঠতে পেরেছে তারা কোন বিনিময় ছাড়াই মানুষকে অনুভব করেছেন, মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন।
সমাজের বা রাষ্ট্রের বড় বড় মানুষের বড় বড় বিশৃঙ্খলা কিন্তু ছোট ছোট মানুষের ওপর অনেক প্রভাব ফেলে। যার ফলে বড়-ছোট সর্বোপরি সর্বস্তরে অশান্ত পরিবেশ তৈরি হয়। আজ যে আমাদের সমাজে মানসিক অশান্তি বিরাজ করছে, সব জায়গায় আতঙ্ক, ভয়, সন্দেহ তা কিন্তু বড় বড় মানুষের বড় বড় নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করার প্রতিবিম্ব, ছোটদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে।
যা আমাদের ছোট বেলায় অকল্পনীয় ছিল তা আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম বাস্তবে দেখেছে।
এ বছর শোনা যায়নি কিন্তু গত কয়েক বছর প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার একটা হিড়িক ছিল। খাবারের ভেতরে ভেজাল যা মানুষ কল্পনা করে না, তা আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত। ফেস বুকে ছবি দেখা যায় তরমুজের ভেতরে ইঞ্জেকশন দিয়ে লাল পানি দেয়া হচ্ছে।
বাইরে মুরগি খাওয়া তো অনেকদিন আগেই ছেড়েছি, এখন মুরগি কিনতেও খুব সতর্ক থাকতে হয়, জবাই করে কাটতে কাটতে না মড়া একটা ঢুকিয়ে দেয়।
আগে দেখেছি শিক্ষক বাবা-মা তুল্য অথচ এখন তা আর বলা যাবে না। স্বার্থ আর অতি ভোগ মানসিকতা সব জায়গায় অমানবতার আঁচড়ে দাগ কেটে কেটে সমাজকে খ--বিখ- করে দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে এ লিস্ট কত বড় তা বোধ হয় আমরা সবাই জানি।
মাদক আজ কত তরুণকে ধ্বংস করছে?
এভাবে কি আমাদের সমাজকে তুলনা করা যায় বা বলা যায়? কখনও কেউ অতি অনেক ধনীর দুঃশ্চরিত্র সাহেবজাদাকে কেউ অতি গরিব স্বজ্জন মেয়ের জামাই বানাবে না।
অনেক উন্নয়ন (ধনী) কিন্ত তা যেমন অর্থহীন এমনিভাবে অনেক বাহ্নিক উন্নতি মানবতা, শৃঙ্খলা ছাড়া, নিয়মনীতি ছাড়া অর্থহীন না হয়ে যায়।
দানবীর হাজী মোহাম্মদ মহসিন তার দানের কথা জগদ্বিখ্যাত। চোর ঘরে ঢুকেছে , ধরা পড়েছে, উনি জিজ্ঞেস করলেন কেন চুরি করতে এসেছ, চোর বলল পেটের দায়ে চুরি করতে এসেছি। তখন হাজী মোঃ মহসিন বললেন এটা আমারই দোষ, ব্যর্থতা।
আমি প্রতিবেশীর খবর নেইনি, তাই ও অভাবের তাড়নায় চুরি করতে এসেছে। তারপর তাকে নিজের থেকে আরও কিছু দিয়ে দিলেন। আসলে ইতিহাসের এমন মহৎ কাজগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো যেন আমরাও আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও কিছু কিছু এমন কাজ করার চেষ্টা করতে পারি। এতটুকু অল্প চেষ্টাই শুধু আমাদের মতো ছোট ছোট মানুষ করতে পারে। ছোট ছোট চেষ্টার দ্বারা যদি বড় বড় মানুষদের কোন অনুভূতি জাগ্রত হয় তাহলে আমরা হয়ত আবার আমাদের মাঝে সেই অতীত ফিরে পাব যখন সমাজ বিশৃঙ্খলা থেকে স্বস্থিতে ফিরে আসবে।
তাই আজও কি সময় হয়নি যেখানে আমরা সবাই আজ সবার দিকে তাকিয়ে, পরবর্তী প্রজন্মকে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার পরিবেশ দেয়ার তাগিদ থেকে স্বাধীনভাবে সত্যগুলো তুলে ধরব?
কিছু দিন আগে একটি টিভি অনুষ্ঠানে দেখা গেছে একজন বৃদ্ধ ভিক্ষা করে জীবনযাপন করত। ভিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে তালের বিচিও ভিক্ষা নিত। এভাবে রাজশাহী-নওগাঁ রাস্তার পাশে শত শত তালগাছ উনি লাগিয়েছেন, এখন সেগুলো অনেক বড় হয়েছে। মানুষ ছায়া পাচ্ছে আর প্রকৃতির সৌন্দর্য মানুষ উপভোগ করছে। এটাই তো হলো ছোট ছোট মানুষের বড় বড় কাজ। তাই আমাদের ইচ্ছা যা মানবিক তা ছোট ছোট হলেও বড় বড় অবদান সমাজে রাখতে পারে।
ছবি : আরিফ আহমেদ
মডেল : বাঁধন ও তার মেয়ে