ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের ভূখণ্ডে যুক্ত ॥ ফলছে নানা জাতের সবজি

ধরলার চরে জেগে উঠেছে কয়েক হাজার একর জমি, বিশাল চর

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৮ মার্চ ২০১৬

ধরলার চরে জেগে উঠেছে কয়েক হাজার একর জমি, বিশাল চর

জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট থেকে ॥ জেলার মোগলহাট সীমান্তে ধরলা নদীর ডান তীর ঘেঁষে জেগে উঠছে বিশাল চর। যেন বাংলাদেশের ভূখ-ে জেগে উঠছে আরেক বাংলাদেশ। এখানে এখন চাষাবাদ হচ্ছে রকমারি ফসল। ফলে বর্তমান সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার সুফল মোগলহাটের ঘরে ঘরে পৌঁছাতে শুরু করেছে। কয়েক বছরের মধ্যে ধরলা নদীতে কয়েক হাজার বিঘা জমি ভেসে উঠেছে। এখানে স্থায়ীভাবে মানুষ বসবাস শুরু করেছে। কোন কোন চরে নানা ধরনের রকমারি ফসল ফলাচ্ছে। নতুন জেগে ওঠা চরে এখনও বসতি স্থাপন হয়নি। তবে ধান, গম, ভুট্টা, তরমুজ, মিষ্টি কুমড়া, শিম, আলু, এসকোয়াশসহ নানা সবজি ও খাদ্যশস্য চাষ হয়েছে। ফলন হয়েছে বাম্পার। জানা গেছে, কয়েক বছর আগে মোগলহাট সীমান্তে ধরলা নদী তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়। প্রতিদিন শত শত বিঘা ফসলের মাঠ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। দেখতে দেখতে মোগলহাটের কর্ণপুর গ্রামটি নদীগর্ভে চলে যায়। মানুষ গৃহহীন হয়ে রেললাইনের ধারে আশ্রয় নেয়। ফলে এখানে জেঁকে বসে দারিদ্র্য। এমনকি নদী ভাঙতে ভাঙতে মোগলহাট বিজিবি ক্যাম্পের পাশে চলে আসে। সরকার বিজিবি ক্যাম্প স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সময় জনকণ্ঠ পত্রিকায় নদী ভাঙ্গনের ওপর সচিত্র কয়েকটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম আঙ্গরপোতা ছিটমহল পরিদর্শনে আসেন। তিনিই একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি ইউনিয়ন পর্যায়ের পানবাড়ি বিওপি ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এই সুযোগে বিজিবি পাটগ্রামের বুড়ি তিস্তা ও ধরলা নদী ভাঙ্গনের তথ্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেন তৎকালীন রংপুর বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল নেয়ামুল ইসলাম ফাতেমী। এরপর নদী ভাঙ্গন ও বিজিবি ক্যাম্প রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে ধরলা নদীর ভাঙ্গন সম্পর্কে তথ্য উত্থাপন করে। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশের ভূখ- নদীভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষায় যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। প্রায় দেড় শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন। বাঁধ নির্মাণ শেষ হয়েছে। তবে বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ ও নতুন করে বাঁধটির কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ চলমান রয়েছে। সীমান্তঘেঁষা ধরলা নদীতে জেগে ওঠা চরগুলো বাংলাদেশের ভূখ- হয়ে যাচ্ছে। এসব চর হতে প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার দূরে ভারতীয় বিএসএফ ক্যাম্প। তবে কোন কোন চরে ভারতীয় গ্রামের নদীভাঙ্গন কবলিত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। আবার মাফিয়া চক্রও আশ্রয় নিয়েছে। মাফিয়ারা এই সব চরে আশ্রয় নিয়ে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে। মোগলহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, কর্ণপুর গ্রামটির বেশিরভাগ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। নদী ভাঙ্গন রোধে ও নদী ভাঙ্গা মানুষদের কল্যাণে জনকণ্ঠ পত্রিকায় কয়েক বছর ধরে মানবিক আবেদন জানিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ হয়। এতে সারাদেশে এই সীমান্ত গ্রামটি সম্পর্কে জনমত তৈরি হয়। যার কারণে কোন শিল্প কলকারখানা ও মূল্যবান সম্পদ না থাকার পরেও সরকার শতকোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ করেছে। হাজার হাজার একর জমি ভেসে উঠেছে। চাষাবাদ হচ্ছে। দেশের ভূখ-ে যোগ হয়েছে। বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার মোঃ আব্দুল কাদের জানান, সীমান্ত গ্রামে মানুষ খুবই দরিদ্র। চরগুলো ভেসে ওঠায় মানুষ শস্যচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। পেয়েছে আর্থিক সচ্ছলতা। বাঁধের ফলে ঝুঁকির মধ্যে থাকা মোগলহাট বিওপি ক্যাম্পটিও নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকির হাত হতে রক্ষা পেয়েছে বরং এই বাঁধটি এখন পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ধরলা নদীর সৌন্দর্য দেখতে শহর হতে সপরিবারে প্রতিদিন শত শত মানুষ এখানে বেড়াতে আসছে। এসব মানুষকে নিরাপত্তা দিতে সাদা পোশাকে বিজিবির গোয়েন্দা ইউনিট কাজ করছে। এখানে পর্যটকরা এসে শুধু নদীর দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। পর্যটকদের বিশ্রাম ও জলখাবারের কোন ব্যবস্থা এখানে গড়ে ওঠেনি। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানে জলখাবার কেন্দ্র ও বিশ্রাম কেন্দ্র গড়ে তোলা যাবে।
×