ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এআইইউবির ছাত্র পাঁচ মাস ধরে নিখোঁজ, উদ্ধারে হস্তক্ষেপ কামনা

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১৩ মার্চ ২০১৬

এআইইউবির ছাত্র পাঁচ মাস ধরে নিখোঁজ, উদ্ধারে হস্তক্ষেপ কামনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাঁচ মাসেও রাজধানী বনানীর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এআইইউবির ইলেকট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেকট্রনিক বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র আসিফ ইমরানের (১৯) খোঁজ মেলেনি। তাকে উদ্ধারের দাবি জানিয়েছে তার পরিবার। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ পুলিশ প্রধানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। শনিবার সকালে সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন বহুমুখী সমবায় সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ইমরানের পরিবারের সদস্যরা এ দাবি জানান। লিখিত বক্তব্যে ইমরানের বাবা লুৎফর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, গত বছরের ৭ অক্টোবর উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের বাসা থেকে ইমরানাকে তার বন্ধু গোলাম মোস্তফা আদর পূর্বপরিকল্পিতভাবে বেড়ানোর কথা বলে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে যায়। এরপর ইমরান আর ফেরেনি। সে সময় তিনি ও তার স্ত্রী হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে ছিলেন। নিখোঁজ হওয়ার দু’দিন পর ৯ অক্টোবর ইমরানের বড় বোন নাজিয়া কাজল উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এ ঘটনায় অপহরণের মামলা করতে গেলে উত্তরা পশ্চিম থানা প্রথমে মামলা নেয়নি। পরে আদালতের নির্দেশে ১ নবেম্বর ওই থানা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলমগীর ইসলামসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা নেয়। অপর তিন আসামি হলো গোলাম মোস্তফা আদর, গোলাম মোহাম্মদ কালু ও মোঃ শাকিল। গত নবেম্বরে পুলিশ চারজনকে গ্রেফতর করে। তাদের মধ্যে গোলাম মোস্তফা ও শাকিল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। জবানবন্দীতে তারা বলে, আলমগীর ইসলামের পরিকল্পনা মতে তারা ইমরানকে অপহরণ করে নিয়ে যান। সংবাদ সম্মেলনে লুৎফর রহমান আরও জানান, চার আসামির তথ্যের ভিত্তিতে ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলমগীর ইসলামের ভাতিজা রিয়াজুল ইসলাম ও রাফসান জানিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের কিছুদিনের মধ্যেই রিয়াজুল ইসলাম জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে আসে। রাফসান জানিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অন্যরা কারাগারে আছে। লুৎফর রহমান জানান, থানায় জিডি করার পর গোলাম মোস্তফা ও গোলাম মোহাম্মদ কালু সশরীরে ও মোবাইল ফোনে দুই দফায় ১০ লাখ ও ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল। তিনি জানান, আসামিরা সব গ্রেফতার হলেও তার ছেলেকে পুলিশ উদ্ধার করতে পারছে না। পুলিশ বলছে, ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলমগীর ইসলামের লোকদের কাছেই ইমরান আছে। কেন উদ্ধার করা হচ্ছে না। এর কোন জবাব দিতে পারছে না পুলিশ। কান্নাজড়িত কণ্ঠে লুৎফর রহমান জানান, একমাত্র ছেলে ইমরানকে হারিয়ে তার মা নাদিরা বেগম পাগলপ্রায়। তিনি দিনের পর দিন পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এদিকে ইমরানের শোকে কয়েক দিন আগে তার দাদি মারা গেছেন। এ অবস্থায় ছেলেকে উদ্ধারে তিনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ পুলিশ প্রধানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ইমরানের মা নাদিরা বেগম, বড় বোন নাজিয়া কাজল, খালু ফজলার হোসেন ও খালা রোকেয়া বেগম। এ মামলাটি প্রথমে উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ তদন্ত করে। পরে তদন্তভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আতাউর রহমান চৌধুরী জানান, আসামিরা জবানবন্দীতে বলেছে, ইমরান ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলমগীরের লোকদের হেফাজতে আছে। তথ্যপ্রযুক্তি ও পারিপার্শ্বিক তদন্তে জানা গেছে, ইমরান এখনও আলমগীরের লোকদের কাছেই আছে। তাকে উদ্ধারের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
×