ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিনারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্বাস্থ্য খাতকে সমন্বিত উদ্যোগে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

স্বাস্থ্য খাতকে সমন্বিত উদ্যোগে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সমন্বিত উদ্যোগে স্বাস্থ্য খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, সীমিত সম্পদ ও নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের স্বাস্থ্য খাতের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে শুরু হয়েছে ইতিবাচক আলোচনা। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আস্থা খুঁজে পেয়েছে দেশের মানুষ। দেশের আয়তনের তুলনায় অধিক জনসংখ্যা, সীমিত সম্পদ, দারিদ্র্যসহ বেশ কয়েকটি কারণে স্বাস্থ্য খাতের শতভাগ সফলতা অর্জন অনেক সময় ব্যাহত হয়ে থাকে। সরকারী ও বেসরকারীভাবে সমন্বিত উদ্যোগে প্রত্যাশিত সফলতা আনা সম্ভব। স্বাস্থ্যের এই বহুমুখী কর্ম পরিকল্পনা নিছক রাষ্ট্রের দায়িত্ব, এভাবে চিন্তার কোন অবকাশ নেই। ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সক্রিয় হওয়াটাই জরুরী। স্বাস্থ্য খাতের সমস্যাগুলো বহুমাত্রিক হওয়ায় এখানে বহুমাত্রিক সম্মিলনও প্রয়োজন। শনিবার এলজিইডি ভবন সম্মেলন কক্ষে ‘পাওয়া এ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)’ আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার ধারাবাহিক পলিসি ডায়লগ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব) আব্দুল মালিক। সেমিনারে আলোচক হিসেবে অংশ নেন সাবেক স্বাস্থ্যসচিব এ এমএম নাসিরুদ্দিন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ রশিদ-ই মাহবুব, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ বুশরা আলম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ধীরাজ কুমার নাথ, ওয়াটার এইড বাংলাদেশের প্রতিনিধি ডাঃ মোঃ খায়রুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ এম এ ফায়েজ, ব্র্যাকের ভাইস চেয়ারম্যান মুস্তাক চৌধুরী, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক তৌফিক মারুফ প্রমুখ। স্বাস্থ্য খাতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ের খ-চিত্র তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সহস্রাব্দ অর্জনে বাংলাদেশের বেশ অগ্রগতি হয়েছে। দেশের সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার নেটওয়ার্ক। এমন মজবুত অবকাঠামোর ওপর দাাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাত্রার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে জনবল বৃদ্ধি, অবকাঠামোর উন্নয়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যু হ্রাস, ওষুধের সরবরাহ বৃদ্ধি, কমিউনিটি ক্লিনিক চালু, স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম ইত্যাদি উন্নয়নমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। দেশের ৯৯ ভাগ উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে রয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিসেবার ব্যবস্থা। বর্তমানে প্রতি মাসে ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা নেন। দেশে অনুর্ধ ১২ মাস বয়সের শিশুদের সকল টিকা প্রাপ্তির হার ৮১ ভাগ। স্বাস্থ্য বিষয়ক সহস্রাব্দ অর্জনে বাংলাদেশের বেশ অগ্রগতি হয়েছে। পোলিওমুক্ত দেশ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সার্টিফিকেট গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ফ্রি এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারবর্গের চিকিৎসাসেবা প্রদানে বিশেষ ব্যবস্থা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। রাজধানীসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নতুন নতুন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। টাঙ্গাইলের মধুপুর, কালিহাতি ও ঘাটাইলে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচীর পাইলট প্রকল্প শুরু করেছে সরকার। কিডনি, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল ও ব্যয়বহুল রোগের ওষুধের দাম ও মেডিক্যাল পরীক্ষার ফি কমিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আর্থিক কারণে জটিল রোগে আক্রান্ত অনেক দরিদ্র রোগী যথাযথ চিকিৎসাসেবা পায় না। তাদের অনেকে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। চিকিৎসাব্যয়ের বড় অংশ ওষুধ ও মেডিক্যাল পরীক্ষার পেছনে খরচ হয়ে যায়। ফলে মাঝপথে তাদের অনেকের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। এই মানবিক বিষয়টি সকলের বিবেচনায় আনা উচিত। স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বৃদ্ধি করা দরকার বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, শুধু চিকিৎসার দিকে নজর দিলেই হবে না, রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণসমূহ এবং প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ প্রতিরোধের বিষয়েও সচেতন হতে হবে। বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে আশপাশের এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। অনেক জটিল রোগ মানুষসৃষ্ট। ধূমপানসহ স্বাস্থ্যহানিকর বিভিন্ন বদভ্যাস থেকে বিরত থাকতে হবে। পিপিআরসির নির্বাহী পরিচালক হোসেন জিল্লুর রহমান সেমিনারে আলোচকবৃন্দের বক্তব্যসমূহের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে সাম্প্রতিক সময় চারটি বড় প্রবণতা ক্রিয়াশীল। যার প্রভাবে এসডিজি পর্বে স্বাস্থ্যের পরিমাণগত ও কৌশলগত গুরুত্ব বহুগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রথম বড় প্রবণতা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। স্বাস্থ্য খাতে জলবায়ু পরিবর্তনের বহুমুখী প্রভাব রয়েছে। দ্বিতীয় বড় প্রবণতা হচ্ছে অপরিকল্পিত নগরায়ন, যার অন্যতম প্রভাব যতটা না অর্থনৈতিক, তার চেয়ে বেশি স্বাস্থ্য বিষয়ক। তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে রোগে ‘ধরন’র পরিবর্তন। আর চতুর্থ বড় প্রবণতা হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবার খরচজনিত পারিবারিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক ঝুঁকি, যা আউট অব পকেট খরচ হিসেবে বিশ্লেষক মহল পরিচিতি পেয়েছে। হোসেন জিল্লুর রহমান আরও বলেন, উপরোক্ত চারটি বড় প্রবণতার প্রেক্ষিতে এমডিজি থেকে এসডিজি উত্তরণে অত্যন্ত লক্ষ্যণীয় একটি পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। তা হলো স্বাস্থ্য খাতের কৌশলগত গুরুত্ব বৃদ্ধি। স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা সমাধানে বড় ও ছোট-এই দুই সমাধানের পথেই এগোতে হবে। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, সরকারী নীতি নির্ধারক, উন্নয়ন সহযোগী, বড় প্রতিষ্ঠান শুধু বড় সমাধানেরই চিন্তা করছে। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলছে, বড় সমাধান যেমন প্রয়োজন, ছোট সমাধানও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আজকের ও আগামীর স্বাস্থ্য এজেন্ডা শুধু স্বাস্থ্যসেবার বিষয় নয়, সমান গুরুত্ব দিয়ে আমাদের স্বাস্থ্য নিয়েও আলোচনা করতে হবে।
×