ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নুরুল ইসলাম বাবুল

ছোট্ট শিয়ালের বোকামি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ছোট্ট শিয়ালের বোকামি

ছোট্ট নদী শালিখা। নদীটির পশ্চিম পাড়ে আছে একটা উঁচু জায়গা। একদম ঝোপ-ঝাড়ে ভরা। সেই ঝোপের মধ্যে বাস করে অনেক অনেক শিয়াল। সারাদিন তারা ঘুমায়। রাত হলেই দল বেঁধে বেরিয়ে পড়ে। প্রথমে একটা শিয়াল ডেকে ওঠে হুক্কা-হুয়া। সঙ্গে সঙ্গেই ডেকে ওঠে আরেকটা। তারপর অন্যটা। এভাবে সব শিয়াল একসঙ্গে ডাকে হুক্কা-হুয়া... হুক্কা-হুয়া...। শিয়ালগুলো মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়ায়। ফসলের খেত থেকে ইঁদুর ধরে খায়। রাত গভীর হলে ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। চুপিসারে যায় মানুষদের বাড়ি বাড়ি। খোপ থেকে হাঁস-মুরগি ধরে আনে। ধরে এনে মজা করে খায়। বাচ্চা-কাচ্চাদের জন্যও নিয়ে আসে। শিয়ালগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে বুড়ি শিয়াল। সেই বুড়ি শিয়ালের অনেক বয়স হয়েছে। তাই সে দৌড়াতে পারে না। কখনও কখনও হাঁটতেও পারে না। তাই সে খাবারের জন্য কোথাও যেতে পারে না। বুড়ি শিয়ালের আপন বলতে ছিল একটা বাচ্চা। বাচ্চাটির নাম হংটং। হংটং ছিল ভীষণ দুষ্ট আর জেদি। সে কারও কথা মানত না। কারও সঙ্গে ভাল ব্যবহার করত না। সব সময় মারামারি করত। ঝগড়া করত। তার মা বুড়ি শিয়ালকেও সে পছন্দ করত না। বুড়ি শিয়াল কখনও কখনও খাবার যোগাড় করতে পারত না। তখন সে না খেয়ে থাকত। কিন্তু হংটং তা দেখেও যেন দেখত না। ক্ষুধায় মা কষ্ট পাচ্ছে জেনেও সে খাবার এনে দিত না। নিজে ঠিকই মাঠ থেকে বড় বড় ইঁদুর ধরে খায়। কিন্তু মাকে দেয় না। বুড়ি শিয়াল তবুও দুঃখ করে না। বাচ্চাকে অভিশাপ দেয় না। এক রাতে হংটং ভয়ানক কা- করে বসল। অন্য শিয়ালদের সঙ্গে বাজি ধরে লোকালয়ে গেল মুরগি আনতে। সে রাতে গ্রামে ছিল উৎসব। লোকজন জেগেই ছিল। এ অবস্থায় খোপ থেকে মুরগি আনা কঠিন জেনেই অন্য শিয়ালরা হংটংয়ের সঙ্গে বাজি ধরেছিল। হংটং বড়াই করল সে পারবেই। হংটংয়ের মা বারবার নিষেধ করল। কিন্তু হংটং সে কথায় কর্ণপাত করল না। প্রথমে একটা বাড়িতে ঢুকে ফিরে এলো। তারপর আরও দুটো বাড়িতে ঢুকল। না, লোকজন জেগে আছে। কিন্তু অন্যদিন ফিরে গেলেও আজ খালি হাতে ফিরবে না হংটং। তাই একটা ফাঁকা বাড়ির খোপের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিল। চেঁচিয়ে উঠল খোপের হাঁস-মুরগি। বাড়ির লোকজন টের পেয়ে গেল। তারা চুপি চুপি লাঠি হাতে ঘিরে ফেলল। হংটং তখন খোপের বড় মোরগটার মাথা চেপে ধরেছে। ঠিক সেই সময়ে একজন লাঠি দিয়ে আঘাত করল। আঘাতটা লাগল হংটংয়ের মাথায়। চিৎকার করে উঠল। মাটিতে গড়াগড়ি দিতে লাগল। তারপর চারপাশ থেকে লাঠির আঘাত পড়তে লাগল হংটংয়ের গায়। মারতে মারতে বাড়ির লোকজন যখন ভাবল শিয়ালটা মরে গেছে। তখন তারা টেনে-হিঁচড়ে নদীর ধারে ফেলে আসল। হংটং মরল না। সামান্য হলেও প্রাণটা ছিল। তাই বেঁচে উঠল। জ্ঞান ফিরে গোঙাতে লাগল। অন্যান্য শিয়াল টের পেয়ে হংটংকে ঝোপের মধ্যে নিয়ে গেল। বাচ্চার এই অবস্থা দেখে ওর মা তো কেঁদে কেটে অস্থির। সমস্ত দুঃখ-কষ্ট ভুলে মা অনেক যতœ করতে লাগল। এটা সেটা যোগাড় করল। নিজে না খেয়ে হংটংকে খেতে দিল। কিছু দিনের মধ্যেই হংটং ভাল হয়ে গেল। কিন্তু তার স্বভাব বদল হলো না। মারামারি-ঝগড়াঝাটি তার প্রতিদিনের কর্ম। বুড়ি মাকে পর্যন্ত মারে। মাকে খাবার এনে দেয় না। খেতে না পেয়ে একদিন বুড়ি শিয়ালটা মরেই গেল। তারপর অনেকদিন কেটে গেল। হংটং বুড়ো হয়ে গেল। নড়াচড়া করতে পারে না। দৌড়াতে পারে না। খাবার যোগাড় করা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ল। কিন্তু কেউ তাকে খাবার এনে দিল না। হংটংয়ের অনেক বাচ্চা। তারাও ফিরে তাকাল না। ক্ষুধায় ছটফট করতে লাগল হংটং। মায়ের কথা মনে পড়ল তার। সে বুঝতে পারল বাবা-মাকে কষ্ট দিলে নিজের ভাগ্যেও কষ্ট জোটে।
×