ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বই পড়ার বিকল্প নেই

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ বই পড়া, না পড়া

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ বই পড়া, না পড়া

খন্দকার মাহ্বুবুল আলম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ বা সামগ্রী বই। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দর এ বই এবং শ্রেষ্ঠ বন্ধুও এ বই। বই রাখা এবং পড়ার অভ্যাস মানুষকে মহৎ করে। সৃষ্টি করে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ। এছাড়া সমাজ- সভ্যতা এবং প্রগতি ও নৈতিকতার পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বই ছাড়া যে জীবন, সেই জীবনের অর্থই হচ্ছে কুসংস্কারাচ্ছন্নতায় হাজার বছর পেছনে পড়ে থাকা। এ জীবনের কোন মূল্য বা অর্থ নেই। আজ আমরা মানব গোষ্ঠী যতটুকু পথ এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি, এর পেছনে যুক্তি-জ্ঞানই বেশি বিদ্যমান। আর তা সম্ভব হয়েছে বই পড়ে গবেষণার মাধ্যমেই। সব বই-ই কিন্তু বই নয়। যে বই আমাদের মধ্যে যুক্তি-জ্ঞানের উন্মেষ সৃষ্টি করে সে বই-ই প্রকৃত বই। এক্ষেত্রে স্কুল-কলেজের বই হচ্ছে একাডেমির পাঠ্যক্রম। এসব বই পড়ে (সীমিত জ্ঞানের) একাডেমিক সার্টিফিকেট অর্জন যতটা সম্ভব, আশানুরূপ জ্ঞানার্জনে অনেক ক্ষেত্রে ততটা সম্ভব নয়; যদি না জ্ঞানার্জনের অন্যান্য বই পড়া হয়। এটি আমাদের জন্য বড় একটি দীনতা। এই দীনতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে আমাদের সবদিক থেকে পিছিয়ে থাকতে হবে। এখন ফেব্রুয়ারি মাস। এ মাস শোকের, গৌরবের, আনন্দের, ভাষার এবং বইয়ের মাস। এ মাসেই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে বইমেলা। যা আনন্দের তো বটেই। বইমেলা যখন শুরু হয়, তখন মেলাতে প্রচুর লোক সমাগম দেখে বেশ ভালোই লাগে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, যে হারে মেলাতে লোক সমাগম ঘটে, সে হারে বই কেনার প্রবণতা দেখা যায় না। দুঃখজনক বৈ কি! দামের কারণেও অনেকে বই কিনতে পারেন না, আবার পড়ার অনাগ্রহও থাকে অনেকের। পড়ার অনাগ্রহের কথা যদি বলি তা আপাতত হতাশার মনে হলেও প্রত্যাশাও করতে পারি। মেলায় আসতে আসতে এক সময় বই কেনা এবং পড়ার প্রবণতাও মানুষের মধ্যে বৃদ্ধি পাবে। যারা বই পড়ে না তারা প্রকৃত পক্ষে দুর্ভাগা। কারণ তারা প্রকৃতকে জানা থেকে বঞ্চিত। প্রকৃতকে জানা থেকে বঞ্চিত মানে এক ধরনের অন্ধকারে থেকে যাওয়া। সেই অন্ধকার থেকে আলোর পথে আসতে হলে বই পড়ার বিকল্প নেই। বই কেনার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলেই পড়ায় মনোযোগী হওয়া যায়। সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর এক প্রবন্ধে লিখেছিলেন ‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না, বরং মানুষ তার নিছক জীবের স্তর থেকে প্রকৃত বা বুদ্ধিমান মানুষে উন্নীত হয়ে থাকে। বই পড়া কষ্টের নয়, বরং উপভোগের। বই না পড়লে আজানাকে জানা যেমন সম্ভব নয়, যারা মুক্তি ও জ্ঞাননির্ভর বইগুলো নিয়মিত পড়ে থাকেন, তেমনি সভ্যও হওয়া যায় না। যারা যুক্তি ও জ্ঞাননির্ভর বইগুলো নিয়মিত পড়ে থাকেন, তারা প্রকৃত জ্ঞানই অর্জন করে থাকেন। এরকম বই পড়ুয়া মানুষদের এখনও প্রকৃত মানুষ হিসেবে দেখা যায়। এ জাতীয় মানুষরা কখনও কোন অন্যায়- অপরাধ কর্মকা- করতে পারেন না। কারণ তারা বই পড়ার কারণে নৈতিক মূল্যবোধ দ্বারা গড়ে ওঠেন। তারা তাদের স্ব-বিবেক দ্বারা সর্বক্ষণিক শাসিত বা পরিচালিত হয়ে থাকেন। কাজেই বই হোক নিত্যসঙ্গী।’ এই সেøাগানকে সামনে রেখে আজই বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা দরকার। জ্ঞানভিত্তিক সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে একমাত্র বই পড়ে জ্ঞানার্জনের মাধ্যমেই সম্ভব। প্রত্যেক স্কুল-কলেজের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় এবং প্রত্যেক ঘরে ঘরে লাইব্রেরী গড়ে তোলা দরকার। এর দ্বারা লোকসান হবে না বরং নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন জ্ঞানী মানুষ তৈরি হবে। এ লক্ষ্যে সবাইকে সঙ্ঘবদ্ধভাবে কাজ করার ঔচিত্যবোধ থেকে এগিয়ে আসতে হবে। হালিশহর, চট্টগ্রাম থেকে
×