ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভেজালে বাজার সয়লাব

ঐতিহ্য হারাচ্ছে খেজুর গুড়

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬

ঐতিহ্য হারাচ্ছে খেজুর গুড়

সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর ॥ এক সময় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে মাদারীপুর জেলার খেজুর গুড় ছিল ঐতিহ্যবাহী। স্বাদে-গন্ধে ছিল অতুলনীয়। বর্তমানে অসাধু ও অতি মুনাফাখোর গুড় উৎপাদনকারীদের কারণে মাদারীপুরের খেজুর গুড় এখন ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। দিন দিন গুড় উৎপাদনকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠায় গুড়ের হারানো ঐতিহ্য আর ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। ভেজাল গুড়ে এখন হাট-বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। ওজন বৃদ্ধি করতে চিনি আর রং ফর্সা করতে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত সালফার। যে কারণে সুস্বাদু খেজুর গুড় এখন দুর্লভ হয়ে পড়েছে। গত ১৫-২০ বছর ধরে এ অবস্থা চলে এলেও নেয়া হয়নি কোন আইনী ব্যবস্থা। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোন ধরনের ব্যবস্থা। পাশাপাশি নানা প্রতিকূলতার কারণে জেলার খেজুর গাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাওয়ায় গুড়ের উৎপাদন ২০ ভাগে নেমে এসেছে। এক সময় প্রতিবছর শীত মৌসুমে নবেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গুড় উৎপাদনের সঙ্গে জড়িয়ে নতুন কর্মসংস্থান খুঁজে পেত ৩০-৩৫ হাজার মানুষ। এখন সেই বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া খেজুর গাছ থেকে যে পরিমাণ জ্বালানি পাওয়া যেত, তাতে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোর ৬ মাসের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে পারত। এখন আর সে অবস্থা নেই। জানা গেছে, স্বাধীনতাপরবর্তী চার দশক আগে মাদারীপুর, কালকিনি, রাজৈর ও শিবচর উপজেলায় প্রায় সাড়ে ১২ লাখ খেজুর গাছ ছিল। তখন প্রতি শীত মৌসুমে এসব খেজুর গাছ থেকে প্রায় ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫০ মণ গুড় উৎপাদন হয়েছে। সে সময় এর মূল্য ছিল প্রতিকেজি ১০ টাকা দরে অর্থাৎ প্রতি মণ ৪শ’ টাকা হিসেবে ১৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তখন এ জেলার গুড় এলাকার চাহিদা পূরণ করেও দেশের বিভিন্ন জেলায় রফতানি করা হতো। মাদারীপুরের সুস্বাদু গুড়ের পাটালি, দানাদার ও ঝোলা (পাতলা) গুড়ের সুনাম ছিল দেশব্যাপী। কেউ কেউ শখ করে এখানকার গুড় বিদেশে তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছে পাঠাতেন। সে সময় উৎপাদনকারীরা গুড়ে ভেজাল দেয়ার চিন্তাও করতেন না। কিন্তু বর্তমানে সে চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো, ভেজাল ছাড়া ১ কেজি গুড়ও বাজারে পাওয়া যায় না। এলাকার সুনাম রক্ষায় কারও কোন মাথাব্যথা নেই। শুধু অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জনই তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। গুড়ের উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাওয়ায় গাছি ও গুড় উৎপাদনকারীরা বেশি মুনাফার আশায় গুড়ে চিনি ও বিষাক্ত সালফার মিশিয়ে বাজারজাত করছে। এ কারণে আগের তুলনায় গুড়ের উৎপাদন কমেছে ৮০ ভাগ, অথচ দাম বেড়েছে ৮-১০ গুণ। ভেজাল গুড় ক্রয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলার কারণে ক্রেতার সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পেয়ে বর্তমানে নেমে এসেছে ১৮-২০ ভাগে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক গাছি ও গুড় ব্যবসায়ী বলেন, ‘ভেজাল ছাড়া এখন খাঁটি গুড় পাওয়া যায় না। খাঁটি গুড় পেতে হলে ৩-৪ দিন আগে আমাদের কাছে বায়না দিতে হবে। তবে সে গুড়ের দাম অনেক বেশি। প্রতিকেজি সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা।’
×