ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় শিশু পুরস্কার বিতরণীতে অভিভাবকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি

অহেতুক কিছু শিশুদের ওপর চাপিয়ে দেবেন না

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬

অহেতুক কিছু শিশুদের ওপর চাপিয়ে দেবেন না

বিডিনিউজ ॥ শিশুদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অহেতুক কিছু চাপিয়ে না দিতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। শনিবার শিশু একাডেমি মিলনায়তনে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘শিশুকে শিশুর মতো থাকতে দিন। শিশুর ব্যক্তিত্ব ও আগ্রহের প্রতি আস্থা রাখুন। শিশুদের ওপর অহেতুক বা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন না। এতে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বিঘিœত হবে।’ অভিভাবকদের উদ্দেশে আবদুল হামিদ বলেন, ‘শুধু পাঠ্যবইকেন্দ্রিক শিক্ষাই যথেষ্ট নয়। শিশুরা আজ অনেক কিছুর স্বপ্ন দেখে। কেউ হবে সেরা ক্রিকেটার, কেউ হতে চায় শ্রেষ্ঠ শিল্পী কিংবা একজন বড় লেখক বা কবি- তাকে সেটা হতে দিতে হবে।’ প্রত্যেক শিশুকে তার নিজের পথে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা দেয়া অভিভাবকসহ বড়দের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি। ‘তাকে (শিশুকে) ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে অন্য কিছু করাতে গেলে তার স্বপ্ন ভেঙ্গে যেতে পারে। শিশুকে শিশুর মতোই থাকতে দিন। শিশুর রাজ্যে অনধিকার প্রবেশও তাদের মানসিকতার জন্য কোন শুভ ফল বয়ে আনে না।’ শিশুদের বিকাশে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, ‘বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুর অসম্পূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়নে শিশুদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। শিশুদের শিক্ষা বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা বিস্তারে সরকার বিনামূল্যে বই ও শিক্ষা ভাতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে চলেছে। সরকার জাতীয় শিশুনীতি-২০১১ প্রণয়ন করেছে। শিশুর শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিমত্তা বিকাশে এ নীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ শিশুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা সৌভাগ্যবান যে, জন্ম নিয়েই তোমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক। যতদূর চোখ যায়- বিস্তৃত মুক্ত আকাশ, সমুদ্র, নদী, অরণ্য এবং আমাদের যা কিছু আছে সবই তোমাদের। ইচ্ছা করলেই তোমরা তোমাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পার।’ বাংলাদেশের শিশুরা বর্তমানে পড়াশোনা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গেও পরিচিত হচ্ছে বলে তাদের প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি। ‘আজ বাংলাদেশের শিশুরা পড়াশোনা করছে-চমৎকার ফলাফল করছে। সেরা ছবি আঁকছে। গান গেয়ে মন জয় করছে। বিজ্ঞানযন্ত্র আবিষ্কার করছে। খেলাধুলা-জ্ঞান প্রতিযোগিতা- সর্বস্তরে শুধু দেশেই নয়; বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হচ্ছে। এমনকি নবীন শিশুটিও কম্পিউটার-ইন্টারনেটের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলছে অবলীলায়।’ এ সময় লিখিত বক্তব্যের বাইরে আবদুল হামিদ বলেন, ‘শিশুরা যা পারে, আমিও তা পারি না। মোবাইল অপারেটই করতে পারি না, বাচ্চারা তো এক্সপার্ট।’ শিশুর সুষ্ঠুভাবে বেড়ে ওঠার পরিবেশ নিশ্চিতে এ সময় সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি আশা করি আমরা শুধু আমাদের নিজেদের শিশুদেরই যতœ নেব না বরং আমাদের চারপাশে যেসব শিশু আছে তারাও যাতে যতেœর সঙ্গে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখব।’ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা-২০১৬-তে বিভিন্ন বিভাগে বিজয়ী শিশুদের মধ্যে পদক ও সনদ বিতরণ করেন। শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, মহিলা ও শিশু সচিব নাছিমা বেগম এবং শিশু একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন বক্তব্য রাখেন।
×