ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডিপিডিসির গণশুনানি অনুষ্ঠানে কর্তৃপক্ষ

বিদ্যুত বিতরণের সব সাবস্টেশন হবে মাটির নিচে

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১২ জানুয়ারি ২০১৬

বিদ্যুত বিতরণের সব সাবস্টেশন হবে মাটির নিচে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা বদলে দিতে মাটির নিচে সাবস্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। প্রথম প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে। মাটির নিচে বিদ্যুত বিতরণের জন্য সাবস্টেশন থাকবে আবার মাটির ওপরে যথারীতি খেলার মাঠও থাকবে। এছাড়া রাজধানীর হাতিরপুল এবং খামারবাড়িতেও বহুতল ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে নির্মাণ করা হবে সাবস্টেশন। আপাতত এই তিন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও পর্যায়ক্রমে এই উদ্যোগ শহরজুড়েই বিস্তৃত হবে। উন্নত দেশের মতোই রাজধানী ঢাকার বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে ডিপিডিসি। এর অংশ হিসেবে পাঁচ বছরের মধ্যে রাজধানীর ঝুলন্ত বিদ্যুতের তার এবং খাম্বাকে জাদুঘরে পাঠনো হবে। বিতরণ ব্যবস্থার পুরোটাই মাটির নিচে নিয়ে যাওয়া হবে। সোমবার গ্রাহকদের সুবিধা অসুবিধা শুনে তাৎক্ষণিক সমাধান দেয়ার এক আয়োজনে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমন আশার কথা শোনালেন। তিনি জানালেন, আমরা এমন বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই যেখানে শহর ঢাকার মানুষ ২৪ ঘণ্টায় বিদ্যুত পাবেন। রাজধানীর মতিঝিলে সোমবার লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, রমনা, রাজারবাগ, মতিঝিল, মুগদাপাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ এবং মতামত শোনার জন্য গণশুনানির আয়োজন করে ডিপিডিসি। প্রসঙ্গত ধারাবাহিকভাবেই ডিপিডিসি বিভিন্ন বিতরণ এলাকার গ্রাহকদের অভিযোগ শুনছে। গণশুনানিতে সমস্যা বলার সঙ্গে সঙ্গেই সমাধান দেয়া হয় গ্রাহককে। মুগদার আবু সাঈদ, আব্দুল কুদ্দুস আর মোবারক হোসেন তো শুনানিতে বসেই ১৩টি মিটার দেয়া হয়েছে। শুনানিতে ৩৫ জন গ্রাহক নিজ নিজ এলাকার সমস্যা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তাদের অভিযোগ উত্থাপন করেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং কোম্পানির অন্যান্য পরিচালকদের সামনে স্থানীয় বিতরণ এলার নির্বাহী প্রকৌশলীদের অভিযোগের জবাবও দিতে হয়। শুনানিতে ডিপিডিসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) নজরুল হাসান, পরিচালক (অপারেশন) রফিকউদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকৌশল) রমিজ উদ্দিন সরকারসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শুনানিতে দেখা যায় পুরান ঢাকার গ্রাহকদের বেশিরভাগই ভবনে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষর (রাজউক) অনুমোদন না থাকায় সংযোগ নিতে পারছে না বলে অভিযোগ করেন। তাদের দাবি পুরান ঢাকায় অল্প জমিতে বাড়ি করা হয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবেই এখানে রাস্তা সরু। রাজধানীর পুরাতন এবং আদি বাসিন্দাদের অনেকেই রাজউকের অনুমোদন নেই। ধারাবাহিকভাবে সম্পত্তি ভাগ হতে হতে অনেকে ছোট জায়গাতে উঁচু ভবন নির্মাণ করেছে। এসব ভবনের নির্মাণ অনুমেদন না থাকায় গ্রাহককে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। গ্রাহকরা তাদের অবস্থার বর্ণনা দিয়ে রাজউকের অনুমোদন না থাকলেও বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার অনুরোধ করা হয়। এ সময় বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ানোর জন্য নতুন করে আর কোন কাগজ প্রয়োজন হবে না বলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সকল কর্মকর্তাদের জানান। লালবাগে ছয়শ’ বর্গফুট জমির ওপর সাত তলা বাড়ি করেছেন ওমর ফারুক। তিন তলা পর্যন্ত বিদ্যুত সংযোগ আছে। কিন্তু নতুন ৪ তলায় সংযোগ পাচ্ছেন না অভিযোগ করেন তিনি। তবে রাজউকের অনুমোতি না থাকার কারণে তার বিষয়টি সমাধান করা হয়নি। পুরান ঢাকার হাজি বালু রোডের আরেক বাসিন্দা মোঃ আনিসুর রহমান তিনিও সোয়া কাঠা জমিতে সাত তলা ভবন নির্মাণ করে বিপাকে পড়েছেন। তিনি আরও ৫টি মিটার চাইলেও ডিপিডিসির স্থানীয় কার্যালয় মিটার দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে। শেষমেশ গণশুনানিতে তিনি তিনটি মিটারের জোর দাবি তোলেন। ডিপিডিসি তার সমস্যার কথা বিবেচনা করে আরও তিনটি মিটার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। গণশুনানিতে লালবাগের শিল্প গ্রাহক সাঈদুজ্জামান অভিযোগ করেন, কোন সমস্যা হলে, ট্রান্সফরমার পুড়ে গেলে কিম্বা তার ছিড়ে গেলে ডিপিডিসি অফিসে ফোন করলে দ্রুত সময়ে তা মেরামত করতে কর্তৃপক্ষ আসেন ঠিকই। কিন্তু দেখা যায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আনেননি। এতে আবার অফিস গিয়ে সরঞ্জাম এনে মেরামত করতে অনেক সময় চলে যায়। এখানে ব্যবস্থাপনা আরও ভাল করা প্রয়োজন বলে তিনি পরামর্শ দেন। গ্রাহক দেলোয়ার হোসেন বলেন, পুরান ঢাকার মানুষ সব সময় ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করেন। ট্রান্সফরমার পুড়ে গেলে বা ফেটে গেলে ভবন নড়ে উঠে। ভবনের সঙ্গেই ট্রান্সফরমার লাগানো হয়েছে। এতে সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়। বকেয়া বিদ্যুত বিল কিস্তিতে শোধ করার সুযোগ দেয়ার অনুরোধ করেন তিনি। অনুষ্ঠানে ডিপিডিসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ঢাকা শহরে ভবিষ্যতে কোন ঝুলন্ত তার থাকবে না। এমন কী কোন বিদ্যুতের খুঁটি থাকবে না। সব মাটির নিচে নিয়ে যাওয়া হবে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সকল তার ও ট্রান্সফরমার মাটির নিচে নিয়ে যাওয়া হবে। তিনি বলেন, সকল গ্রাহক যাতে সহজভাবে বিদ্যুত পেতে পারেন সে ব্যবস্থা করা হবে। মতিঝিলে ২২ তলা ভবন করা হবে। ভবনের নিচে সাবস্টেশন করা হবে। এভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় খেলার মাঠের নিচে, ফার্মগেট, হাতিরপুর, ধানম-িতে মাটির নিচে সাবস্টেশন করা হবে। এতে জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হবে।
×