ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সমাধান দেয়ার কিছু নেই- অর্থমন্ত্রী;###;আশা করি সমাধান বেরোবে- শিক্ষামন্ত্রী

পে স্কেলে বেতন বৈষম্য নিয়ে দুই মন্ত্রীর দুই বক্তব্য

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৪ জানুয়ারি ২০১৬

পে স্কেলে বেতন বৈষম্য নিয়ে দুই মন্ত্রীর দুই বক্তব্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পে স্কেলে বৈষম্য ও মর্যাদাহানীর অভিযোগ নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষকদের আন্দোলনের মধ্যেই দুই মন্ত্রী দু’ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার আগের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, তাদের আন্দোলন অযৌক্তিক। না জেনেই অষ্টম পে স্কেল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা আন্দোলন করে যাচ্ছেন। এখানে সমাধান দেয়ার মতো কিছু নেই। অন্যদিকে সমস্যার সমাধান দেখছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেছেন, শিক্ষকদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আলোচনা করে যাচ্ছে। আশা করি সুষ্ঠু ও সম্মানজনক সমাধান বেরিয়ে আসবে। রবিবার রাজধানীতে পৃথক অনুষ্ঠানে এসব মন্তব্য করেন সরকারের দুই মন্ত্রী। এদিকে শিক্ষকরা অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেছেন, অর্থমন্ত্রীর এভাবে বারবার দেয়া বক্তব্য আন্দোলনকে নতুন করে আরও উস্কে দিচ্ছে। সকালে সচিবালয়ে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সঙ্গে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, না জেনেই অষ্টম পে স্কেল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা আন্দোলনে যাচ্ছেন। ইতোপূর্বে আমরা একটা মিটিং করেছিলাম। সেখানে কিছু কথাবার্তা হয়েছিল। আমরা সেটা সমাধানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দিয়েছি। তারা সেটা এখনও সমাধান করেনি। এটা ঠিক এক সময় বলেছিলাম, জাতীয় অধ্যাপকদের সুপার গ্রেডে নেব। কিন্তু আমি এটা প্রত্যাহার করেছি। আমার বোন জাতীয় অধ্যাপক ছিলেন। সে আমাকে বলল, আমরা তো সরকার থেকে একটা থোক ছাড়া কিছু পাই না, যে থোক সচিবদের বেতনের সমান। আর কিছু না। নো হাউজিং। সেখানে আমি মুখে বলেছিলাম, শিক্ষায় প্রচুর গ্রেড-১ কর্মকর্তা রয়েছেন, সেখান থেকে কোন একটা পদ্ধতি বের করতে হবে, যাতে এক-দুইজনকে আনা যায়। প্রশাসনে ১০ জন জ্যেষ্ঠ সচিব প্রায় দুই লাখের প্রতিনিধিত্ব করছেন জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, পাবলিক-প্রাইভেট মিলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ১১ হাজার। দুই লাখ থেকে হয় ১০ জন। ১১ হাজার থেকে একজনও তো হয় না। এ অবস্থার সমাধান জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমাধান দেয়ার মতো কিছু নেই। শিক্ষকরা হার্ডলাইনে থাকতে পারেন মন্তব্য করে মুহিত বলেন, তারা আন্দোলন করছেন, আবার বলব, না জেনেই করছেন। কি তারা পাচ্ছেন, তা জানেনই না। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল আইনের খসড়া নিয়ে এক আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আশা করি সুষ্ঠু ও সম্মানজনক সমাধান বেরিয়ে আসবে। শিক্ষকরা তাদের দবি-দাওয়া তুলে ধরেছেন, এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। আমরা শুরু থেকেই শিক্ষকদের সমস্যাগুলো সুষ্ঠু সমাধানের জন্য যা যা করার করে গেছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের পক্ষে আছে। আমরা তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য জোরেশোরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষা পরিবারের একজন কর্মী হিসেবে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন ও সক্রিয় আছি। শিক্ষা সচিবসহ আমরা আলোচনা করে যাচ্ছি, বিষয়টি স্থবির হয়ে নেই, এগোচ্ছে। আশা করি সুষ্ঠু ও সম্মানজনক সমাধান বেরিয়ে আসবে। অতিদ্রুত সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। শীঘ্রই উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে এ্যাক্রিডিটেশন আইন-২০১৫ এর খসড়া চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেছেন, বিশেষজ্ঞ মহলের সঙ্গে দীর্ঘ পরামর্শের পর এ আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইনে সরকারী এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একসঙ্গে নিয়ে আসার জন্য কাজ করা হচ্ছে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কোন বৈষম্য থাকবে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, দেশে মোট ১২৭টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। তার মধ্যে সরকারী ৩৮টি এবং বেসরকারী ৮৯টি। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজার ৬৩২ জন বিদেশী শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। তাই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একটি ভাল কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় আলোচনায় অংশ নেনÑ শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা) ভাইস চ্যান্সেলর ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর জামিলুর রেজা চৌধুরী, অধ্যাপক নুরুন নবী প্রমুখ। উল্লেখ্য, এ্যাক্রিডিটেশন আইনে বলা হয়েছেÑ মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং, এ্যাগ্রিকালচার, বিজনেস, আইন, সোস্যাল সায়েন্স, আর্টস, বায়োলজিক্যাল সায়েন্স, ফিজিক্যাল সায়েন্স ইত্যাদি বৃহত্তর ডিসিপ্লিনের জন্য আলাদা আলাদা কমিটি থাকবে। এ আইনে শর্ত ভঙ্গের জন্য ক্ষেত্রবিশেষে দোষ প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অনধিক ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার কথা বলা হয়েছে খসড়ায়।
×