ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচারবিমুখ গীদাল হাজেরা-নূরজাহানের জুড়ি নেই

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৩১ অক্টোবর ২০১৫

প্রচারবিমুখ গীদাল হাজেরা-নূরজাহানের জুড়ি নেই

আগে যায়রে মরলি, পাছে যায় আর ফোরলি মধ্যে যায়রে সোনার চাইলন বাতি, সোনা চাইলন থাকিতে বাঁশের চাইলন বেরকাইছে, হয়-য়া যাক আইজ এই চাইলনের সাদি’ কিংবা ‘তক্তার উপর কেরে বালি তক্তার উপর কে? জামাই ভাতারির বেটি বিয়াও নাগাইছে’- এগুলো রংপুর অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বিয়ের গীত। এসব গীত গেয়েই এলাকায় খ্যাতি কুড়িয়েছে পঞ্চাশোর্ধ হাজেরা বেগম আর ষাটোর্ধ নূরজাহান। রংপুর মহানগরীর খুব কাছের গ্রাম আমাশু কুকরুল এলাকার প্রতিবেশী তারা। এলাকার সবাই তাদের চেনে ‘গীদাল’ বলে। গেয়ে বেড়ান বিয়ের গীত। প্রায় তিন যুগ ধরে এই বিয়ের গীত গেয়েই খ্যাতি তাদের এলাকার মানুষের কাছে। নিভৃতচারী এবং প্রচারবিমুখ এই মানুষগুলোর নেই কোন প্রচার প্রচারণা। প্রচার ভালও লাগে না তাদের। আর তাই প্রচারণায় খুব একটা আগ্রহ নেই। বিয়ের গীত রংপুর অঞ্চলের ঐতিহ্য। আগেকার দিনে গ্রামের বিয়ে মানেই সেখানে ক’দিন আগে পরে ধরে চলেছে বিয়ের গীত। কিন্তু এখন আকাশ প্রযুক্তির যুগে হারিয়ে গেছে বিয়ের গীত। তবে এখনও গ্রামাঞ্চলে যে এই বিয়ের গীত নেই, তা নয়। গ্রামাঞ্চলে নাতি-নাতনিদের বিয়ের অনুষ্ঠানে এখনও নানি দাদিরা মহা ধুমধামের সঙ্গে আয়োজন করে নিজস্ব ঢংয়ে গেয়ে থাকে বিয়ের গীত। মূলত সখ করে আনন্দ পেতে এবং আনন্দ দিতেই তাদের এই আয়োজন। আমাশু কুকরুল এলাকার এই যে হাজেরা বেগম আর নূরজাহান তাদের বিষয়টাও এমনি। কোন বাণিজ্য নয়, সখ করে আনন্দ দেয়ানেয়াই তাদের কাজ। ওই এলাকার কোন বাড়িতে কারও বিয়ে অনুষ্ঠান হলেই ডাক পড়ে তাদের। শুধু যে তারাই গায় এ গীত তা নয়, একই গ্রামে আরও অনেক রয়েছে এমন গীদাল। আছে মা আছিয়া বেগম, মেয়ে মনোয়ারা বেগম। তারা একইসঙ্গে ধরে রেখেছে এই গীতশিল্পকে। তবে গীদাল হিসেবে হাজেরা আর নূরজাহানের খ্যাতি এলাকা জুড়ে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুরুটা তাদের অন্যের কাছে দেখে শুনেই। একটা সময় খুব বেশি হতো বিয়ের গীত। সেসবে আনন্দ পেত বলেই এক সময় যুক্ত হয়ে যায় তাতে। নিছক মনের আনন্দে। জানালেন, হলুদ কোটার সময় এক ধরণের গীত হয়, আবার বর-কনেকে ঘর থেকে বের করে আনা কিংবা ঘরে ঢোকানোর সময় আরেক ধরণের। বিদায় বেলায় এক ধরণের। বিয়ের একেকটি আয়োজনের সময় চলে একেকটি গীত। এ সময় তাদের সঙ্গে কুলা চালনে কলা, মাটির প্রদীপ, সুই-সুতা আমের পাতা আরও কত কী শোভা পায়! হাজেরা- নূরজাহান জানালেন, বিয়ের গীত আমাদের রংপুরের ঐতিহ্য। এসবকে আজ আমরা হারাতে বসেছি। তবে এই ঐতিহ্যকে লালন করা উচিত বলেই মনে করেন তারা। -মানিক সরকার মানিক রংপুর থেকে
×