ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সম্ভাব্যতা যাচাই, প্রকল্প তৈরির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর;###;বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের সম্ভাবনা

এবার পাতাল রেল

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ৩০ অক্টোবর ২০১৫

এবার পাতাল রেল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাজধানীর যানজট কমাতে মেট্রোরেলের পর এবার পাতাল রেল করতে যাচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাতাল রেলের সম্ভাব্যতা যাচাই, প্রকল্প পরিকল্পনা এবং অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা করতে দায়িত্বও দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে। বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি। পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর শীঘ্রই এ নিয়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনার কাজ শুরু করা হবে। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা মেট্রোরেল করব। সেই সঙ্গে আন্ডারগ্রাউন্ড রেলও থাকবে। প্রয়োজন হলে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হবে। কেননা তাদের মাটি এবং আমাদের মাটির বৈশিষ্ট্য প্রায় একই রকম। তিনি জানান, এই পাতাল রেল তৈরির জন্য অর্থের সমস্যা হবে না। কেননা গতকাল (২৮ অক্টোবর) এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কেইল পিটারসের সঙ্গে রাজধানীর যানজট নিয়ে আলোচনার সময় তিনি নিজেই পাতাল রেল করার কথা বলেন। এসময় অর্থায়ন করার বিষয়ে সহযোগিতা চাইলে কেইল বলেন, অবশ্যই বিশ্বব্যাংক পাতাল রেলে সহায়তা করবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এটি আমাদের জন্য একটি শুভ সংবাদ। কেননা ঢাকাবাসীর জন্য পাতাল রেল খুবই প্রয়োজন। অন্যদিকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরসহ আট প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৬ হাজার ৩৮৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নকৃত একটি প্রকল্পে পরামর্শক ব্যয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন তুলে সংশোধন করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নদী ব্যবস্থাপনা শীর্ষক এ প্রকল্পে ৬০০ কোটি টাকা পরামর্শক ব্যয়, জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত ব্যয় নিয়ে সংশোধন করে নদী ড্রেজিংয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধনের জন্য অনুমোদন না দিয়ে ফেরত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সভা সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের দেয়ার কথা ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- পরিকল্পনা সচিব মোহাম্মদ সফিকুল আজম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আরাস্তু খান, হুমায়ুন খালিদ, গোলাম ফারুক প্রমুখ। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হচ্ছে- সরকারী কর্মকর্তারা যদি সুন্দর ও আরামদায়ক বাসায় থাকতে পারেন তখন টেনশন কম হবে। তারা অফিসিয়াল কাজে বেশি মনোযোগ দিতে পারবেন। অন্যদিকে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ওপর যাতে চাপ না পড়ে সেজন্য প্রয়োজনে শিক্ষার মান ধরে রেখে বই অথবা পরীক্ষা নেয়ার মোট নাম্বার কমিয়ে আনা যায় কিনা- সে বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে। পাশাপাশি মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রমে সপ্তাহে একদিন ক্রীড়া কার্যক্রম যুক্ত এবং দ্বিতীয় ভাষা (ইংরেজী) দক্ষতা অর্জনে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম ও খুলনায় বিএসটিআইয়ের আঞ্চলিক অফিস স্থাপন এবং আধুনিকীকরণ প্রকল্প, যার ব্যয় হবে ১৮২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। বৃহত্তর পাবনা ও বগুড়া জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬৮ কোটি ৯ লাখ টাকা। ডাল ও তেল বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, ব্যয় ১০৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। মিরপুর পাইকপাড়ায় সরকারী কর্মচারীদের জন্য ৬০৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ, ব্যয় ৪৫৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। বুয়েটে শিপ মডেল টেস্টিং সেন্টার স্থাপন প্রকল্প, ব্যয় ৪৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর প্রোগাম (সংশোধিত), ব্যয় হবে ৩ হাজার ৮২৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের বিস্তারিত হচ্ছে- অবকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে দেশের তৃতীয় গভীর সমুদ্রবন্দর পায়রা। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমানোর পাশাপাশি দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সক্ষমতা বাড়বে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বর্তমানে ১৬ একর জমির ওপর সীমিত ভৌত অবকাঠামোগত সুবিধাদি যেমন- পন্টুন, ক্রেন, নিরাপত্তা ভবন ও অভ্যন্তরীণ রাস্তা ইত্যাদি উন্নয়নের মাধ্যমে একটি বন্দর টার্মিনাল তৈরি করা হলেও এখনও পণ্য ওঠা-নামা বা খালাস করা হচ্ছে না। তবে পূর্ণাঙ্গ পায়রা বন্দর গড়ে না ওঠা পর্যন্ত বহির্নোঙ্গরে বাণিজ্যিক জাহাজ আনয়নের মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বর মাস হতে পণ্য খালাসের কার্যক্রম হাতে নেয়া হচ্ছে। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর পূর্ণ উদ্যোমে চালুকরণ এবং আমদানি-রফতানি পণ্যের অবাধ পরিবহনের লক্ষ্যে একটি প্রশাসনিক ভবন, একটি ওয়্যার হাউস, পাইলট বোট, টাগ বোট, বয়া লেইনিং ভেসেল, সার্ভে বোট এবং নিরাপত্তা যন্ত্রসামগ্রী সরবরাহ করা অতি প্রয়োজন। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- ৬ হাজার ৬৯ দশমিক ১৯ একর ভূমি অধিগ্রহণ, এক লাখ বর্গফুট ওয়্যার হাউস নির্মাণ, ৫ কিলোমিটার রামনাবাদ ও কালীগঞ্জ নৌপথ ড্রেজিং, পাঁচতলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, দুটি হাইস্পিড বোট, ৫টি পিস্তল, ১০০টি শটগান ও ২ হাজার রাউন্ড গুলি সংগ্রহ, দুটি পাইলট বোট, একটি টাগ বোট, একটি বয়া লেইনিং ভেসেল, একটি সার্ভে ভেসেল ও দুটি পন্টুন সংগ্রহ, ৫ দশমিক ৬০ কিলোমিটার আরসিসি সড়ক নির্মাণ এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষামূলক কার্যক্রম করা হবে। সূত্র জানায়, ঢাকার যানজট কমাতে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে মেট্রোরেলের। এতে অর্থায়ন করছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (মেট্রোরেল) অগ্রগতি সম্পর্কে জানা গেছে, এ প্রকল্পের কাজগুলো ৮টি প্যাকেজে বিভক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি প্যাকেজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে এবং বাকি টেন্ডারগুলো পর্যায়ক্রমে আহ্বানের জন্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সেই সঙ্গে বেসিক ডিজাইন প্রণয়নের কার্যক্রম শতভাগ শেষ হয়েছে। ডিটেইল ডিজাইনের কাজ ৪৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। টেপোগ্রাফিক এবং অন্যান্য জরিপ কাজ চলমান রয়েছে। ডিপো ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের টেন্ডার মূল্যায়ন পর্যায়ে রয়েছে। ডিপোর জন্য সিভিল এবং বিল্ডিং কার্যক্রম পিকিউ আহ্বান করা হয়েছে। রোলিং স্টক এ্যান্ড ডিপো ইক্যুপমেন্ট ফর রোলিং স্টক এ্যাওটিংয়ের জন্য জাইকার সম্মতি চাওয়া হয়েছে। এছাড়া মতিঝিল এলাকায় সাব-স্টেশনের জন্য ৫০ শতক জমি প্রয়োজন, সেখানে রেলওয়ের জমি রয়েছে। এ বিষয়ে সম্প্রতি রেলওয়ের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ। সূত্র জানায়, পরিবর্তিত রুট অনুযায়ী মেট্রোরেল উত্তরা থেকে পল্লবী, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, প্রেসক্লাব ও মতিঝিল (বাংলাদেশ ব্যাংক) পর্যন্ত যাবে। পথে স্টেশন থাকবে মোট ১৬টি। মেট্রোরেলে ঘণ্টায় গড়ে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। তিনটি পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ২০১৯ সালের মধ্যে পল্লবী থেকে সোনারগাঁও ১১ কিলোমিটার চালু করা হবে। এর পরের বছরে হোটেল সোনারগাঁও হতে মতিঝিল এবং ২০২১ সাল নাগাদ উত্তরা হতে পল্লবী অংশে ট্রেন চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
×