ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

মনমাতানো আয়োজনে শিল্পকলায় বাতিঘরের নাট্যমেলা শুরু

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৪ অক্টোবর ২০১৫

মনমাতানো আয়োজনে শিল্পকলায় বাতিঘরের নাট্যমেলা শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুক্রবার বিকেল নামতেই শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা প্রাঙ্গণে বয়ে যায় প্রাণের উচ্ছ্বাস। বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। ছড়িয়ে পড়ে আনন্দের রং। সিঁড়ি থেকে লবিতে সর্বত্রই দৃশ্যমান উৎসবপ্রিয় মানুষের সম্মিলন। সিঁড়ি পেরিয়ে লবিতে চোখ পড়তেই দেখা গেল গ্রামীণ মেলার আবহ। নজরবন্দী হয় রকমারি দৃশ্যপট। কী নেই সেখানে! আছে বায়োস্কোপ, সাপ খেলা, টিয়া পাখি দিয়ে ভাগ্য গণনার সঙ্গে ছিল বানর নাচ। এ সবের পাশাপাশি বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে যুক্ত হয়েছে বাতাসা, বাদাম টানা ও মুড়ি-মুড়কির দোকান এবং নাটক ও সাহিত্যনির্ভর বইয়ের স্টল। মেলার এমন মনমাতানো আয়োজনের সঙ্গে উন্মুক্ত মঞ্চে পরিবেশিত হচ্ছে বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বাদ যায়নি ঢাকের বাদ্যও। আবহমান বাংলার এই হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতির চিত্রটি মনে করিয়ে দিল নাট্যদল বাতিঘর। হেমন্তের পড়ন্ত বিকেলে এভাবেই মনমাতানো আয়োজনে সূচনা হয় দলটির প্রথম নাট্যোৎসব বাতিঘর নাট্যমেলার। ‘অশুভের বিনাশ ক্ষণেÑএসো মিলি নট-নন্দনে’ সেøাগানে ৫ বছর ধরে নাট্যচর্চারত দলটি শুভ-অশুভর মিলন ঘটায় কাকতাড়ুয়া এবং কাগজের তৈরি ফুল, পাখি, মাছ ও ল্যাম্পপোস্ট দিয়ে উৎসব প্রাঙ্গণকে আলোকিত করে। ছুটির দিনে জমকালো আয়োজনে শুরু হলো নবীন এ সংগঠনের নাট্যমেলা। সন্ধ্যায় চার দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। জাতীয় নাট্যশালার লবিতে এ উপলক্ষে আয়োজিত হয় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, সারা যাকের ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাতিঘরের সভাপতি মুক্তনীল এবং উৎসব আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান লিপন। সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে দুই তরুণ নাট্যকর্মীকে সম্মাননা জানায় প্রতিষ্ঠানটি। তারা হলেনÑ ত্রপা মজুমদার ও কাজী তওফিকুল ইসলাম। উৎসবের উদ্বোধনী বক্তব্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, নাট্যোৎসব মূলত নতুন নাটকের জন্মক্ষণ। উৎসব উপলক্ষেই সাধারণত মঞ্চে আসে নতুন নাটক। ফলে উৎসবের আকর্ষণ বেড়ে যায়। কিন্তু উৎসব উপলক্ষে যদি নতুন নাটক না আসে, তবে তা দুঃখজনক। দেশের নাট্যচর্চার হালচাল তুলে ধরে তিনি বলেন, রাজধানীতে নাট্যচর্চার পরিবেশ চমৎকার। কিন্তু রাজধানী দিয়েই দেশের নাট্যচর্চা মূল্যায়ন সম্ভব নয়। দেশের জেলা শহরে নাটকের অবস্থা বেহাল, বিভাগীয় শহরেও তাই। ফলে সামগ্রিকভাবে আমাদের নাট্যচর্চা বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এ অবস্থার উন্নতি করতে হবে। শুধু ঢাকা নয়, জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতেও আয়োজন করতে হবে নাটোৎসবের। নতুন নাট্যদলের এমন উৎসবের প্রশংসা করে রামেন্দু মজুমদার বলেন, সংগঠন নতুন হলেও দলটির আয়োজন খুবই গোছানো ও পরিপাটি। এ ধরনের উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন নাট্যদলের মধ্যে একটা সম্মিলন হয়। নতুন চিন্তা-ভাবনার বোঝাপড়া হয়। এ দিক থেকে আয়োজন অত্যন্ত সফল। চার দিনের এ উৎসবে পরিবেশিত হচ্ছে ঢাকার মঞ্চের ৭টি জনপ্রিয় নাটক। উদ্বোধনী দিনে মঞ্চস্থ হয় নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের আলোচিত নাটক ‘দেওয়ান গাজীর কিস্্সা’। উৎসবের বাকি দিনগুলো শিল্পকলার নাট্যশালার মূল হল ও এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চায়িত হবে প্রাচ্যনাটের ‘এ ম্যান ফর অল সিজনস’, আগন্তুকের ‘অন্ধকারে মিথেন’, আরণ্যকের ‘এবং বিদ্যাসাগর’, বটতলার ‘খনা’, প্রাঙ্গণেমোর নাট্যদলের ‘আরঙ্গজেব’ ও আয়োজক নাট্যদল বাতিঘরের নাটক ‘ঊর্ণাজাল’। প্রসঙ্গত, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন কমাশ্রী ভুবনের অঙ্গসংগঠন বাতিঘর দেশের নাট্যঙ্গনে একটি তারুণ্যদীপ্ত ও প্রগতিশীল নাটকের দল। ‘মুক্ত মনের স্রোতধারায় হব আলোকিত মানুষ’ সেøাগান ধারণ করে সংগঠনটি বিগত ৫ বছর যাবত সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিচালনা করে আসছে। প্রয়াত নাট্যব্যক্তিত্ব খালেদ খান যুবরাজ প্রয়াণের বেশ কিছুদিন আগে এ দলটির সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে বাতিঘর নামকরণ করেছিলেন। তারই অনুপ্রেরণায় উৎসাহিত হয়ে বাতিঘর গত কয়েক বছরে দৃঢ়তার সঙ্গে নাট্যচর্চা করে আসছে। জীবনানন্দ দাশ স্মরণে আবৃত্তি সন্ধ্যা ॥ ‘গত বছরও আমরা নির্ধারিত কর্মসূচীর কিছুটা বাইরে গিয়ে জীবনানন্দ দাশের স্মরণ সভার আয়োজন করেছিলাম। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও আয়োজনে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। এবার কবি জীবনানন্দকে নিয়ে বিশেষ বক্তৃতা দিচ্ছেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।’ অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত ভাষণে এ ঘোষণা দেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। ২২ অক্টোবর ছিল রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের ৬১তম প্রয়াণবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর শুক্রবার আবৃত্তি সন্ধ্যার আয়োজন করে। জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি এম আজিজুর রহমান। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেন, আমার ব্যক্তিগত বিবেচনায় বাংলা ভাষায় রবীন্দ্রনাথের পর প্রধান কবি জীবনানন্দ দাশ। তিনি সারা জীবনই ছিলেন নিভৃতচারী। তার সকল কাজে নিভৃতচারীর ছাপ রয়েছে। জীবনানন্দ দাশের জীবন ও রচনার নানা প্রসঙ্গ উঠে আসে প্রধান অতিথি সংস্কৃতি সচিব আকতারী মমতাজের বক্তব্যে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সামিউল ইসলাম পোলাক। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল জীবনানন্দের কবিতা আবৃত্তি। আবৃত্তিতে অংশ নেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, আবৃত্তিশিল্পী লায়লা আফরোজ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, সৈয়দ হাসান ইমাম, বেগম আকতারী মমতাজ, বেলায়েত হোসেন, ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, সুবর্ণা নওয়াদীর, মনজুরুর রহমান, আশরাফুল আলম প্রমুখ। ডিআরইউ শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসব ॥ উচ্ছ্বাসমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্যদের সন্তানদের নিয়ে শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসব। শুক্রবার সকাল ১০টায় ডিআরইউ প্রাঙ্গণে শিশুদের সঙ্গে নিয়ে বর্ণিল বেলুন উড়িয়ে উৎসব উদ্বোধন করেন নন্দিত শিল্পী হাশেম খান। এ সময় বক্তব্য রাখেন ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ, ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদক আজিজুল পারভেজ। বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী তিমির নন্দী ও ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক সম্পাদক আজিজুল পারভেজ। উপস্থাপনায় ছিলেন কল্যাণ সম্পাদক শাহনাজ শারমীন। অনুষ্ঠানে রাশেদ খান মেনন বলেন, সুন্দর দেশ গঠন করতে হলে শিশুদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে হবে। সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমেই শিশুদের প্রকৃত বিকাশ সম্ভব। সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমেই শিশুদের মধ্যে মানবিক বোধ তৈরি হবে। রাশেদ খান মেনন শিশুদের নিয়ে একটি বর্ণাঢ্য উৎসব আয়োজনের জন্য ডিআরইউকে ধন্যবাদ জানান। এ উৎসবের জন্য মন্ত্রী তার মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবছর ১ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন। সঙ্গীত, আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা দিয়ে সাজানো ছিল দিনব্যাপী এ উৎসব। প্রতিটি বিষয়ে বয়সভিত্তিক তিনটি শাখায় মোট ২৭টি পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবক্ষ ভাস্কর্য, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাস্কর্য ও লালন সাঁইজির ভাস্কর্য। সান্ত¡না পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয় ভাস্কর্য ‘দূরন্ত’। প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে ছিলেন চিত্রাঙ্কনে চিত্রশিল্পী মনিরুজ্জামান, আবৃত্তিতে রফিকুল ইসলাম, তামান্না তিথি ও ফয়জুল আলম পাপ্পু এবং সঙ্গীতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী তিমির নন্দী, কণ্ঠশিল্পী ডা. মাহজাবিন রহমান শাওলি ও অলক দাশগুপ্ত। ভাস্কর আবদুর রাজ্জাক স্মরণ ॥ শুক্রবার ছিল ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী আবদুর রাজ্জাকের দশম প্রয়াণবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বিকেলে ধানম-ির নগর গবেষণা কেন্দ্রে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। স্মরণানুষ্ঠানে বক্তাদের স্মৃতিচারণে উঠে এসেছে শিল্পীর ব্যক্তি ও কর্মজীবনের নানা অনুষঙ্গ। স্মরণ সভায় সভাপতি ছিলেন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান নগরবিদ ও শিল্পসমালোচক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। আবদুর রাজ্জাককে নিবেদিত আলোচনায় অংশ নেন চিত্রশিল্পী অধ্যাপক সমরজিৎ রায় চৌধুরী, অধ্যাপক বুলবন ওসমান, অধ্যাপক মিজানুর রহিম, ভাস্কর অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান, স্থপতি সালমা এ শফি, স্থপতি আব্দুস সালাম প্রমুখ। বাংলাদেশের আধুনিক চিত্রকলার অন্যতম সেরা শিল্পী আবদুর রাজ্জাকের জন্ম ১৯৩২ সালে শরীয়তপুরে। বাংলাদেশে তিনিই প্রথম চারুকলায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। পঞ্চাশের দশকের ঢাকার নানা দৃশ্য তার কাজে স্থায়ী রূপ পেয়েছে। তিনি ছিলেন একাধারে চিত্রশিল্পী, ছাপচিত্রী ও ভাস্কর। ১৯৮৯ সালে তিনি একুশে পদক পেয়েছেন। ২০০৫ সালের ২৩ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
×