ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঈদের বিশেষ ভিজিএফ ॥ ১২৩ টন চাল লোপাট

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ঈদের বিশেষ ভিজিএফ ॥ ১২৩ টন চাল লোপাট

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২৯ সেপ্টেম্বর ॥ কলাপাড়ায় এ বছর ঈদের বিশেষ ভিজিএফের অন্তত এক লাখ ২৩ হাজার ১৫০ কেজি চাল লোপাট হয়ে গেছে। এ পরিমাণ চাল লোপাটের মধ্য দিয়ে কয়েকটি চক্র হাতিয়ে নিয়েছে ৩০ লক্ষাধিক টাকা। খাদ্যগুদাম থেকে ওজনে কম দেয়া এবং পরিবহন খাতের ব্যয় মেটানোর অজুহাতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি এবং ট্যাগ অফিসারের যোগসাজশে এ পরিমাণ চাল কালোবাজারে বিক্রি করা হয়েছে। দরিদ্র মানুষ ঈদের দিনসহ আগ মুহূর্তে যেন পেট ভরে খাবার পায় এ জন্য বরাবরের মতো এ বছর ঈদ-উল-আযহার আগে কলাপাড়ার ১২ ইউনিয়ন এবং দুইটি পৌরসভার ৬১ হাজার পাঁচ শ’ ৭৫ দরিদ্র পরিবারকে বিতরণের জন্য ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু এ চাল উত্তোলন করে লক্ষাধিক কেজি চাল আগেভাগেই কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়া হয়। চাল বিতরণ পরবর্তী সময় খোঁজ নিয়ে এমন কোন পরিবার পাওয়া যায়নি যে ১০ কেজি করে চাল পেয়েছেন। নিয়ম রয়েছে দরিদ্র, মহিলা প্রধান অসচ্ছল পরিবারসহ অসহায় মানুষকে এ চাল বিতরণ করতে হবে। স্থানীয় খাদ্যগুদাম থেকে চাল উত্তোলন করে ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে মজুদ করার কথা। সেখান থেকে বিতরণের আগে একজন সরকারী ট্যাগ অফিসার চালের মজুদ নিশ্চিত করে বিতরণ কাজ শুরু করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এসব কিছুই মানা হয় না। এন্তার অভিযোগ রয়েছে ছয় থেকে সর্বোচ্চ আট কেজি চাল বিতরণ করা হয়েছে। তবে কলাপাড়া পৌর শহরে প্রায় ৯ কেজি করে চাল বিতরণের খবর মিলেছে। ওজনে কম দেয়ার পরও কাদের এ চাল বিতরণ করা হয়েছে তার তালিকা যাচাই করলে আসল তথ্য বের হয়ে যাবে। এভাবে গরিবের ঈদের উৎসবে পেট পুরে খাবারের জন্য দেয়া চাল থেকে ১২৩ টন চাল লোপাটে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ মনোভাব পোষণ করেছেন। একাধিক চেয়ারম্যান তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে ওজনে কম দেয়াসহ পরিবহন খাতের ব্যয় মেটানোর সমস্যার কথা বলেছেন। একাধিক ট্যাগ অফিসারসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ করলে তাদের কাছে কেউ এ ধরনের কোন অভিযোগ দেয়নি বলে জানান। পঞ্চগড়ে চাল আটক গুদাম সিলগালা স্টাফ রিপোর্টার পঞ্চগড় থেকে জানান, ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে ভিজিএফ সুবিধাভোগী দুস্থদের মাঝে সম্পূর্ণ চাল বিতরণ না করে ইউপি কার্যালয়ের কক্ষে মজুদ রাখার অভিযোগে ওই কক্ষ সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। গোপন সংবাদে দেবীগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানিউল ফেরদৌস রবিবার রাতে পুলিশ নিয়ে দেবীডুবা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের দুটি কক্ষে ৭৫ বস্তা চাল উদ্ধার করেন। পরে ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব, মেম্বারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে তিনি কক্ষ দুটিতে সিলগালা করে দেন এবং কেন উদ্ধারকৃত চাল ঈদের আগে তালিকাভুক্ত দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়নি এ মর্মে ইউপি চেয়ারম্যানকে কারণ দর্শানো হয়েছে। অভিযোগে জানা যায়, ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে ভিজিএফ তালিকাভুক্তদের প্রতিজনকে ১০ কেজি করে সরকারীভাবে চাল বিতরণের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেবীডুবা ইউনিয়ন পরিষদে তিন হাজার ভিজিএফ সুবিধাভোগীকে ঈদের পূর্বে চাল বিতরণ শেষ করার কথা। সে অনুযায়ী ঈদের আগে চালও বিতরণ করা হয়। এরপরও ৩৯ বস্তা চাল অবশিষ্ট থেকে যায়। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের একই কম্পাউন্ডের বিআরডিবি অফিস কক্ষে আরও ৩৬ বস্তা চাল মজুদ রাখা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এসব চাল আত্মসাতের জন্য গোপনে মজুদ রাখা হয়েছিল। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগে দেবীগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে কক্ষ দুটি সিলগালা করে দেন। তবে, দেবীডুবা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঈদের আগে বৃষ্টির কারণে সম্পূর্ণ চাল বিতরণ সম্ভব হয়নি। এখনও ২শ’ জনের চাল দেয়া বাকি রয়েছে। বিআরডিবি অফিস কক্ষে মজুদকৃত চাল সম্পর্কে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, এলাকার হতদরিদ্রদের জন্য বিতরণের লক্ষ্যে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তির কাছ থেকে নেয়া ৩৬ বস্তা চাল বিআরডিবি অফিসে রাখা হয়েছে। এলাকার কোন গরিব দুস্থ মারা গেলে কিংবা কোন দুর্ঘটনা ঘটলে সেখান থেকে খয়রাতি হিসেবে বিতরণ করা হয়। কিন্তু ওই কক্ষের চাবি বা সেখানে প্রকৃতপক্ষে কত বস্তা চাল রক্ষিত রয়েছে তার সঠিক কোন হিসেব বা কাগজপত্র ইউপি চেয়ারম্যান ইউএনওকে দেখাতে পারেননি। এ বিষয়ে পঞ্চগড়ের অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাহমুদুল আলম জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরই দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। ইউপি কার্যালয়ের দুটি কক্ষে কিছু চালের বস্তা উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
×