ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এবার বিরতিতে উচ্ছ্বসিত টাইগাররা

স্বপ্নময় বছর

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৫ আগস্ট ২০১৫

স্বপ্নময় বছর

মিথুন আশরাফ ॥ নবেম্বর থেকে সাফল্য পেয়েই চলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই সাফল্য উপভোগ আর করতে পারেননি মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিমরা। এবার সেই সাফল্য উপভোগ করার বিরতি মিলে গেছে। সেপ্টেম্বরের ২৮ তারিখে দুই টেস্ট খেলতে বাংলাদেশে আসবে অস্ট্রেলিয়া। এর আগে কোন ওয়ানডে খেলা নেই বাংলাদেশের। বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগ (বিসিএল) শুরু হলেও সেটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ নয়। ঘরোয়া লীগ। তাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবার ফিরতে বাংলাদেশকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আছে আবার দুই সপ্তাহের ছুটি। এ দীর্ঘ সময় তাই উপভোগের পালা এবার বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমই উপভোগের কথাটি বলে দিয়েছেন। জানিয়েছেন, ‘আমরা বাংলাদেশ দল একটা বেঞ্চমার্ক সেট করেছি। শেষ চার ওয়ানডে সিরিজ জিতেছি, টেস্টেও শেষ আট ম্যাচ খুবই ভাল খেলেছে বাংলাদেশ। যদিও উন্নতির এখনও বহু জায়গা আছে। আমরা যেন এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারি। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, জানেন দুই মাস পর আমাদের অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলা। এটাও বড় একটা চ্যালেঞ্জ। এখন সময় গত চার-পাঁচ মাসে আমরা যা অর্জন করেছি সেটা উপভোগ করার। আমাদের মনে হয় সেটা সবাই করবে। আমার মনে হয় একটা বিরতি আছে, সেটা খুব দরকার ছিল। এরপর ফিটনেস ট্রেনিং আছে এরপর স্কিল অনুশীলন করব। আমাদের সামনে অনেক সময় আছে। আমরা যেন পুনরায় ভালভাবে ফিরে আসতে পারি, দল হিসেবে পারফর্ম করতে পারি।’ গত বছর নবেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটের ঝুলিতে শুধু অর্জনই ধরা দিয়েছে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে শতভাগ সাফল্য পাওয়ার পর বিশ্বকাপেও বাজিমাত করেছে দল। কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে সাফল্য মিলেছে। পাকিস্তানকে ‘বাংলাওয়াশ’ করেছে। ভারতকেও সিরিজে হারিয়েছে। সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকাকেও ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বছর শুরু হয়েছিল ওয়ানডেতে জয় দিয়ে। বছর শেষও হলো ওয়ানডেতে জয় দিয়েই। টেস্টেও বাজিমাত করেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে তিন টেস্টের সব, পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্টের একটিতে ড্র ও ভারতের বিপক্ষেও একটি টেস্ট ড্র করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা দুটি টেস্টই ড্র হয়েছে। টেস্টেও সাফল্য ঈর্ষণীয়ই। সেটি যতই বৃষ্টির জন্য হোক। দীর্ঘ বিরতি এর আগেও মিলেছিল। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজের পর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিরতি পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে সেবার সাফল্যের শুরু ছিল। এবার একের পর এক জয় শেষে সাফল্যের চূড়ায় উঠে বিরতি মিলেছে। তাই আনন্দ, অর্জন উপভোগও করা যাবে ভালভাবেই। দুই মাস পর আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবে বাংলাদেশ। এ দীর্ঘ সময় তাই উপভোগই করতে চায় বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। স্বপ্নের মতো কেটে গেল ৯ মাস। সেই স্বপ্ন বাস্তব হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকেও নাস্তানাবুদ করাতে। এখন চলছে, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব-নিকাশও। অপ্রাপ্তির চেয়ে অবশ্য প্রাপ্তিই বেশি। সৌম্য সরকার আর মুস্তাফিজুর রহমানের মতো দু’জন অমিত সম্ভাবনাময়ী ক্রিকেটারকে গেল বাংলাদেশ, যাদের কাঁধে চড়ে এ দেশের ক্রিকেট এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। গত নবেম্বর-ডিসেম্বরে জিম্বাবুইয়েকে দিয়ে শুরু। ৫-০ ব্যবধানে মাশরাফিরা হেয়াইটওয়াশ করেছে সফরকারীদের। এরপর স্বপ্নের বিশ্বকাপ, যেখানে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলাটা বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণের অক্ষরে লেখা থাকবে। রুবেলের পর পর দুই বলে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে যেভাবে বাংলাদেশ স্বপ্নের সোপান রচনা করেছে, তাতে বাংলাদেশ সাফল্যের ভিত্তি আর আত্মবিশ্বাস পেয়ে যায়। যে কারণে বিশ্বকাপ থেকে ফিরে এসে বলে কয়ে পাকিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে বাংলাওয়াশ, ভারতের বিপক্ষে ২-১ এ সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়ে মাশরাফির দল। এরপর বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাফল্য যেন পূর্ণতা পেল ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২-১ ব্যবধানে পরাজিত করে সিরিজ জয়ের মধ্য দিয়ে। প্রতিদিনই যেন একে একে নিজেদের ছাড়িয়ে গেছে মাশরাফিরা। অথচ এমন অসাধারণ পারফর্মেন্সের পর কি না দীর্ঘ বিরতিতে চলে যেতে হলো বাংলাদেশকে। বছরের প্রথম ৭ মাসে ১৫ ওয়ানডে খেলা বাংলাদেশের বছরের বাকি সময়টায় আর কোন ওয়ানডেই নেই সূচিতে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে যে ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ, সেটিই এ বছরের শেষ ওয়ানডে ছিল। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টেস্ট সিরিজই শুধু রয়েছে। নেই কোন ওয়ানডে খেলা। সেই খেলা আসতে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তখন জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। টেস্ট হোক আর ওয়ানডে হোক-অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজটিই এই বছর বাংলাদেশের শেষ সিরিজ। এরপর আবার আন্তর্জাতিক ম্যাচ আবার আগামী বছর জানুয়ারিতে। পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে আবারও বাংলাদেশে আসবে নিয়মিত প্রতিপক্ষ জিম্বাবুইয়ে। ওই সূচী অনুযায়ী টেস্ট অনুষ্ঠিত হবে আগে। এরপর ওয়ানডে সিরিজ হওয়ার কথা ফেব্রুয়ারিতে। ৭ মাস অপেক্ষার পর আবার ওয়ানডেতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার লড়াইয়ে নামতে হবে বাংলাদেশকে। এরই ফাঁকে বিসিএল, বিপিএলের মতো ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলো আয়োজন করবে বিসিবি। এই টুর্নামেন্টগুলো খেলেই নিজেদের ধারে শান দিতে হবে ক্রিকেটারদের। তবে আপাতত দীর্ঘ বিরতি মিলেছে। সাফল্যে ভাসতে থাকা বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা সেই সাফল্য উপভোগও করতে চান। সেই সাফল্য উপভোগ করার পালাই এখন।
×