ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বোচ্চ মূসক প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী

দেশে ৪ লাখের মধ্যে মূসক দেয় মাত্র ৬০ হাজার প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ১৩ জুলাই ২০১৫

দেশে ৪ লাখের মধ্যে মূসক দেয়  মাত্র ৬০ হাজার প্রতিষ্ঠান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, দেশে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) দেয়ার যোগ্য প্রতিষ্ঠান ৩ থেকে ৬ লাখ আর আয়কর দেয়ার যোগ্য লোকের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি। এদের মধ্যে মাত্র ৬০ হাজার প্রতিষ্ঠান মূসক আর আয়কর দেন মাত্র ১১ লাখ লোক। রোববার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় মূসক দিবস ২০১৫ উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভা ও সর্বোচ্চ মূসক প্রদানকারী সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য শুল্কনীতি মোঃ ফরিদ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আব্দুর রাজ্জাক, এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ প্রমুখ। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে মূসক দেয় মাত্র ৬০ হাজার প্রতিষ্ঠান। ৩ থেকে ৬ লাখ প্রতিষ্ঠান আছে যারা ব্যবসা করে মূসক দেয়ার উপযুক্ত। কিন্তু তারা মূসক দেন না। মূসক দেয়ার ধারে কাছেও নেই। তিনি বলেন, ১৬ কোটি লোকের দেশে রোজগার করে ৪ কোটি লোক। এদের মধ্যে আয়কর দেন মাত্র ১১ লাখ। এখন আমাদের লক্ষ্য হলো কি করে করের আওতা বাড়ানো যায়। এসব মানুষকে করের আওতায় নিয়ে আসা। মানুষের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্যই করের আওতা বাড়ানো প্রয়োজন। তিনি বলেন, এ দেশে মূসক মোটে জনপ্রিয় কর নয়। ব্যবসায়ী সমিতিগুলো সহজে তা মেনে নেয়নি। অনেক পর্যালোচনার মাধ্যমে রিভিউ করা হয়। আসলে কোন করই জনপ্রিয় নয়। এর মধ্যে মূসক বেশি অজনপ্রিয়। তবে আমার নিজস্ব অভিমত হলো ‘মূসক সব চেয়ে ভাল কর’। নিজে হিসেব রাখলে এতে কোন ঝামেলাই নেই। এটা অত্যন্ত ভাল ও ন্যায় কর। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, দেশে টিআইএন ধারী ১৮ লাখ, এর মধ্যে কর দেন মাত্র ১১ লাখ। গ্রামে-গঞ্জে অনেক মানুষ আছে যারা কর দিতে সক্ষম। তাদেরও করের আওতায় আনলে রাজস্ব আদায় বাড়বে। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা কেউ কর দিতে চাই না। শুধু তাই নয় এ সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ১৯৯৬Ñ২০০১ মেয়াদের একজন সংসদ সদস্য ২০০৯ সাল পর্যন্ত টিআইএন সম্পর্কে জানতেন না বলে তাকে জানিয়েছিলেন। এজন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা খুবই জরুরী। তিনি বলেন, বিদ্যুত ও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে বেসরকারী বিনিয়োগ হচ্ছে না বলে অনেকের ধারণা। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুত উৎপাদন অনেক বেড়েছে। বন্দরের সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। রাস্তাঘাটের উন্নয়নও হয়েছে। এসবে সরকারী বিনিয়োগ বেড়েছে। তার পরও বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়েনি। এখন বেসরকারী বিনিয়োগ প্রয়োজন। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, করের আওতা আরও বাড়াতে হবে। ঢাকা শহরে অনেকে প্রতি ফ্ল্যাট ১৫Ñ২০ হাজার টাকা করে ৫Ñ৭ তলা বাড়ি ভাড়া দেন। অথচ তাদের করের পরিমাণ খুবই কম। আমি মনে করি, ভূমি রেজিস্ট্রেশনের মতো করে এদের সর্বনিম্ন পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়া দরকার। এতে করের আওতা বাড়ানো সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, কর আরোপের সময় মনে রাখতে হবে তা যেন সহজে আদায় করা যায়। তা না হলে কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা বাড়বে। এনবিআরেরও ব্যয় বাড়বে। তিনি বলেন, ভ্যাট ব্যবস্থাকে অটোমেশন করার পাশাপাশি যারা কর দেবেন তাদের অটোমেশন সম্পর্কে জানতে হবে। রাজস্ব আদায় বাড়বে না। তাই করদাতা প্রতিষ্ঠানকেও অটোমেশনের মধ্যে আনতে এনবিআরকে কাজ করতে হবে । অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহ্্মাদ বলেন, সঠিকভাবে রাজস্ব আদায় করলে নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট প্রণয়ন সম্ভব। বিদেশী অর্থায়নের আর প্রয়োজন হবে না। অতীতের সভাপতির মতো ভ্যাট আইন ২০১২ এর কিছু ধারা সংশোধন করার দাবি জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ মূসক পরিশোধকারী ৯ প্রতিষ্ঠান ও জেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ মূসক পরিশোধকারী ১১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেয়া হয়।
×