ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংসদে বাজেট আলোচনা

খালেদা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রধান অন্তরায়

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২৮ জুন ২০১৫

খালেদা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রধান অন্তরায়

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা বলেছেন, বাজেট বাস্তবায়ন, অর্থনীতির অগ্রগতি, সুশাসন, স্থিতিশীলতা, শান্তি ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। কিন্তু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রধান অন্তরায় হচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে অনেকে সমালোচনা করলেও এ নির্বাচন না হলে দেশে গণতন্ত্র থাকত না, দেশ মুখ থুবড়ে পড়ত। সংসদ সদস্যরা অভিন্ন কণ্ঠে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্তির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকার সমালোচনা করেন। শনিবার জাতীয় সংসদে প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তাঁরা এসব কথা বলেন। দীর্ঘ এ আলোচনাকালে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নেন সরকারী দলের হুইপ শাহাব উদ্দিন, এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, হাবিবুর রহমান মোল্লা, বজলুল হক হারুন, মকবুল হোসেন, মীর শওকত আলী বাদশা, মোজাম্মেল হক, এম এ আউয়াল, আবদুল মতিন, বেগম মাহজাবিন খালেদ, শওকত হাচানুর রহমান রিমন, গাজী আমজাদ হোসেন মিলন, ডাঃ এনামুর রহমান, এ্যাডভোকেট নাভানা আখতার, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, জাতীয় পার্টির মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা ও পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই নির্বাচন নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এ নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্রের সুষ্ঠু ভিত তৈরি হয়েছে। নির্বাচন বাঞ্চালের জন্য বিএনপি-জামায়াত অনেক সন্ত্রাস করেছে। অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নাহলে দেশে গণতন্ত্র থাকত না, দেশ মুখ থুবড়ে পরত। বিএনপি-জামায়াত মনে করেছিল জনগণ তাদের সঙ্গে আছে। কিন্তু জনগণ তাদের সন্ত্রাসী কমর্কা- প্রত্যাখ্যান করেছে। এরমধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ প্রমাণ করেছে তারা এদেশের ধ্বংসাত্মক রাজনীতির স্থান দেবে না। মাদক তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে মাদক বিরাট সমস্যা। এর প্রভাব সুদূর প্রসারী। মাদক তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। মাদক ধরা পড়ছে, কিন্তু ব্যবসায়ীরা ধরা পড়ছে না। ব্যবসায়ীরা ধরা না পড়লে এ সমস্যার সমাধানও হবে না। শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, শিক্ষার মান ধরে রাখা যাচ্ছে না। শিক্ষার হার বাড়ছে, বিনামূল্যে বই দেয়া হচ্ছে, শিক্ষা অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু শিক্ষার মান বাড়ছে না। এজন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ভাল শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। কারণ একজন শিক্ষক নিয়োগ দিলে ৩০ বছর তিনি থাকেন। তাই শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে যতœবান হতে হবে। আর বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্তি বন্ধ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা যাবে না। এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে সরকারী দলের এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন, অর্থনীতির অগ্রগতি, সুশাসন, স্থিতিশীলতা, শান্তি ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। কিন্তু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রধান অন্তরায় গুলশান ২ নম্বরে অবস্থিত নাইট ক্লাবের মালিক বেগম খালেদা জিয়া। তিনি (খালেদা) স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের শত্রু। তিনি মানবতা, শান্তি, উন্নয়ন, প্রগতি, সভ্যতা ও দেশের জনগণের শত্রু। খালেদা জিয়াকে পেট্রোলবোমা ফ্যাক্টরির ‘ম্যানেজিং ডাইরেক্টর’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, উনি (খালেদা) হত্যা, সন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্যের মাস্টার মাইন্ড। পেট্রোলবোমা কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক খালেদা জিয়া। জঙ্গীবাদের প্রজনন কেন্দ্র, আইএসআই’র এজেন্ট এবং আন্তর্জাতিক সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের পৃষ্ঠপোষক। তাকে মুক্ত দুনিয়ায় অবাধ বিচরণ করতে দেয়ার অর্থ দাঁড়ায় লোকালয় বা বসত ঘরে কালনাগিনী বিষাক্ত গোখরা সাপ পোষা বৈ আর কিছুই হতে পারে না। বিষাক্ত কালনাগিনীকে বিশ্বাস করা যায়, তবে খালেদাকে বিশ্বাস করা যায় না। তার দল ও জোটকেও না। ১৯৭৫ সালের ৭ নবেম্বর নিহত মুক্তিযুদ্ধকালীন সেক্টর কমান্ডার ও ‘কে’ ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল (অব) খালেদ মোশাররফের কন্যা সংসদ সদস্য বেগম মাহজাবিন খালেদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে এদেশে হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চালু করেন খুনী জিয়াউর রহমান। সেই কারাগারে জাতীয় চার নেতার হত্যার সঙ্গে জড়িত এবং জিয়াউর রহমানের নির্দেশেই ৭ নবেম্বর আমার বাবা খালেদ মোশাররফ, এটিএম হায়দারসহ অসংখ্য সামরিক অফিসারকে হত্যা করা হয়। তিনি বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। আওয়ামী লীগের মীর শওকত আলী বাদশা এমপিওভুক্তিতে বরাদ্দ না রাখার সমালোচনা করে বলেন, এই সংসদের ৩৪৯ জন সদস্য এমপিওভুক্তি অব্যাহত রাখার পক্ষে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী বিষয়টি কেন গুরুত্ব দিচ্ছেন না বুঝি না। এ ব্যাপারে তিনি বাজেট বরাদ্দের দাবি জানান।
×