ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুস্থরা চাল পায়নি

রৌমারীতে চার মাসেও ভিজিডি তালিকা প্রকাশ হয়নি

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

রৌমারীতে চার মাসেও ভিজিডি তালিকা প্রকাশ হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ রৌমারীর কয়েকটি ইউনিয়নে চার মাসেও ভিজিডির তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। ভিজিডি (দুস্থ মহিলা উন্নয়ন) কর্মসূচীর তালিকা নিয়ে চলছে লুকোচুরি খেলা। দুস্থদের তালিকা চূড়ান্ত ও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না করে নানা ঘটনার জন্ম দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। ভিজিডি কমিটির সভাপতির গাফিলতি, অবহেলা এবং তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম ও অর্থ আদায়ে চেয়ারম্যানদের সহযোগিতা করার অভিযোগে উপজেলা ভিজিডি কমিটির বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও হয়েছে। আদালত ভিজিডি কমিটির চার সদস্যকে ১০ দিনের মধ্যে জবাব দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। অপরদিকে উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের বরাদ্দকৃত তিন হাজার ২৫৩ দুস্থ মহিলার চাল কাগজে-কলমে উত্তোলন দেখানো হলেও বাস্তবে তিন ইউনিয়নের সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়নি। উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দুস্থ মহিলাদের উন্নয়ন কর্মসূচী ভিজিডি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৪ মাস মেয়াদী পাঁচ ইউনিয়নে তিন হাজার ২৫৩ সুবিধাভোগীর নাম বরাদ্দ পাওয়া যায়। যা গত বছর ডিসেম্বর মাসে তালিকা প্রণয়ন কার্যক্রম শেষ করার কথা। এতে প্রতি দুস্থ পরিবার মাসে ৩০ কেজি গম অথবা ২৬ কেজি করে চাল পাবে। সরকারী নির্দেশনা অনুয়ায়ী, প্রতি ইউনিয়নের ইউনিয়ন কমিটি যাচাই-বাছাই করে তালিকা জমা দেবে উপজেলা কমিটির কাছে। এ কমিটি তা অনুমোদন করে জেলায় পাঠাবে। কিন্তু রৌমারীতে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে দুস্থ পরিবার প্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকা অর্থ আদায় করে তালিকা তৈরি করে। পরিষদের সদস্যদের কোন মতামত গ্রহণ করা হয়নি। ফলে ওই জটিলতা দেখা দিয়েছে। মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফারুক হোসেন জানান, বন্দবেড়, দাঁতভাঙ্গা ও সদর ইউনিয়নের তালিকা বিলম্বে পাওয়া গেলেও শৌলমারী আর যাদুরচর ইউনিয়নের তালিকা না পাওয়ায় উপজেলার দুস্থদের বাজেট বা বরাদ্দ বাতিল হওয়ার পথে ছিল। বরাদ্দ যাতে বাতিল না হয় সে জন্য একটা তালিকা দেখানো হয়েছে। এরই মধ্যে তিন ইউনিয়নে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের বরাদ্দ বিতরণ দেখানো হয়েছে। যাদুরচর আর শৌলমারী ইউনিয়নের তালিকা নিয়ে চেয়ারম্যান মেম্বারদের মাঝে মারামারি ও মামলার ঘটনায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। ওই দুই ইউনিয়নের বরাদ্দ কাগজে-কলমে উত্তোলন দেখানো হলেও আসলেই বিতরণ করা হয়নি। তবে দ্রুত তা সমাধান হবে বলে জানান তিনি। এদিকে তালিকা প্রণয়নে ব্যাপক অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে শৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চার সদস্য উপজেলা ভিজিডি কমিটির সভাপতি ইউএনও আব্দুল হান্নান, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফারুক হোসেন, শৌলমারী ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিনু ও পরিষদের সচিব আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করায় ভিজিডির কার্যক্রম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য শাহজাহান আলী, ৮নং ওয়ার্ড সদস্য নজরুল ইসলাম, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য হোসেনে আরা বেগম ও মাজেদা খাতুন বাদী হয়ে ওই মামলা দায়ের করেন। এই চার সদস্য অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সরকারী নীতিমালা বহির্ভূত ও সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় না করে তার একক সিদ্ধান্তে ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে ভিজিডি কর্মসূচীর তালিকা প্রণয়ন করে। এতে বরাদ্দকৃত ৪৪৮ জন দুস্থ মহিলার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেছেন। চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিনু তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই চার মেম্বার আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে। তাদের কোন অভিযোগ সত্য নয়।’ অপরদিকে যাদুরচর ইউনিয়নেও তালিকা প্রণয়নে অর্থ আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। উৎকোচ গ্রহণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ২৯ মার্চ পরিষদে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য আছমা খাতুনের স্বামী জহুরুল ইসলামের সঙ্গে ৫নং সদস্য মুনছুর আলীর মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সদস্য ও এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দাখিল করে। এখানেও চার মাসেও চাল বিতরণ করা হয়নি। যাদুরচর ইউপি চেয়ারম্যান সরবেশ আলী জানান, দু’একজন মেম্বার মিথ্যা অভিযোগ করেছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী জানান, উপজেলা মাসিক সভায় (সমন্বয় কমিটির সভা) ভিজিডি তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরলেও ইউএনও তার কর্ণপাত করেননি। তার একগুয়েমীর কারণেই বর্তমানে এ জটিলতা। উপজেলা ভিজিডি কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান নিজের গাফিলতির কথা অস্বীকার করে বলেন ‘কিছু ত্রুটি রয়েছে, তবে তা সংশোধন করা হচ্ছে। আর দুটি ইউনিয়নে একটা ঝামেলা হয়েছে সেটাও সমাধানের চেষ্টা চলছে। শৌলমারী ও যাদুরচর ইউনিয়নের তালিকাই চূড়ান্ত হয়নি-এ অবস্থায় বরাদ্দ উত্তোলন করা হলো কিভাবে। এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চূড়ান্ত তালিকা আমার কাছে রয়েছে এবং তার বলেই বরাদ্দ উত্তোলন করা হয়েছে। চেয়ারম্যান আর মেম্বারদের মাঝে দ্বন্দ্বের কারণে আর আদালতে মামলা হওয়ায় ওই দুই ইউনিয়নের বরাদ্দ বিতরণ করা হয়নি।’
×