ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

র‌্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

কাউকে সন্ত্রাস ও নৃশংস কর্মকাণ্ড চালাতে দেয়া হবে না

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৯ মার্চ ২০১৫

কাউকে সন্ত্রাস ও নৃশংস কর্মকাণ্ড চালাতে  দেয়া হবে না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাস এবং নৃশংস কর্মকা- কাউকে করতে দেয়া হবে না। তিনি জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে র‌্যাবসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, যে কোন মূল্যে স্বাধীনতার চেতনা সমুন্নত রাখতে হবে। আমরা বাংলাদেশের মাটিতে সন্ত্রাস ও নৃশংসতা করতে দেব না। এ কারণে র‌্যাবসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী চেন অব কমান্ড বজায় রেখে এবং বাহিনীর আইন, নিয়ম ও নীতি মেনে দায়িত্ব পালন করতে র‌্যাব সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা বিভিন্ন বাহিনী থেকে এসে র‌্যাবে যোগ দিয়েছেন। আপনি যে বাহিনী থেকেই আসুন না কেন, আপনাকে বাহিনীর চেন অব কমান্ড, আইন, নিয়ম ও নীতি মেনে চলতে হবে এবং দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আপনাকে আন্তরিক হতে হবে। শেখ হাসিনা শনিবার রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদর দফতরে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উপলক্ষে দরবারে ভাষণ প্রদানকালে এ কথা বলেন। খবর বাসসর। অনুষ্ঠানে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান এবং পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী র‌্যাব সদর দফতরে এসে পৌঁছলে এই বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলা করে দেশ এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ আসবে কখনও কখনও। তবে এ অবস্থা মোকাবেলা করে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং আমি দৃঢ় আশাবাদী, আমরা এগিয়ে যাবই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তথাকথিত আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোট মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। তিনি বলেন, তাদের আন্দোলন মানে জনগণকে পুড়িয়ে মারা এবং জনগণের সম্পত্তি ধ্বংস করা। শেখ হাসিনা বলেন, আমার জীবনে এ ধরনের আন্দোলন দেখিনি। আমার জীবন শুরু হয়েছিল আমার স্কুলজীবনে আন্দোলনের মধ্যদিয়ে। অতীতে জনগণকে সকল আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে দেখেছি। অথচ বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্তমান আন্দোলনে জনগণের কোন সম্পৃক্ততা দেখি না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালাচ্ছে। তিনি বলেন, যারা দেশের অগ্রগতি ও জনগণের কল্যাণ চায় না, তারাই জনগণকে পুড়িয়ে মারতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারা রীতিমতো অপরাধ। নির্মমভাবে অগ্নিদগ্ধদের মরতে হচ্ছে। যে সকল অগ্নিদগ্ধ বেঁচে থাকছেন, তাঁদেরও সারাজীবন এই যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে। জঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশে কোনভাবে জঙ্গীবাদী কার্যক্রম হতে দেব না। আমরা অবশ্যই বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপূর্ণ দেশে পরিণত করব। দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপকূলীয় ও পার্বত্য এলাকায় র‌্যাব সদস্য মোতায়েনের প্রতি গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি অবশ্যই ব্যাটালিয়ন সদস্য বৃদ্ধি এবং বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যখন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই বিএনপি-জামায়াত দেশকে পিছিয়ে দিতে হত্যা ও সন্ত্রাসের পথ অবলম্বন করছে। তিনি বলেন, ‘তারা ২০১৩ সালের মতো এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরের মতো একই ঘটনা ঘটতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।’ শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট শিশু, বৃদ্ধ, নারী, সাধারণ মানুষ এবং আইনশৃঙ্খলা সংস্থাগুলোর সদস্যদের হত্যা করেছে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা রেললাইন, বিআরটিসি বাস, ট্রাক, সিএনজি, সরকারী অফিস, বিদ্যুত কেন্দ্র, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ফুটপাতের দোকান পুড়িয়েছে এবং ধ্বংস করেছে। তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে জীবন ও সম্পদ রক্ষায় র‌্যাবসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও অশেষ ধৈর্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এ কারণে তিনি সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। গত ছয় বছরে র‌্যাবের উন্নয়নে তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন ব্যাটালিয়ন চালু করা হয়েছে এবং ১১ ব্যাটালিয়নের জন্য স্থায়ীভাবে ভূমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, গাজীপুরে র‌্যাব সদর দফতর এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য স্থায়ীভাবে ভূমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি র‌্যাবের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, র‌্যাবের পরিচালন সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমরা দুটি হেলিকপ্টারসহ প্রয়োজনীয় যানবাহন বরাদ্দ দিয়েছি। অপরাধ দমনে এবং অপরাধীদের গ্রেফতারের জন্য র‌্যাবকে হাইটেক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিতে সুসজ্জিত করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্যিকারার্থেই র‌্যাব এখন একটি এলিট ফোর্স। র‌্যাবের আরও আধুনিকায়ন এবং এটিকে সময়োপযোগী করে তুলতে প্রয়োজনীয় সবকিছুই আমরা করব। অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়কে জঘন্য অপরাধ অভিহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, র‌্যাব অনেক ঘৃণ্য অপরাধীকে আটকের মাধ্যমে অপহৃত অনেক শিশু ও অনেক লোককে উদ্ধার করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি অপহৃতদের উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সফল অভিযান যথাযথভাবে উপস্থাপন না করার জন্য মিডিয়ার একটি বিশেষ মহলের সমালোচনা করেন। ‘অপহরণের ঘটনা খবরের কাগজে যেভাবে কাভারেজ দেয়া হয় একই ক্ষেত্রে অপহৃতকে উদ্ধারের ঘটনায় সেভাবে কাভারেজ দেয়া হয় না, এটা দুর্ভাগ্যজনক।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে জঙ্গী ও বনদস্যুদের আস্তানা ধ্বংসে র‌্যাব সফল ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন, অসৎ ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি, জাল মুদ্রা চক্র, ভুয়া পাসপোর্ট ও অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার অপচেষ্টা রোধে এলিট ফোর্সের সদস্যরা কার্যকর অভিযান পরিচালনা করছে। তারা ভেজাল প্রতিরোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে। এর মাধ্যমে ঘটনাস্থলেই সাজা প্রদান ও জরিমানা আদায় করে জনজীবনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনছে। শেখ হাসিনা বলেন, র‌্যাব সদস্যরা চরমপন্থী জঙ্গীদের নির্মূলে বিরতিহীন অভিযান পরিচালনা করছে এবং তারা গ্রেফতারের মাধ্যমে অনেক জঙ্গীকে আইনের আওতায় এনেছে। এর ফলে জঙ্গী সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়ছে। তিনি বলেন, জঙ্গী দমনে আমরা সফল হয়েছি এবং এই সাফল্য জাতিকে আশাবাদী করে তুলেছে এবং বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সফল অভিযান পরিচালনা করে এই বাহিনী বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এবং অপরাধ দমন সহজ হয়েছে। পরে প্রধানমন্ত্রী র‌্যাবের ছয়টি স্থাপনা উদ্বোধন করেন এবং তিনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। উদ্বোধনের পর তিনি র‌্যাব কমান্ডারদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন।
×