ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বকাপের সেরা দশ মুহূর্ত

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৭ মার্চ ২০১৫

বিশ্বকাপের সেরা দশ মুহূর্ত

গ্রুপপর্বের খেলা শেষ ্র অপেক্ষা এখন কোয়ার্টার ফাইনালের ্র ইতোমধ্যেই অনেক চমকপ্রদ ঘটনার জন্ম দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে চলমান একাদশতম বিশ্বকাপ ্র গ্রুপপর্ব শেষে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো ১. আবির্ভাব পাকিস্তানের ডানহাতি ব্যাটসম্যান সরফরাজ আহমেদ। সুযোগ পাচ্ছিলেন না দলে। আর প্রথমবার সুযোগ পেয়েই নিজের জাত চেনান তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে উইকেটের পেছনে ছয়টি ক্যাচ নেয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে করেন ৪৯ রানের ঝলমলে এক ইনিংস। এরপর রবিবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও করলেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। একাদশতম বিশ্বকাপে মাত্র দুই ম্যাচ খেলেই তার সংগ্রহে ১৫০ রান। টানা দুই ম্যাচে ব্যাক টু ব্যাক ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়ারও কীর্তি গড়েন ২৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। ২. ছোট দলের বড় তারকা টেস্ট খেলারও অধিকার নেই। আইসিসির সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে হয়ত পরের বিশ্বকাপেও খেলতে পারবেন না। তবে নিজের প্রতিভার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন ঠিকই। ‘মিনোজ’দের প্রতিনিধি হিসেবে গ্রুপ পর্বের ৬ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়ে সবাইকেই চমকে দিয়েছেন স্কটল্যান্ডের জশ ডেভি। এবারের বিশ্বকাপে তাঁর চেয়ে বেশি উইকেট আছে কেবল একজনেরই। ৫ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্কের দখলে ১৬ উইকেট। ৩. হঠাৎ মাঠে পোকা ১৩ মার্চ হ্যামিলটনের সেডন পার্কে মুখোমুখি বাংলাদেশ এবং নিউজিল্যান্ড। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ গড়ল ২৮৮ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর। তবে এই স্কোর গড়ার পথটি খুব বেশি মসৃৃণ ছিল না। একে তো কঠিন প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। তার ওপর এ দিন মাঠে ছিল অসংখ্য পোকার আক্রমণ। অনাকাক্সিক্ষত এ সব অতিথির আক্রমণে বেশ কয়েকবার অতিষ্ঠ হয়ে উঠতে দেখা গেছে টাইগারদের। শুধু কী টাইগাররা, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটাররাও এ পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচতে পারেননি। দুই দলের ক্রিকেটাররাই পোকার আক্রমণে বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন। হঠাৎই একবার দেখা গেল হেলমেট এবং গ্লাভস খুলে হাত-পা চুলকাচ্ছেন বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে শতক করা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককুলামকে তো চিৎকার করে স্প্রে চাইতেও দেখা গেছে। ৪. গেইল ঝড় বিশ্বকাপের আগে একেবারেই নিষ্প্রভ ছিলেন ক্রিস গেইল। অবসরের প্রস্তাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ক্রিকেটারের কাছে টুইটও করেছিল। তবে জাত চ্যাম্পিয়ন বলে কথা। টুইট করার মাত্র দুদিন পরই জ্বলে উঠলেন গেইল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে মাত্র ১৪৭ বলে খেললেন ২১৫ রানের ঝলমলে এক ইনিংস, যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। তাঁর তা-ব দেখে ক্রিকেটপ্রেমীরাও মুগ্ধ-বিমোহিত। অনেকেই মন্তব্য করেছেন এ তা-ব ক্রিস গেইলের পক্ষেই কেবল সম্ভব। আর এই রান রেটে এগিয়ে থাকার কারণেই টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৫. সাঙ্গার টানা ৪ সেঞ্চুরি বয়সে সাঁইত্রিশকেও ছাড়িয়ে গেছেন কুমার সাঙ্গাকারা। কিন্তু তারপরও ব্যাট হাতে অপ্রতিরোধ্য এই শ্রীলংকান ব্যাটসমান। বিশেষ করে একাদশতম বিশ্বকাপে যেন উড়ছেন তিনি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে টানা চার ম্যাচে সেঞ্চুরি করার অসামান্য মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। শুধু তাই নয়, এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় সবার উপরে অবস্থান করছেন সাঙ্গাকারা। ৬ ম্যাচে তার দখলে ৪৯৬ রান। দুইয়ে থাকা জিম্বাবুইয়ের ব্রেন্ডন টেইলরের রান ৪৩৩। ৬. ভারতের ইতিহাস এর আগে ১৯৯২, ১৯৯৯ এবং ২০১১ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয়েছিল ভারত। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার সবটির লজ্জাজনক হার মানে ভারত। অবশেষে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ব্যর্থতার সেই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। দীর্ঘ ২৩ বছর পর একাদশতম বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাল মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। এবার ভারত ১৩০ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে প্রোটিয়াদের। শুধু তাই নয়, এখন পর্যন্ত খেলা বিশ্বকাপের সব ম্যাচেই জয়ের দেখা পেয়েছে ভারত। ফলে শিরোপাটা নিজেদের করে রাখারও ইঙ্গিত দিচ্ছেন ধোনি-কোহলিরা। ৭. মিসবাহর মাইলফলক বয়স ৪০। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের সবচেয়ে বেশি রান তাঁর। গ্রুপপর্বের প্রথম ছয় ম্যাচ শেষে তার দখলে ৩১৬ রান। টুর্নামেন্টে যুগ্মভাবে সবচেয়ে বেশি হাফসেঞ্চুরিও তাঁর দখলে (৪টি)। বিশ্বকাপের মাঝেই ৫০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। তবে আশ্চার্য্য বিষয় হলো এর মধ্যে একটিও শতরানের ইনিংস নেই পাকিস্তানের অধিনায়ক মিসবাহ-উল হকের। ৮. তবু নায়ক রুবেল চিত্রনায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপির মামলায় বিশ্বকাপের ঠিক আগেই কারাগারে যেতে হয় বাংলাদেশের পেসার রুবেল হোসেনকে। কিন্তু বিশ্বকাপে খেলার জন্য জামিনে মুক্তি পান তিনি। আর বিশ্বকাপের বিশাল মঞ্চেই জ্বলে উঠেন রুবেল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন রুবেল হোসেন। ৯. বেল উড়লেও নট আউট! এ যেন অবিশ্বাস্যই! আয়ারল্যান্ডের ইনিংসের দশম ওভারের চতুর্থ বল। বোলার তখন আমজাদ হোসেন। ব্যাটিংয়ে এড জয়েস। বোলার অফ স্ট্যাম্পের উপর ইয়র্কার করলেন। বল লাগল স্ট্যাম্পে, বেল উড়ল আকাশে, জ্বলে উঠল রেড লাইট! কিন্তু না! সবাইকে হতভম্ব করে দিয়ে বেল আবার ঠিকঠাক বসে পড়ল জায়গামতো! নট আউট! কি বলবেন একে? মীরাকল? যদিও এই বিশেষ ধরনের রেড বাতিসমৃদ্ধ বেলগুলো সাধারণ বেলের তুলনায় একটু ভারি। তারপরও এমন ঘটনায় সকলেই হতভম্ব। তবে এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০০৫ সালে ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মোহাম্মদ আশরাফুলও একবার এভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন ভাগ্যের জোরে। ১০. মাহমুদুল্লাহর রেকর্ড মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সৌজন্যে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শতরানের ইনিংস দেখে বাংলাদেশ। আর ইংলিশদের বিপক্ষে তাঁর শতরানের ওপর ভিত্তি করে জয় দেখে টাইগাররা। সেই সঙ্গে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালেও উঠে বাংলাদেশ। এরপর গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন মাহমুদুল্লাহ, যা প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে টানা দুই ম্যাচে টানা দুই সেঞ্চুরির অবিস্মরণীয় রেকর্ড।
×