ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভদ্রলোকের মতো কোর্টে গিয়ে আত্মসমর্পণ করুন

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৩ মার্চ ২০১৫

ভদ্রলোকের মতো কোর্টে গিয়ে আত্মসমর্পণ করুন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা মোতাবেক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়াকে ‘ভদ্রলোকের মতো’ আদালতে আত্মসমর্পণ করা উচিত। কারণ এটাই ভদ্রলোকের নিয়ম। অন্যথায় দেশের জনগণ তাঁকে ছাড়বে না এবং উনি দেশের মানুষের সামনে যেতে পারবেন না। ওয়ারেন্ট ইস্যু হওয়ায় আইন-আদালত মেনে খালেদা জিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ে হরতাল, অবরোধের আগুনে দগ্ধ ও ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে আর্থিক সহায়তা প্রদানকালে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশের যে ক্ষতি বিএনপি-জামায়াত জোট করেছে, তাতে জনগণের অভিশাপেই এ দলগুলো একদিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তবে আইনগত যে ব্যবস্থা নেয়া দরকার সেটা আমরা নেব। বিএনপি নেত্রীর নির্দেশেই দেশজুড়ে জঙ্গী কায়দায় সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। আর এ অপরাধের জন্য তাঁকে আইনের আওতায় আনা হবে। বৃহস্পতিবার বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটের চলমান হরতাল, অবরোধ ও অগ্নি হামলায় নিহত ৪ জনের পরিবার ও আহত ৩৩ ব্যক্তি এবং ক্ষতিগ্রস্ত ১৯৯ বাস-ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনের মালিকসহ মোট ক্ষতিগ্রস্ত ২৩৬ জনের হাতে ৫ কোটি ৪২ লাখ ৮ হাজার টাকার চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। এ নিয়ে তৃতীয় বারের মতো হরতাল-অবরোধে নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে অর্থ বিতরণ করলেন তিনি। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত চার জনের স্বজনদের হাতে ১০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র তুলে দেন। পেট্রোলবোমায় নিহত সোহাগের মা দৃষ্টিহীন সেলিনা বেগমকে পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের পাশাপাশি প্রতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ৫ হাজার টাকা করে আজীবন মাসোহারা দেয়ার ঘোষণা দেন তিনি। পেট্রোলবোমায় নিহত পুলিশ কনস্টেবল শামীম মিয়ার বাবা লাল মিয়া আকন্দকে ১০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র দেয়ার পাশাপাশি তার স্ত্রী মোসাম্মৎ বিলকিস বেগমকেও ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেয়া হয়। এছাড়া নিহতদের স্বজন ও আহতদের প্রত্যেককে দশ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ধ্বংসাত্মক রাজনীতি বন্ধ করার জন্য খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে ধ্বংসের পথে নিতে চান। মানুষ যখন আর্থিকভাবে সচ্ছল, শান্তিতে বসবাস করছে, যখন তারা সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে তখনই খালেদা জিয়ার নির্দেশে তা-ব চালাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া আইন-আদালত কিছুই মানেন না। উনার দুর্নীতির মামলার ৬৭ বার হাজিরার তারিখ ছিল। কিন্তু উনি মাত্র ৭ দিন আদালতে গেছেন। অধিকাংশ দিন আদালতে হাজির না হয়ে উনি মূলত আদালত অবমাননা করেছেন। সর্বশেষ বিএনপি নেত্রী তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে আদালতে গিয়ে আদালতের কাছে আইনজীবীদের লাঞ্ছিত ও গাড়ি পুড়িয়ে আদালতের মর্যাদা ক্ষুণেœর চেষ্টা করেছেন। মানুষ পুড়িয়ে হত্যার জন্য বিএনপি-জামায়াত চক্রের তীব্র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত চক্র আড়াই মাস ধরে হরতাল ও অবরোধ দিয়ে এবং অগ্নি হামলার মাধ্যমে জনগণের জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে। এ চক্রের নৃশংস হামলায় অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। অনেকে পঙ্গু এবং নিঃস্ব হয়েছে। জনগণের জন্য নয়, নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই তারা রাজনীতি করে। বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) পত্রিকায় দেখলাম একটি ছোট্ট শিশু ৩৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা গেছে। এই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় তিনি (খালেদা জিয়া) কী জবাব দেবেন? এই শিশুটির কি অপরাধ ছিল? সাধারণ দরিদ্র মানুষের ওপর তার কেন এই জুলুম? আসলে তাদের মানবিক অনুভূতি বা মনুষ্যত্ব বলে কিছু নেই। গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার অবস্থানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি বাড়ি ছেড়ে অফিসে গিয়ে বসে থাকলেন। অফিসে কী মধু আছে জানি না। তিনি অফিস থেকে বের হন না। তিনি (খালেদা জিয়া) ওই কার্যালয়ে বসে এবং তার ছেলে লন্ডনে বসে হুকুম দেয়। এ দু’জনের হুকুমে তাদের সন্ত্রাসী ক্যাডাররা পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করছে। কারণ ধ্বংস করাই তাদের কাজ। বিএনপি জোটের চলমান সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জ্বালাও-পোড়াও, সম্পদের ক্ষতি ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা কোন রাজনৈতিক আন্দোলন হতে পারে না। এটা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। তবে মানুষের শক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি। যারাই এ ধরনের জ্বালাও-পোড়াও করবে সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, ধরতে হবে। এভাবেই তাদের থামাতে হবে। চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশংসা করে তিনি বলেন, তারা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত ৬ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধ চালিয়ে আসছে বিএনপি-জামায়াত জোট। দু’মাসেরও অধিক হরতাল-অবরোধের নামে সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১১৯ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের অর্ধেকের বেশি দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। অবরোধে ১ হাজার ৮শ’ গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করা হয়েছে। চলমান অবরোধ-হরতালে পেট্রোলবোমায় দগ্ধদের বার্ন ইউনিটে দেখতে গিয়ে প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে অনুদান দেন প্রধানমন্ত্রী। আহত বেশ কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৫৬ গাড়ির ১৪৬ জন মালিককে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সহায়তার চেক হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী। সেদিন মোট চার কোটি ২০ লাখ টাকা সহায়তা হিসেবে দেন তিনি। গত দুই মাসের বেশি সময়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের রাজনৈতিক কর্মসূচীতে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের এ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ১৪ কোটি ৬২ লাখ ৭৩ হাজার টাকার সহায়তা দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৬০ লক্ষ টাকার অনুদান ॥ এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে ৫০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে বাংলাদেশ ইনসুরেন্স এ্যাসোসিয়েশন। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব একেএম শামীম চৌধুরী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। চেক হস্তান্তরের সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইনসুরেন্স এ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আহসানুল হক খান টিটু ও সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক খান। এছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিকও ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১০ লাখ টাকা অনুদান দেন।
×