ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘মানুষ মেরে, অর্থনীতি ধ্বংস করে রাজনীতি করবেন না’

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৯ জানুয়ারি ২০১৫

‘মানুষ মেরে, অর্থনীতি ধ্বংস করে রাজনীতি করবেন না’

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আমরা ব্যবসায়ীরা আজ অসহায় ও জিম্মি হয়ে পড়েছি। মানুষ মেরে, অর্থনীতি ধ্বংস করে রাজনীতি করবেন না। অর্থনীতি সচল রেখে শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করুন। তিলে তিলে গড়া ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ব্রান্ড আজ প্রশ্নবিদ্ধ। ‘বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশ আজ রক্তাক্ত বাংলাদেশ’। ‘যে গণতন্ত্র পেট্রোলবোমার কাছে জিম্মি আমরা তা চাই না’। বোমা মেরে রুটি রুজি বন্ধ করা হয়েছে। শিল্প ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। ‘আমরা রাজনীতি করি না। আমাদের নীতি ব্যবসা করা। আমরা শান্তি চাই’। বুধবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ কার্যালয়ের সামনে পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত ৫০টি সংগঠনের মানববন্ধনে বক্তারা এসব দাবি জানান। দেশে চলমান রাজনৈতিক কর্মসূচীতে পোশাক শিল্প তথা সামগ্রিক অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তা থেকে রেহাই পেতে পোশাক শিল্পের প্রধান তিন সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ’র নেতৃত্বে এ কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। এতে পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত সব সংগঠনের বাইরে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক ও চালক সমিতি, গাড়ি ব্যবসায়ী সমিতি, ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তা সমিতি, ইন্সুরেন্স এ্যাসোসিয়েশন, পোশাক শিল্পের বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নগুলোও অংশ নেয়। মানববন্ধনে মূল বক্তব্যে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আজ অপারগ হয়ে আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। এটি আমাদের কাজ নয়। আমাদের কাজ উৎপাদনমুখী কর্মকা-ের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করা, সেই সঙ্গে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।’ রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা রাজনীতি করেন, দেশ চালান আর আমরা অর্থনীতি সচল রাখার কাজ করি। মানুষ মেরে, অর্থনীতি ধ্বংস করে রাজনীতি করবেন না। অর্থনীতি সচল রেখে শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করুন।’ গভীর অসহায়ত্ব আর হতাশা নিয়ে তিনি বলেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে পোশাক শিল্প কঠিন ইমেজ সংকটে, সেই সঙ্গে অস্তিত্ব সংকটে পড়তে চলেছে। শুধুমাত্র ইমেজ সংকটের কারণে আজ আমাদের ব্যবসা হারানোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তিলে তিলে গড়া ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ব্রান্ড আজ প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি বলেন, গত ২২ দিনের অবরোধের কারণে ক্রেতারা আমাদেরকে বলে, ইউ আর এগইন ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন। ক্রেতাদের এ মেসেজ শিল্পের জন্য একটি অশনী সংকেত। বিজিএমইএ সভাপতি রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে বলেন, ‘শিল্পকে বাঁচিয়ে রাজনীতি করুণ। বিরাজমান অচলাবস্থার অবসান করুন। সুষ্ঠু ব্যবসার পরিবেশ নিশ্চিত করুন।’ বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘রাজনৈতিকদলগুলোর পাশাপাশি সরকারের কাছেও আমাদের দাবি রয়েছে। সেই দাবির অন্যতম হচ্ছে ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ ও জানমালের নিরাপত্তা। এছাড়া যারা শিল্প আর অর্থনীতি নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন।’ তিনি বলেন, ‘অর্থনীতির পাশাপাশি নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে। এটি এ মুহূর্তে থামানো না গেলে নিশ্চিতভাবেই একটি নেতিবাচক বার্তা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। আর তাই, যারা এ ধরনের ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদেরকে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সামারী ট্রায়াল করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন।” বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সময়মতো (টাইম বাউন্ড) পোশাক শিল্পের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। রাজনীতিবিদদের কাছে আমরা ব্যবসায়ীরা আজ অসহায় ও জিম্মি হয়ে পড়েছি।’ আতিকুল ইসলাম বলেন, এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে শ্রীলঙ্কার মতো করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে। শিল্প চলে যাবে অন্য দেশে। তিনি রাজীতিবিদদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের আকুল আবেদনÑ অর্থনীতির ক্ষতি হয় এমন কর্মসূচী দিবেন না। কিভাবে ব্যাক টু ব্যাক এলসি আর ব্যাংক লোন শোধ করবো তার দায়িত্ব আপনারা রাজনীতিবিদদের ওপর দিলাম।’ টেক্সটাইল শিল্প কারখানার মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা তপন চৌধুরী বলেন, আমরা একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। অনেকে আগুনে পুড়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। আবার অনেকে মারা গেছেন। এটি কোন রাজনীতি হতে পারে না। তিনি বলেন, আজ দেশ বাঁচাতে; শিল্প বাঁচাতে আমরা রাস্তায় আসতে বাধ্য হয়েছি। রাজনীতিবিদ যারা দেশ চালান তাদেরকে বলবো, দয়া করে এমন কোন কর্মকা-ে জড়িত হবেন না যাতে দেশ-জাতি, অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাজনীতিবিদের কাছে আকুতি জানিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, দয়া করে আমাদের বাঁচতে দিন। নীট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এম আসলাম সানি বলেন, অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে আমরা আছি। ক্রেতারা বাংলাদেশে আসতে চাচ্ছে না। মালিক তার পণ্য বিক্রি করতে পারছে না। শ্রমিক তার মজুরি পাওয়ার নিশ্চয়তা পাচ্ছে না। কৃষক তার শষ্য বিক্রি করতে পারছে না। এখন রাজনীতির নামে যা হচ্ছে; তা অপরাজনীতি। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ প্রতিবাদ শিল্প রক্ষার প্রতিবাদ, কৃষকের উৎপাদিত ফসলের নায্যমূল্য পাওয়ার প্রতিবাদ। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশ আজ রক্তাক্ত বাংলাদেশ’। আমরা আশা করবো রাজনৈতিক দলগুলো দেশের স্বার্থে শান্তিপূর্ণ কর্মকা- পরিচালনা করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এক্সপোটার্স এ্যাসেসিয়েশন বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, আমরা শান্তি চাই। কোন সহিংসতা চাই না। নির্বিঘেœ ব্যবসা করতে চাই। আমরা আশা করবো রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবেন। বিজিএমইএর আরেক সাবেক সভাপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস বলেন, আমরা এ সংকটাপন্ন অবস্থার শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। শিল্প রক্ষা করতে চাই। রাজনৈতিকদলগুলোর কাছে এর তাৎক্ষণিক সমাধান দাবি করেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপার্সনকে দেয়া স্মারকলিপিতে পোশাক শিল্পের নেতারা বৃহত্তর স্বার্থে পোশাক শিল্পকে সকল ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচীর আওতামুক্ত রাখার দাবি জানান। অতীতে পোশাক শিল্পকে হরতালের আওতামুক্ত রাখার কথাও তাঁকে স্মরণ করিয়ে বলেন, একইভাবে এবারও পোশাক শিল্প, সেই সঙ্গে পোশাক শিল্পসহ সংশ্লিষ্ট সকল ফরোয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড শিল্পের সাপ্লাই চেইন অব্যাহত রাখতে পণ্যবাহী ট্রাক/ কাভার্ডভ্যানকে হরতাল/ অবরোধসহ সকল ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচীর আওতামুক্ত রাখার জন্য অনুরোধ করেন তারা।
×