ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রধান আসামির রিমান্ড নামঞ্জুর ॥ প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ, দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৮ জানুয়ারি ২০১৫

প্রধান আসামির রিমান্ড নামঞ্জুর ॥ প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ, দুর্ভোগ

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জে চাঞ্চল্যকর আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক ও যুবলীগ নেতা রফিক হত্যা মামলার প্রধান আসামি, দুর্ধর্ষ শাহাবুদ্দিন খান বাবুর রিমান্ড না দেয়ার প্রতিবাদে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক অবরোধ করেছে এলাকাবাসী। শনিবার বেলা ১১টার দিকে বৃষ্টির মধ্যেই এলাকার সহস্রাধিক মানুষ ও নিহতদের স্বজনরা মানববন্ধন করে মহাসড়কের মাওয়া চৌরাস্তা পয়েন্টে অবরোধ করে। এ সময় মহাসড়কের উভয়প্রান্তে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে। প্রায় সোয়া ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বেলা সোয়া ১২টায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। প্রথম দফা রিমান্ডে আসামি বাবুর কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের পরও দ্বিতীয় দফা রিমান্ড না দেয়ায় বাদীপক্ষসহ এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। আইন বিভাগের উচ্চপদে আসীন একজন কর্মকর্তার নাতি এই খুনীচক্রের সঙ্গে আসামি থাকায় দুর্ধর্ষ বাবুকে রিমান্ডে দেয়া হচ্ছে না বলে এলাকায় অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে ওই কর্মকর্তার আশীর্বাদে তার নাতি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হওয়া সত্ত্বেও খুব সহজেই জামিনে বের হয়ে এসেছে। রিমান্ড না দেয়ার প্রতিবাদে এলাকাবাসী শনিবার সকাল বেলা ১১টায় মাওয়ায় মানববন্ধনসহ ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক অবরোধ করে। মানববন্ধন ও অবরোধে অংশ নেয়া নিহত যুবলীগ নেতা রফিকের স্ত্রী হ্যাপি বেগম জানান, সাহাবুদ্দিন বাবু একের পর এক হত্যাকা- ঘটিয়ে চলেছে। সর্বশেষ আমার স্বামী রফিকও তার আক্রোশের শিকার হয়ে খুন হলো। এরকম দুর্ধর্ষ খুনীকে জামিন দিলে সে সমাজে আরও খুনের ঘটনা ঘটাতে পারে। তার উপযুক্ত বিচার হওয়া দরকার। আর ন্যায়বিচারের স্বার্থে বাবুকে আরও পুলিশ রিমান্ডে দেয়াও প্রয়োজন। নিহত রফিকের পাঁচ বছরের মেয়ে রাইসা মায়ের সঙ্গে মানববন্ধনে অংশ নিয়ে তার বাবা হত্যার বিচার দাবি করে। নিহত মোবারক হোসেনের মেয়ে ও হত্যা মামলার বাদী ওয়াহিদা খান দিয়া বলেন, পুলিশ আমার বাবা হত্যা মামলাটির যথাযথ চার্জশীট দেয়নি। আমি ১০ জনকে আসামি করলেও মাত্র তিনজনকে আসামি করেছে পুলিশ। আমি নারাজি দিয়েও সুবিচার পাচ্ছি না। ২০০১ সালের ১৭ অক্টোবর মতিঝিলে নিজ অফিসে খুন হন মাওলানা আব্দুল কাদের। ওই হত্যা মামলার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন আমার বাবা। আর সেজন্য আমার বাবাকে খুন করা হয়। ওই হত্যা মালার প্রধান আসামি বাবুর খালাত ভাই মোবাইল কাদের। ২০১০ সালে মোবাইল কাদেরের স্বজন আসাদুজ্জামান বাবু খুন হন। ওই মামলায় ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দিতে মোবাইল কাদেরের ছেলে সাহাবুদ্দিন খান বাবু খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে জবানবন্দী দিয়েছে। বাবু বেরিয়ে এলে আমাকেও ছাড়বে না। তাই বাবুর সঠিক বিচার হওয়া উচিত। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বাবুর ফাঁসি ও রিমান্ড দাবি করে স্লোগান দেয়। লৌহজং উপজেলার মেদিনীম-ল ইউপির ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোবারক হোসেন খান ও লৌহজং উপজেলা যুবলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলার প্রধান আসামি শাহাবুদ্দিন খান বাবু দীর্ঘদিন পালিয়ে থেকে গত ১ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জ আদালতে আত্মসমর্পণ করে। গত ৬ জানুয়ারি পুলিশ আদালতের কাছে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় গত শনিবার রাতে বাবুর স্বীকারোক্তিমতে ডিবি পুলিশ লৌহজং থানা পুলিশের সহযোগিতায় বাবুর বাড়ি হতে একটি দেশীয় তৈরি রিভলবার উদ্ধার করে। অবশেষে বৃহস্পতিবার পুলিশ ওই দুটি হত্যা মামলায় বাবুকে আরও ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। পুলিশের ধারণা বাবুর কাছে আরও অস্ত্র আছে। এসব অস্ত্র উদ্ধারসহ ওই হত্যা মামলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পুলিশ বাবুকে আরও ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। কিন্তু আদালতটির বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নার্গিস ইসলাম বাবুকে দ্বিতীয় দফা পুলিশী রিমান্ডে না দিয়ে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এতে এলাকাবাসী চরম ক্ষুব্ধ হয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে। এলাকাবাসী জানায়, বাবু অর্থ ও নানার জোরে আদালত থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে ঠিকই। আর এই হত্যাকারী বেরিয়ে আসলে এ এলাকায় আবার অশান্তি শুরু হবে। বাবুর হাতে আরও লোকজন খুন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
×