ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রায় নিয়ে হরতাল দেয়ায় জামায়াত ও ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২ জানুয়ারি ২০১৫

রায় নিয়ে হরতাল দেয়ায় জামায়াত ও ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল তাদের বিরুদ্ধে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকা এবং রায় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় জামায়াত ইসলামী এবং দলের ভারপ্রাপ্ত আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল, ছাত্র শিবিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, আইনজীবী তাজুল ইসলামসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বরাবর ৪৯ পৃষ্ঠার লিখিত অভিযোগটি দাখিল করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। যাঁদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন, জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত নায়েবে আমির মহিবুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুর রহমান এবং ছাত্রশিবিরের সভাপতি আব্দুল জব্বার ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আতিকুর রহমান। এছাড়া সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলাম। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে ট্রাইব্যুানাল-১-এ সোমবার এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম কোন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকায় আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হলো। এর আগেও ২০১২ সালের আইসিবি মিসসিলিনিযাস বিডি কেস নং ১৪ ও ১৫ তে ট্রাইব্যুনাল এ্যাডভোকেট তাজুল ইমলামকে সাবধান করে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে ক্ষমা করেন। তখন তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছিলেন। প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ জনকণ্ঠকে বলেছেন, দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে এটিই প্রথম মামলা। রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকায় সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর আগে ক্রিমিনাল সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থা তদন্ত শেষে চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করে তদন্ত সংস্থায়। এর মধ্যে কথা উঠে বর্তমান আইনে জামায়াতের বিচার সম্ভব নয়। তার পর প্রসিকিউশন পক্ষ ট্রাইব্যুনালে আর ফরমাল চার্জ দাখিল করেননি। আইনটি সংশোধন হওয়ার পর জামায়াতে বিরুদ্ধে ফরমান চার্জ দেয়া হবে বলে জানা গেছে। তার আগেই রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকায় জামায়াতের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হলো। উল্লেখ্য বুধবার চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মৃত্যুদ- প্রদান করেন। এই রায় ঘোষণার পর পর প্রতিক্রিয়ায় এ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন যে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়েছে সেটা গ্রহণ না করে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা হলেই সুবিচার হতো। যে তিন সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদ-াদেশ দেয়া হয়, তার একজন সাক্ষী ৬ কিলোমিটার, একজন ৩ কিলোমিটার এবং দেড় কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে রেলগাড়ি থেকে তাকে নামতে দেখেছেন। এই সাক্ষীর ভিত্তিতে ফৌজদারি আইনে বিচার করা যায় না। এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ফাঁসি তো দূরের কথা প্রসিকিউশনের জরিমানা করা হলে ভাল হতো।’ এ ছাড়া ঐ রায়ের প্রতিবাদে বুধ ও বৃহস্পতিবার জামায়াতে ইসলামী দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয়। পাশাপাশি জামায়াতের নেতৃবৃন্দ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নানা ধরনের মন্তব্য করেছেন। যা আদালত অবমাননার শামিল। বৃহস্পতিবার প্রসিকিউশনের একটি টিম জামায়াতসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রেজিস্ট্রারের দফতরে। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালূম, প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত, প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন, প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল ও প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালূম পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজহারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন যে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়েছেন, সেটা গ্রহণ না করে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা হলেই সুবিচার হতো’ তাজুলের এমন বক্তব্যে আদালত অবমাননা হয়েছে। বুধবার তাজুলের বক্তব্যের বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল-১-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। প্রসিকিউটর মালূম বলেন, জামায়াত নেতা এটিএম আজহারের রায়ের পর আসামিপক্ষ থেকে তাজুল ইসলাম যে বক্তব্য, অঙ্গভঙ্গি ও শব্দচয়ন করেছেন তা মোটেই আইনজীবীসুলভ ছিল না। এ অভিযোগ শুনে প্রসিকিউশনকে লিখিত অভিযোগ দাখিল করার পরামর্শ দেয় ট্রাইব্যুনাল। সে মোতাবেক বুধবার তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের রায় ঘোষণার আগে চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম তাঁর প্রারম্ভিক বক্তব্যে বলেছিলেন, সাক্ষীর বিচার-বিশ্লেষণে আমাদের ভুল হয়ে থাকলে অথবা আইনের ব্যাখ্যা ভুল থাকলে এর প্রতিকার পাওয়ার অধিকার সবার আছে। আমাদের রায়ে যে পক্ষই সংক্ষুদ্ধ হন তাঁরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যেতে পারেন। আইনের শাসনের বিশ্বাসী হয়ে কেউ রায়ের বিরুদ্ধে, রায় পছন্দ না হলে যে কোন সংঘাতময় কর্মসূচী দেবেন এটা অপ্রত্যাশিত। দেশে ২/১টি এবং বিদেশী কিছু গণমাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর এমনভাবে উপস্থাপন করে, যে দেশে ইসলামী ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে রায় দেয়া হয়েছে। একাত্তর সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করছি। তখন তাদের অবস্থানই আমাদের বিবেচ্য। আজকের অবস্থান কোনক্রমেই না। সম্পাদকীয় লিখে বিবৃতি দিয়ে সহিংস কর্মসূচী দিয়ে রায় পরিবর্তন করা যায় না। রায় পেতে হলে আইনের পথেই যেতে হবে। প্রারম্ভিক বক্তব্য শেষ হওয়ার পর আসামির বিরুদ্ধে রায় পড়া শুরু হয়। উল্লেখ্য, এর আগে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী এ দলটির সাত শীর্ষ নেতার রায়ের পর প্রতিবারই হরতাল ডাকা হয়েছে, বিভিন্ন স্থানে ঘটেছে সহিংসতার ঘটনা।
×