ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তামিম-ইমরুলের শতকে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থানে

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১৩ নভেম্বর ২০১৪

তামিম-ইমরুলের শতকে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থানে

মিথুন আশরাফ, চট্টগ্রাম থেকে ॥ ‘বোঝাপড়া মন্ত্রে’ কী সুন্দর দিনটিই না কাটাল বাংলাদেশ। কী সুন্দর দিনই না উপহার দিলেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। এই দুই ওপেনার মিলে ওপেনিং জুটিতে ২২৪ রানের রেকর্ড জুটিই গড়ে ফেলেছেন। আর সেই রেকর্ডে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশ মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ৩০৩ রান করে। এমন দিন এসেছে তামিম ও ইমরুলের মধ্যে ব্যাটিংয়ের সময় দারুণ ‘বোঝাপড়া’ থাকায়। এই বোঝাপড়ায় দুইজনই আবার শতকও করে ফেলেছেন। ইমরুল ১৩০ ও তামিম ১০৯ রান করে দলকে প্রথমদিনেই সুবিধাজনক স্থানে পৌঁছে দিয়েছেন। দিনের সেরা দুই ব্যাটসম্যান এ বিষয়টি আবার দিন শেষে বলেছেনও। অবশেষে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হওয়া তামিম খোলস থেকে বের হয়ে বলেছেন, ‘ইমরুলের সঙ্গে আমার বোঝাপড়া অনেক ভাল। তাই এমন ভাল খেলা যায়।’ আর ইমরুলের উপলব্ধি, ‘আসলে আমি এবং তামিম যখন উইকেটে থাকি, তখন ওর ভুল আমি ধরিয়ে দেই; আমার ভুল তামিম ধরিয়ে দেয়। সব তখন ভালই হয়। বোঝাপড়া ভাল থাকাতেই এমনটি হয়।’ এমনই বোঝাপড়া যে দুইজন মিলে বাংলাদেশকে রেকর্ডের একটি দিনই উপহার দিয়ে ফেলেছেন। উদ্বোধনী জুটিতে যে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৫শ’ রানের বেশি জুটির দেখা পেয়েছে, এর মধ্যে তিনটিই আবার তামিম-ইমরুল জুটি থেকেই এসেছে। এর আগে সর্বোচ্চ ১৮৫ রানের জুটি ছিল এই দুইজনেরই। এবার এ রেকর্ডকেও পেছনে ফেলে দিয়েছেন তামিম-ইমরুল। এ দুইজনের উইকেট তুলে নিতে জিম্বাবুইয়েকে ২২৪ রান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। এমন সময় গিয়ে সিকান্দার রাজার বলে মিডঅনে খেলতে গিয়ে হ্যামিল্টন মাসাকাদজার হাতে ধরা পড়েন তামিম। ভেঙ্গে যায় এ দুইজনের জুটি। এ জুটি ভাঙ্গার আগেই অবশ্য দুইজনই শতক করে ফেলেন। তামিম আবারও শতক করেন। খুলনা টেস্টে ১০৯ রানের পর চট্টগ্রাম টেস্টেও ১০৯ রানই করেছেন। দুই টেস্টে টানা শতক করেছেন তামিম। ‘ব্যাক টু ব্যাক’ ম্যাচে সেঞ্চুরিও হয়েছে। ২০১০ সালেও তামিম এমন কা- ঘটিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের টানা দুই ইনিংসে শতক করেছিলেন। তামিমের মতো ইমরুলও ‘ব্যাক টু ব্যাক’ শতক করেছেন। তবে এক সিরিজের দুই ম্যাচে নয়। চট্টগ্রামে সর্বশেষ যে এ বছর ফেব্রুয়ারিতে খেলেছিলেন ইমরুল, সেটিতেও শতক করেছিলেন। আবার দেশের মাটিতে যখন টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন। চট্টগ্রামেই খেলতে নেমেছেন। আবারও শতকই করেছেন। এ দুইজনের শতক করাও আবার রেকর্ডে স্থান পেয়েছে। তামিম ষষ্ঠ টেস্ট শতক করে দ্বিতীয়বারের মতো কোন সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে টানা দুই ম্যাচে শতক করার রেকর্ড গড়লেন। ১৭১ বলে ১৪ চার ও ১ ছক্কায় এ ইনিংস খেলেছেন। আর ‘হোম ভেন্যু’ চট্টগ্রামে প্রথম শতক পেলেন। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট শতক তুলে নিলেন ইমরুল। ২৫৭ বলে ১২ চার ও ২ ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটি খেলেছেন। তামিম, ইমরুলের শতকের কল্যাণে ওপেনিং জুটিতে প্রথমবার দুই ওপেনারের শতক দেখতে পেল বাংলাদেশও। এ জুটি ভাঙ্গতেই ব্যাট হাতে নামেন মুমিনুল হক। ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এ ব্যাটসম্যানও যথারীতি বড় ইনিংস খেলার ইঙ্গিতই দিচ্ছেন। অপরাজিত ৪৬ রান এরই মধ্যে করে ফেলেছেন মুমিনুল। তামিম আউটের পর ইমরুল ও মুমিনুল মিলে যেভাবে খেলছিলেন, মনে হচ্ছিল দিনটি এ দুইজনই শেষ করবেন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে গতবছর হারারেতে একদিনে যে এর আগে সর্বোচ্চ ৩০০ রান করেছিল বাংলাদেশ, সেই রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলবেন। কিন্তু দলীয় ২৭২ রানে গিয়েই বিপত্তি ঘটে। মাসাকাদজার বলে আউট হয়ে যান ইমরুল। ইমরুল-মুমিনুল ৪৮ রানের জুটিও ভেঙ্গে যায়। দিন শেষ হওয়ার ১১ ওভার বাকি থাকতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় উইকেট হারায়। তবে বাংলাদেশ ঠিকই জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে একদিনে করা সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি ভেঙ্গে ফেলে। কিন্তু সেই ভেঙ্গে ফেলায় মুমিনুলের সঙ্গী ইমরুল নন, থাকেন মাহমুদুল্লাহ (৫*)। আজ এ দুইজনই বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে ব্যাট হাতে নামবেন। দিন যখন শেষ হয় তখন বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে কত রান জমা হয়েছে, এ হিসেবের চেয়ে যেন মুখ্য হয়ে উঠে তামিম-ইমরুলের উদ্বোধনী জুটিতে রেকর্ডের বিষয়গুলোই। তাই তো সংবাদ সম্মেলনে তামিম ও ইমরুলকে পেয়ে শুধু ব্যক্তিগত প্রশ্ন-উত্তরই হলো। দল কী করেছে, সেই প্রশ্ন দূর আকাশে উড়াল দিল। এমন হওয়ারই কথা, তামিম-ইমরুল যে রেকর্ড জুটি গড়েছেন। সেই রেকর্ড জুটিতে বাংলাদেশও যে প্রথমদিনে বড় স্কোরই গড়ে ফেলেছে।
×