ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘের বিনিয়োগ সম্মেলনে ॥ বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরবে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ৪ নভেম্বর ২০১৪

জাতিসংঘের বিনিয়োগ সম্মেলনে ॥ বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরবে বাংলাদেশ

কাওসার রহমান ॥ অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে দুই দিনের বিশ্ব বিনিয়োগ সম্মেলন। বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরতে এ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ। বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রণোদনা, সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতি ও বিনিয়োগের বিদ্যমান সম্ভাবনা সম্পর্কে আলোকপাত করা হবে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক পিউ রিসার্স সেন্টারের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাণিজ্য উদারীকরণে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। আর দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ৪৪টি দেশের ওপর সম্প্রতি এক গবেষণার এ তথ্য প্রকাশ করেছে প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ফোর্বস। গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশ মুক্তবাজার ও বাণিজ্যের জন্য সহায়ক শক্তি হিসেবে এগিয়ে এসেছে। জরিপে অংশ নেয়া ৮০ শতাংশ মানুষ মনে করে বাংলাদেশ বাণিজ্য বিনিয়োগ উদারীকরণের জন্য সহায়ক। সেজন্য বাংলাদেশ এখন বিনোয়াগকারীদের স্বর্গরাজ্য। বাণিজ্য উদারীকরণের জন্য শীর্ষস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম। আর বাংলাদেশের পরের তিনটি দেশ হলো দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও আফ্রিকার দেশ ঘানা। বাণিজ্য উদারীকরণের উদাহরণ হিসেবে সম্প্রতি রফতানি খাতের অগ্রগতিকে সামনে আনা হয়। এতে বলা হয়, গত দুই দশকে রফতানি বাণিজ্য বিশেষত তৈরি পোশাক রফতানি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে দারুণভাবে এগিয়ে নিয়েছে। এই খাতে নিরাপত্তার ত্রুটি ও শ্রম অধিকার নিয়ে অনেক কথা থাকলেও গার্মেন্টস এখন দেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় চালিকাশক্তি। পোশাক রফতানিতে চীনের পরই এখন বাংলাদেশের অবস্থান। ঠিক জাতিসংঘের এই বিনিয়োগ সম্মেলনের আগে বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ সম্পর্কে পিও রিসার্চের এই গবেষণা প্রকাশ বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশকে অনেকটাই এগিয়ে রাখবে। এ বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করছে জাতিসংঘ শিল্প উন্নয়ন সংস্থা (ইউনিডো)। ‘টেকসই শিল্পায়নের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে অংশীদারিত্ব’ শীর্ষক দ্বিতীয় এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হচ্ছে। ৪ ও ৫ নবেম্বর দুই দিনব্যাপী আয়োজিত এ সম্মেলনে অংশ নিতে বাংলাদেশের শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সোমবার সকালে ভিয়েনার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। এতে বাংলাদেশ ছাড়াও জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলো অংশ নেবে। ৪ নবেম্বর সকালে ভিয়েনা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সম্মেলনের উদ্বোধন হবে। এতে ইউনিডোর মহাপরিচালক লি ইয়ং, অস্ট্রিয়ার প্রেসিডেন্ট হ্যাঞ্জ ফিসার, ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী হেইলি মারিয়াম ডিসেলেন, সেনেগালের প্রধানমন্ত্রী মোহামেদ ডিওনি, জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিশনের চেয়ারপার্সন নোসাজানা দøামিনি-জুমাসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার পদস্থ কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখবেন। ৫ নবেম্বর শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সম্মেলনের প্ল্যানারি সেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য তুলে ধরবেন। এ ছাড়া এদিন তিনি ইউনিডোর মহাপরিচালক লি ইয়ংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গেও তার বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখ্য, শিল্পোন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে একটি বিশেষায়িত সংস্থা হিসেবে জাতিসংঘ শিল্পোন্নয়ন সংস্থা (ইউনিডো) কাজ করছে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে পেরুর রাজধানী লিমায় ইউনিডোর সাধারণ সভায় সদস্য দেশগুলোর সমর্থনে সবার অংশগ্রহণে টেকসই শিল্পোন্নয়ন শীর্ষক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এ কর্মসূচির আওতায় চলতি বছর ২৩ ও ২৪ জুন ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত প্রথম সম্মেলনে এ সংক্রান্ত নীতি-কৌশল প্রণয়ন করা হয়। এ নীতি-কৌশলের বাস্তবায়নে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সহায়তার ক্ষেত্র নির্ধারণের জন্য দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এতে শিল্পমন্ত্রী বাংলাদেশের অর্থনীতিতে, বিশেষ করে শিল্প খাতের উন্নয়নে বর্তমান সরকার গৃহিত উদ্যোগের ফলে যে উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে, তা তুলে ধরবেন। আন্তর্জাতিক এ সম্মেলন থেকে শিল্প খাতে টেকসই উন্নয়ন ও বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইউনিডোর সদস্য দেশগুলোর সাম্প্রতিক গৃহিত উদ্যোগ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে টেকসই শিল্পায়নের জন্য সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ কিংবা যৌথ অংশীদারিত্বে বিনিয়োগের কার্যকর নীতি ও কর্মসূচী প্রণয়ন সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
×